বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

মৌলবাদী রাজনীতি থাকলে জঙ্গিবাদের অস্তিত্বও থাকবে

রুহুল আমিন রাসেল

মৌলবাদী রাজনীতি  থাকলে জঙ্গিবাদের অস্তিত্বও থাকবে

মে. জে. (অব.) আব্দুর রশীদ

বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতি থাকলে জঙ্গিবাদের অস্তিত্বও থাকবে বলে মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ। তার মতে, মৌলবাদের রাজনীতিই হচ্ছে জঙ্গিবাদের মতাদর্শের মূল ক্ষেত্র। এটা যত দিন বেঁচে থাকবে, জঙ্গিবাদের মতাদর্শ তত দিন জীবিত থাকবে। তাই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র— এই তিন স্তরে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করতে হবে বলে মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—পরিবার ও সমাজ। ঘরে যাতে জঙ্গি জন্ম না নেয় সে জন্য পিতা-মাতাকে সতর্ক হতে হবে। সমাজে যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর দায়বদ্ধতা দেখাতে হবে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায়। আমরা অনেক প্রতিষ্ঠানকে দেখেছি, যারা জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা জঙ্গিবাদ শেখায়। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, তারা জঙ্গিবাদকে গুরুত্বের চোখে দেখে না। তাদেরও সতর্ক হতে হবে। আর রাষ্ট্রের অবস্থান তো আছেই। ভারতীয় উপমহাদেশে মুফতি হান্নানকে জঙ্গিবাদের আইকন আখ্যায়িত করে আব্দুর রশীদ বলেন, মুফতি হান্নান ফাঁসির অবস্থায় আছে। একে শুধু হুজি নেতা হিসেবে দেখলে হবে না। আমরা আগেও দেখেছি, যুদ্ধাপরাধী, বাংলাভাই, শায়েখ আবদুর রহমানদের ফাঁসি হওয়ার পর তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী অনুসারীদের মধ্যে একটা প্রচণ্ড ধাক্কা এসেছে। এখানেও সে রকম একটি ধাক্কা আসছে। এসব মিলিয়ে জঙ্গিরা একটা উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। তারা প্রস্তুতি নিতে এখন কতগুলো কৌশল পরিবর্তন করেছে। হামলার ক্ষেত্রে ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছে না। তাই জঙ্গিরা আস্তানা দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম, সিলেট ও মৌলভীবাজারের মতো এলাকায় আস্তানা ছড়িয়ে জঙ্গিরা হামলার লক্ষ্যবস্তুর এলাকায় অস্ত্র-বোমা ও গোলাবারুদ জমা করছে। আগে জেএমবি যখন চাপের মধ্যে পড়েছিল তখন এই কৌশল ব্যবহার করেছিল। ২০১৪ সালের বিস্ফোরণের সময়েও ওখান থেকে বোমা বাংলাদেশে পাচার করত। জঙ্গিদের কৌশল প্রসঙ্গে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, জঙ্গিদের কৌশল হলো আত্মঘাতী প্রবণতা, শেষ মুহূর্তেও লড়াই করে যাওয়া, কোনো আস্তানাতেই জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করছে না। তবে সার্বিক বিচারে জঙ্গিবাদের শক্তি ক্ষয় হচ্ছে। তারা নিশ্চিহ্ন না হলেও শক্তি অনেক কমে গেছে। যেটা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানুষকে আরও নিরাপদ করবে। অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো নতুনত্ব নেই। জঙ্গিরা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে অস্থির হয়ে পড়েছে। তারা নতুন জঙ্গি তৈরি করতে পারছে না। জঙ্গিরা এখন পরিবারকেন্দ্রিক ইউনিট গঠনের চেষ্টা করছে। ফলে আমরাও বেশির ভাগ দেখছি, জঙ্গিরা পরিবারকেন্দ্রিক লড়াই করার চেষ্টা করছে। তার মতে, আবার দুর্বল জঙ্গিরা দলছুট হওয়ার চেষ্টা করছে। যারা খুব বেশি জঙ্গিবাদে ঝুঁকেনি। এমন অবস্থায় জঙ্গিরা তাদের দল টিকিয়ে রাখতে শক্ত শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। আব্দুর রশীদ আরও বলেন, গুলশান হামলার পর এখন পর্যন্ত কোথাও জঙ্গিদের সফলতা দেখিনি। এখন একদিকে তারা ব্যর্থ হামলা করছে, আরেকদিকে জঙ্গিদের ঘাঁটিগুলো নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমি মনে করি, জঙ্গিদের শক্তি খর্বই হচ্ছে। তার মতে, আন্তর্জাতিকভাবে দেখলেও ইসলামিক স্টেট বা আইএস ইরাক ও সিরিয়াতে খুবই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। জঙ্গিদের বড় বিশ্বাস খেলাফত, এটাও এখন উত্খাতের পথে। সেখানে তারাও তাদের আইকনকে ধরে রাখতে এবং রক্ষায় কিছুটা উত্তেজিত হবে, এটাই স্বাভাবিক।

সর্বশেষ খবর