সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গিরা প্রশিক্ষিত, পুরো বাসায় বিস্ফোরক

সেনাবাহিনীর প্রেস ব্রিফিং

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

জঙ্গিরা প্রশিক্ষিত, বিস্ফোরক দিয়ে দুর্গম করে তুলেছে পুরো বাসা। অভিযানের সময় রকেট লাঞ্চার দিয়ে আতিয়া মহলে বড় গর্ত করা হয়। কিছু বিস্ফোরকও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাতেও প্রশিক্ষিত জঙ্গিদের কাবু করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় ভিতরে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। টিয়ার শেলের প্রতিক্রিয়ায় জঙ্গিরা ভিতরে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। ওপর থেকে নিচতলায় আসার সময় দুই জঙ্গিকে গুলি করেন কমান্ডোরা। দুজনই লুটিয়ে পড়ে। এদের একজন নিজের শরীরে বাঁধা সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে দুজনেরই মৃত্যু ঘটে। সিলেটের আতিয়া মহলে কমান্ডো অভিযানের বর্ণনা করছিলেন সেনা সদর দফতরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। গতকাল বিকালে কমান্ডোদের দুদিনের অভিযানের বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, অভিযানের সময় রকেট লাঞ্চার দিয়ে আতিয়া মহলে বড় গর্ত করা হয়। কিছু বিস্ফোরকও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাতেও প্রশিক্ষিত জঙ্গিদের কাবু করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় ভিতরে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। টিয়ার শেলের প্রতিক্রিয়ায় জঙ্গিরা ভিতরে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। ওপর থেকে নিচতলায় আসার সময় দুই জঙ্গিকে গুলি করেন কমান্ডোরা। এ সময় এক জঙ্গি তার গায়ে জড়ানো সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারা যায়। অপর জঙ্গি কমান্ডোদের গুলিতেই মারা গেছে। ‘নিহত দুই জঙ্গিই পুরুষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভিতরে এখনো এক বা একাধিক জঙ্গি রয়েছে। তবে ঠিক কতজন জঙ্গি রয়েছে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ফখরুল আহসান বলেন, আতিয়া মহলের ভিতরে থাকা জঙ্গিরা প্রশিক্ষিত। কীভাবে গ্রেনেড প্রতিহত ও টিয়ার শেলের প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচা যায়, এগুলো তারা জানে। অভিযান চলাকালে ভবনের ভিতর একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু এই গ্রেনেড জঙ্গিরা কমান্ডোদের দিকে পাল্টা ছুড়ে মারে।

‘আতিয়া মহলের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরক লাগিয়ে রেখেছে জঙ্গিরা’ উল্লেখ করে ফখরুল আহসান বলেন, ‘এতে বোঝা যায়, জঙ্গিরা জানে নিজেদের আবাসস্থলকে কীভাবে দুর্গম করে রাখতে হয়। বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরক লাগিয়ে রাখায় অভিযান ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য সময় লাগছে বেশি। তবে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ভবনে আটকেপড়া বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা। কমান্ডোরা এতে সফল হয়েছেন।’

ফখরুল আহসান বলেন, ভবনের নিচতলার সিঁড়ির দিকে বেশি পরিমাণে রূপান্তরিত বিস্ফোরক (আইইডি) লাগিয়ে রাখে জঙ্গিরা। তারা হয়তো ধারণা করেছিল, নিচতলা থেকেই শুরু হবে অভিযান। কমান্ডোরা ভবনে ঢুকে বিষয়টি লক্ষ্য করে উল্টো দিক থেকে অভিযান শুরু করেন। পঞ্চম তলা থেকে শুরু হয় অভিযান। ওপর থেকে একেকটা ফ্লোরে অভিযান চালানো হয়। এভাবে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আটকেপড়াদের উদ্ধার করা হয়। নিচতলায় অভিযানের সময় সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়নি। নিচতলার জানালার গ্রিল কেটে আটকেপড়া বাসিন্দাদের উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় বৃষ্টি থাকায় তা অভিযানকারী দলের জন্য সহায়ক হয় উল্লেখ করে ফখরুল আহসান বলেন, এ জন্য ভিতর থেকে অভিযানের অনেক কিছুই বুঝতে পারেনি জঙ্গিরা। তিনি বলেন, জঙ্গিদের কাছে স্মল আর্মস, রূপান্তরিত বিস্ফোরক (আইইডি), বিস্ফোরক রয়েছে। সেগুলো দিয়ে তারা অভিযানকারী দলের সদস্যদের ওপর পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেছে। শনিবার রাতে আতিয়া মহলের বাইরে বোমা বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে ভিতরে থাকা জঙ্গিদের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ফখরুল আহসান বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট অপারেশনের জন্য এসেছি। বাইরের বিষয়টি পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থা বলতে পারবে।’ অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, অভিযান শেষ করেই কমান্ডোরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করবেন। তবে অভিযান শেষ করতে কত দিন বা কত সময় লাগবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর