মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য

সুদমুক্ত ঋণ আমার পছন্দ না, দুঃখিত

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মুক্তিযোদ্ধাদের পাকা বাড়ি নির্মাণে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি সুদমুক্ত হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ-সংক্রান্ত এক আবেদনপত্রে তিনি মন্তব্য লিখেছেন, ‘সুদমুক্ত ঋণ আমার পছন্দ না। দুঃখিত!’ ৩ মার্চ অর্থমন্ত্রী মন্তব্যটি লেখেন জাতীয় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের প্যাডে, যেখানে সুদমুক্ত গৃহঋণের সুবিধা বাড়ানোর আবেদন করেছিল সংস্থাটি। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে বলেছিল, তাদের সুদমুক্ত গৃহঋণ যেন ৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা করা হয়; ১০ বছরের পরিবর্তে যেন ১৫ বছরের মেয়াদে পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর মাসিক কিস্তির পরিমাণ ৬ হাজার ৭৯২ টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়।

এ ধরনের আবেদনের কথা নিশ্চিত করে জাতীয় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জি কে বাবুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী যে ধরনের নোট দিয়েছেন তাতে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে প্রস্তাবিত ঋণ আমরা পাব কি না।’ বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তারা দেখা করবেন বলে তিনি জানান।

২০১৫ সালের মার্চে অর্থমন্ত্রী নিজেই জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এরপর গত বছর একজন মুক্তিযোদ্ধা অর্থমন্ত্রীর কাছে সুদমুক্ত গৃহঋণের আবেদন করলে তিনি বিষয়টিতে ইতিবাচক সাড়া দেন। মুক্তিযোদ্ধার ওই আবেদনের ওপর এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় কি না, তা জানতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মন্তব্য চান অর্থমন্ত্রী। পরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ মতামত চায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের ঋণ দেওয়া সম্ভব উল্লেখ করে দুটি বিকল্প প্রস্তাব পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাবে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধারা সরকার থেকে যে ভাতা পান, সেই ভাতার বিপরীতে অর্থাৎ ভাতা থেকে ঋণ সমন্বয়ের শর্তে এ প্রকল্প চালু করা যেতে পারে। সরকার বাজেট বরাদ্দ দিয়ে এ প্রকল্পের অর্থ সরবরাহ করতে পারে অথবা ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ দিতে পারে। কিন্তু ব্যাংক যেহেতু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সেহেতু বিনা সুদে ঋণ দেওয়া ব্যাংকের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। তাই সুদ বাবদ সরকার ভর্তুকি দিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ১০ বছর মেয়াদে এ ঋণ দেওয়া যেতে পারে। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক কিস্তি দিতে হবে ৬ হাজার ৭৯২ টাকা। সোনালী, অগ্রণী, জনতা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে ভাতার এ অর্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ঋণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এই ব্যাংকগুলোকেই সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তাবে বলা হয়, যে বাড়ি নির্মাণ করা হবে সেই বাড়ি ও বাড়ির জমি ঋণের জামানত হিসেবে বন্ধক রাখবে ব্যাংক। কোনো মুক্তিযোদ্ধা ঋণ পরিশোধের আগে মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীরা ঋণ পরিশোধে বাধ্য থাকবে। আর সরকার বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দ না দিয়ে যদি ব্যাংকগুলোকে অর্থায়নের জন্য বলে, সে ক্ষেত্রে ৯ বা ১০ শতাংশ সুদহার ধরা যেতে পারে বলে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রস্তাবে জানায়, তাতে ১০ বছরে ৯ শতাংশ সুদ হারে সরকারকে ৩৭২ কোটি ৬২ লাখ আর ১০ শতাংশ সুদ হারে ৪১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর