সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলো র‌্যাবের আহত গোয়েন্দা প্রধানকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলো র‌্যাবের আহত গোয়েন্দা প্রধানকে

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেওয়া হলো এলিট ফোর্স র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে। সেনাবাহিনীর এই প্যারা কমান্ডো শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহল’র অভিযানস্থলে বোমা হামলার শিকার হন। গুরুতর আহত এই র‌্যাব কর্মকর্তাকে হেলিকপ্টারে করে রাতেই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে আসা হয়। সিঙ্গাপুরে নেওয়ার আগ পর্যন্ত লে. কর্নেল আজাদ সিএমএইচের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠানো হয়। র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধানের আহত হওয়ার খবর শুনে গতকাল সকালে তাকে সিএমএইচে দেখতে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মো. শফিউল হক, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজাদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর কথা বলেন। একই সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়াসহ আবুল কালাম আজাদের চিকিৎসায় সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। লে. কর্নেল আজাদের চিকিৎসার দায়িত্বে নিয়োজিত উচ্চপর্যায়ের মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য জানান, আবুল কালাম আজাদের অবস্থা সংকটাপন্ন। তার মাথা, চোখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে বোমার স্প্লিন্টারের আঘাত লেগেছে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ এখনো বন্ধ হয়নি। জানা গেছে, গতকাল বিকাল ৫টার দিকে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। প্রয়োজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, লে. কর্নেল আজাদ শনিবার সিলেট মহানগরীর দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ীতে সেনা নেতৃত্বে জঙ্গি নির্মূল অভিযানে অংশ নেন। সন্ধ্যায়ই তার ঢাকা ফেরার কথা ছিল। বিকালে অভিযানস্থলের অদূরে পড়ে থাকা একটি বস্তায় বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পরখ করে দেখছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা পরিদর্শক চৌধুরী মো. আবু কয়সরসহ অন্যরা। এ সময় বিচ্ছিন্নভাবে পুলিশের সদস্যদের সরঞ্জামাদি দেখতে নিষেধ করছিলেন র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান আজাদ। কথা বলা শেষ হওয়া মাত্রই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় বোমাটি। ঘটনাস্থলেই নিহত হন পুলিশের ওই পরিদর্শক। গুরুতর আহত হন লে. কর্নেল আজাদ, মেজর আজাদসহ অন্তত ১০ জন। তাত্ক্ষণিক গুরুতর অবস্থায় লে. কর্নেল আজাদকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে আসার পর গঠন করা হয় উচ্চপর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড। প্রসঙ্গত, লে. কর্নেল আজাদ বিএমএ ৩৪ লং কোর্সের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি একজন চৌকস সেনা প্যারা কমান্ডো। ২০১২ সালে মেজর থাকাবস্থায় র‌্যাবে যোগ দেন। তৎকালীন র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান (বর্তমানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) এর তত্ত্বাবধানে কাজ করেন গোয়েন্দা শাখায়। একের পর এক সফল অপারেশন করে অপরাধীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেন এই সেনা কমান্ডো। র‌্যাবে কর্মরত অবস্থাতেই তিনি লে. কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। গত বছর রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কমান্ডো লে. কর্নেল আজাদ। সম্প্রতি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবিতে তার পোস্টিং হয়। ২৬ মার্চ র‌্যাবের মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে লে. কর্নেল আজাদের র‌্যাব থেকে বিদায় নেওয়ার কথা ছিল।

সর্বশেষ খবর