বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য আরও ঘনিষ্ঠ হবে

জুলকার নাইন

বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য আরও ঘনিষ্ঠ হবে

যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা সফররত ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি স্যার সাইমন ম্যাকডোনাল্ড গতকাল সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর কাছে চিঠিটি হস্তান্তর করেন। পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ও স্যার ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত কৌশলগত সংলাপে একই ঘোষণা এসেছে। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় দুই দেশের যৌথ অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের পর কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে এবং আগামী জুন থেকে ব্রিটিশ ভিসার প্রায়োরিটি সার্ভিস পাবেন বাংলাদেশিরা। সংলাপ শেষে যৌথ ইশতেহারে বলা হয়, দুই দেশেই সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে দুই দেশ। তবে এর মূল কারণ খুঁজে বের করতে বৈশ্বিক উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিশ্রুতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো প্রয়োজন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে যৌথ ইশতেহারে বলা হয়, হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্রিটেন বাংলাদেশকে আরও সহায়তা করবে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতার পাশাপাশি দুই পক্ষ একটি যৌথ সমীক্ষার মাধ্যমে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দুর্বলতাগুলো খুঁজে দেখবে এবং অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করবে। অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের পর বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে কার্গো পাঠানোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। সেই সঙ্গে ঢাকা থেকে সরাসরি লন্ডনে ফ্লাইটের সিদ্ধান্তও হবে। যৌথ ইশতেহারে বলা হয়, ব্রিটেন ও বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে উভয় পক্ষ আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। ব্রেক্সিটের পর বাংলাদেশের মতো বন্ধুদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাজ্য। অবশ্য সংলাপ শুরুর আগে এ বিষয়ে স্যার ম্যাকডোনাল্ড সাংবাদিকদের বলেন, ‘২৯ মার্চ আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ ত্যাগের বিষয়টি জানাব। এর পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে আমরা ইইউ ত্যাগ করব। এটা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। আমরা জানি তোমরা (বাংলাদেশ) শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজারসুবিধা চাও। আজ এ বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করব। আমি নিশ্চিত করতে চাই আগের চেয়ে আরও গভীর ও ভালো সম্পর্ক আমরা চাই।’ ভিসা ইস্যুতে যৌথ ইশতেহারে বলা হয়েছে, আগামী জুন থেকে বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য তিন থেকে পাঁচ দিনের প্রায়োরিটি ভিসা সার্ভিস চালু করবে ব্রিটেন। সংলাপে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরা নিশ্চিত করেন, ভিসার সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ কর্মকর্তারাই নিচ্ছেন এবং সেটেলমেন্ট ভিসার বিষয়গুলো নয়াদিল্লি থেকে সরাসরি লন্ডনে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লন্ডন থেকেই সিদ্ধান্ত আসছে। এ ছাড়া অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে বাস করা বাংলাদেশিদের ফেরত আনার বিষয়ে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। ইশতেহারে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫তম বার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত সংলাপে উভয় পক্ষ দুই দেশের স্বার্থ রক্ষা করে বর্তমান সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করতে একমত হয়েছে। দুই দেশ এমনিতেই একটি ঐতিহাসিক সম্পর্কে জড়িত। এ ছাড়া ব্রিটিশ সমাজ ও অর্থনীতি বিনির্মাণে ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির বৃহৎ ভূমিকাও স্বীকার করে যুক্তরাজ্য। তাদেরই তিনজন এখন প্রতিনিধিত্ব করছেন ব্রিটেনের পার্লামেন্টে। এদের একজনকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যিক দূত হিসেবেও ঘোষণা করেছেন। এদিকে সংলাপ শুরুর আগে দুই দেশের মধ্যে প্রতি বছর কৌশলগত সংলাপ আয়োজনে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। সংলাপে অংশ নিতে ব্রিটিশ স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি ও কূটনৈতিক সার্ভিসের প্রধান স্যার সাইমন ম্যাকডোনাল্ড দুই দিনের সফরে সোমবার ঢাকায় আসেন। গত রাতে ঢাকা ত্যাগ করার আগে তিনি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমি পরিদর্শন করেন।

সর্বশেষ খবর