আসন্ন ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ আতিথেয়তা পাবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, সাধারণত ভারতে কোনো রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান সফরে গেলে তিনি কোনো হোটেল বা অতিথি ভবনে থাকেন। কিন্তু এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে। ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো অতিথি সরকারপ্রধান এই সম্মাননা পাচ্ছেন। গতকাল ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া কমপ্লেক্স পরিদর্শনে এসে হাইকমিশনার এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে সদ্য ঘোষিত গণহত্যা দিবসকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করে হাইকমিশনার বলেন, সে সময় পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করেছে। এই সত্য অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। বিশ্বকেও এর স্বীকৃতি দিতেই হবে।
ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার কনফারেন্স কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, সাত বছর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে দ্বিপক্ষীয় সফরে যাচ্ছেন। যদিও এর মধ্যে বিভিন্ন বহুপক্ষীয় সম্মেলনের সাইডলাইনে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় সফরে যাচ্ছেন এবার। ভারত আগ্রহভরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের জন্য অপেক্ষা করছেন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সফরের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুজ্জীবিত হবে। কারণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সময় ভারতের মানবিক ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই দুই দেশ একে অন্যকে সম্মান করে। বাংলাদেশের জন্য ভালো যে কোনো বিষয়ই ভারতের জন্যও ভালো। ভারতের জনগণ বিশ্বাস করে, ভারতের উন্নয়ন ও প্রগতি প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের উন্নয়ন ছাড়া ভারতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। হাইকমিশনার বলেন, স্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সব সময়ই দুই মুখী হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের ক্ষেত্রেও তাই। এ ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মান কি বাত’ নামের রেডিও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করে হাইকমিশনার বলেন, সাধারণত দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন বিষয় নিয়েই প্রধানমন্ত্রী মোদি এই রেডিও অনুষ্ঠানে নিয়মিত কথা বলে থাকেন। কিন্তু এবার তিনি কথা বলেছেন প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও। সেখানে ভারত যে বাংলাদেশের ভালো বন্ধু সে বিষয়ে আস্থা রাখার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।আসন্ন সফরে নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তিতে কী থাকছে এবং তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, আমার পক্ষে এখনই এই ইস্যুতে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। কারণ এখনো সফরে স্বাক্ষরের জন্য আলোচ্য বেশকিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত আলোচনার প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে নিশ্চিতভাবেই তা প্রকাশ করা হবে। তবে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, আসন্ন সফরে বাণিজ্য, সীমান্তহাট, শুল্কায়ন, প্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা, সাইবার নিরাপত্তা, কানেকটিভিটি, শিপিং, পর্যটন, ক্রুজ শিপিং, ড্রেজিং, তথ্য বিষয়ে বেশকিছু সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে দুই দেশ। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার শ্রিংলা বলেন, আমি বাংলাদেশে হাইকমিশনার নিযুক্ত হওয়ায় যারপরনাই আনন্দিত হয়েছিলাম। কারণ বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে আমার বাড়ি। এ দেশে আমি বাড়ির পরিবেশই উপভোগ করি।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আমরা সব সময় আশা করি, ভারত বাংলাদেশের সুখ-দুঃখে পাশে থাকবে। এতে দুই দেশই বেশকিছু সুবিধা পায় এবং উপকৃত হয় উভয় দেশের কয়েক কোটি মানুষ। অবশ্য বাংলাদেশ-ভারতের বর্তমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যে উচ্চতায় পৌঁছেছে তাতে আমরা উভয় দেশের মানুষই খুশি। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের আন্তরিকতায় দুই দেশের সম্পর্ক আরও সামনে এগিয়ে যাবে বলে আমরা প্রবলভাবে আশাবাদী।
এর আগে গতকাল বিকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া কমপ্লেক্স পরিদর্শনে আসেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। কনফারেন্স কক্ষে পৌঁছলে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের সম্পাদক আলমগীর হোসেন, ডেইলি সানের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শিয়াবুর রহমান, কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল, নিউজ টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক হাসনাইন খুরশিদ, রেডিও ক্যাপিটালের নির্বাহী পরিচালক মেহেদী মালেক সজীবসহ ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপে কর্মরত সিনিয়র সাংবাদিকরা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নিউজটোয়েন্টিফোরের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সামিয়া রহমান। পরে হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর, ডেইলি সান, রেডিও ক্যাপিটাল ও নিউজটোয়েন্টিফোর অফিস পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিত হন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে কথাও বলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের অন্যান্য গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই মিডিয়াগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।