বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জাতীয়ভাবে মোকাবিলা করুন জঙ্গিবাদ

--খালেদা জিয়া

নিজস্ব ও আদালত প্রতিবেদক

দেশে বিদ্যমান সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে জাতীয়ভাবে মোকাবিলার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বিশেষ কোনো সরকার বা দলের নয়, জঙ্গিবাদ একটি জাতীয় সমস্যা। তাই দোষারোপের রাজনীতি না করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের মতো সমস্যাকে জাতীয়ভাবে মোকাবিলার জন্য আমি ক্ষমতাসীনদের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে এ সমস্যা নিরসনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। গতকাল রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেন জঙ্গিবাদ এভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আমরা এ প্রশ্ন কখনো তুলিনি এবং এ নিয়ে দোষারোপের রাজনীতিতেও লিপ্ত হইনি। সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি ধর্মীয় জঙ্গিবাদের নামে পরিচালিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তারে দেশবাসীর মতো আমিও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। বিএনপিপ্রধান বলেন, সিলেটে একটি আবাসিক ভবনে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ গোপনে অবস্থানকৃত সন্ত্রাসীদের দমনের লক্ষ্যে সফল অভিযান পরিচালনার জন্য আমি আমাদের সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোবৃন্দসহ দেশরক্ষা বাহিনীর প্রতি অভিনন্দন জানাচ্ছি। অভিযানে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য এবং যেসব সাধারণ মানুষ হতাহত হয়েছেন, তাদের প্রতি জ্ঞাপন করছি শোক ও সহানুভূতি। বেগম জিয়া বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশও এ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এ সংকট মোকাবিলায় আমাদেরকে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে অগ্রসর হতে হবে। সেই আহ্বান আমি বরাবর জানিয়ে আসছি। দুঃখের বিষয় আমাদের আহ্বান এখন পর্যন্ত চরমভাবে উপেক্ষিত হয়ে আসছে। তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, কেবলমাত্র দমন অভিযান চালিয়ে সমাজ থেকে জঙ্গিবাদের শেকড় পুরোপুরি উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। দু-একটি দমন অভিযানের সাফল্যে আত্মপ্রসাদ লাভ করারও কোনো সুযোগ নেই। মুসলিমপ্রধান এই দেশটিতে গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহিতাহীন শাসন, দুর্নীতি, সুবিচারের অভাব এবং যুব সমাজের বেকারত্বই জঙ্গিবাদ বিস্তারের প্রধান কারণ। এ কারণগুলো দূর করতে হবে। জনগণকে আস্থায় নিয়ে তাদের কাছ থেকে সক্রিয় সহযোগিতা নিতে হবে। খালেদা জিয়া আরও বলেন, বর্তমানে স্পর্শকাতর একটি সময়ে জঙ্গিবাদের আকস্মিক বিস্তার এবং দমন অভিযানে স্বচ্ছতার অভাবে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এসব সন্দেহ দূর করতে হবে। আমি এ বিষয়গুলো অবিলম্বে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।  সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার দলের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর ও খুবই স্পষ্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশব্যাপী এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে। ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়ে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের সরকারও জঙ্গিবাদের এই সংকটের মুখোমুখি হয়। আমরা কঠোর হাতে তা দমন করি। জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেওয়া হয় এবং শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করে তাদের বিচার সম্পন্ন করা হয়। পরে তাদের শাস্তি কার্যকর হয়।

খালেদাকে ১০ এপ্রিল হাজিরের নির্দেশ : রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতার ১১ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ১০ এপ্রিল হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. কামরুল হোসেন মোল্লা এ আদেশ দেন। এর আগে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। এ ১১ মামলার মধ্যে নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলা রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় করা আটটি এবং যাত্রাবাড়ী থানার মামলা রয়েছে দুটি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মো. মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাটি দায়ের করেছিলেন। বর্তমানে সবগুলো মামলাই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। আর বাকি ১০ মামলা অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

রাষ্ট্রদ্রোহ : ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এ ঘটনায় গত বছরের ২৫ জানুয়ারি আদালতে খালেদার বিরুদ্ধে মামলা করেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মো. মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী।

দারুস সালামের ৮ মামলা : দশম সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তিতে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে বাধা পেয়ে দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় থেকে সারা দেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন খালেদা জিয়া। ৯০ দিনের এই কর্মসূচিতে বহু গাড়ি পোড়ানো হয়, অগ্নিসংযোগ হয় বিভিন্ন স্থাপনায়। এ ঘটনায় দারুস সালাম থানায় দায়ের করা আটটি মামলায় খালেদাকে হুকুমের আসামি করা হয়। গতবছর মে ও জুন মাসে খালেদাসহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের আসামি করে এসব মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ১০ আগস্ট ঢাকার ১ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আট মামলায় জামিন পান খালেদা জিয়া। সবগুলো মামলাই অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

যাত্রাবাড়ীর মামলা : বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধ-হরতালের মধ্যে ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনের একটি বাসে পেট্রলবোমা ছোড়া হলে অগ্নিদগ্ধ ও আহত হন ৩০ জন। এর মধ্যে নূর আলম নামে এক ঠিকাদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার এসআই কে এম নুরুজ্জামান দুটি মামলা করেন, যাতে অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি চেয়ারপারসনকে করা হয় হুকুমের আসামি। তদন্ত শেষে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই বশির উদ্দিন গত বছরের ৬ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে খালেদাসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

সর্বশেষ খবর