শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
অবস্থা অপরিবর্তিত আজাদের

দুই জঙ্গির লাশ পচে দুর্গন্ধ শিববাড়ীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও সিলেট

আতিয়া মহলে সেনা কমান্ডোদের অভিযান শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। তবে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী পাঠানপাড়ায় পাঁচ তলা ভবনের ভিতর রয়ে গেছে দুই জঙ্গির লাশ। সেই লাশ পচে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

আতিয়া মহলের ভিতরের বিস্ফোরক গতকালও অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে নব্য জেএমবি নেতা মাঈনুল ইসলাম মুসা রয়েছেন কিনা, তা জানতে তার মায়ের ডিএনএ’র নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া শিববাড়ী এলাকার ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বোমা হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় কোনো আটক নেই। মামলা হয়নি আতিয়া মহলের ঘটনায়। মঙ্গলবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা থেকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এসে আতিয়া মহলকে বিস্ফোরকমুক্ত করবে। তবে জানা গেছে, এরপর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও বিস্ফোরকমুক্ত হয়নি আতিয়া মহল। ভিতরে পড়ে আছে দুই জঙ্গির লাশও। গতকাল সরেজমিনে শিববাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আতিয়া মহলে থাকা দুই জঙ্গির লাশ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। প্রায় পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ। দ্রুত লাশ দুটি উদ্ধার না করলে দুর্গন্ধে এলাকায় টিকে থাকা দায় হবে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের একটি দল গতকাল আতিয়া মহল পর্যবেক্ষণ করে গেছে। তারা শিগগিরই ভবনটি বিস্ফোরকমুক্ত করার কাজ শুরু করবে। বিস্ফোরক সরিয়ে না নিলে লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।’

ডিএনএ টেস্ট : সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী পাঠানপাড়ায় আতিয়া মহলে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত চার জঙ্গির একজন নব্য জেএমবির নেতা মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা কিনা, তা জানতে তার মায়ের ডিএনএ’র নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে মুসার মা সুফিয়া বেগমের ডিএনএ’র নমুনা ওসমানী হাসপাতালে সংগ্রহ করা হয়। এর আগে দুপুরে মেয়ে কামরুন নাহারকে নিয়ে সিলেট পৌঁছেন সুফিয়া বেগম। বুধবার রাজশাহী থেকে তাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সিলেট মহানগরীর কোতোয়ালি থানার ওসি সোহেল আহমদ বলেন, ‘আতিয়া মহলে নিহত চার জঙ্গির একজন নব্য জেএমবির নেতা মুসা বলে আমরা ধারণা করছি। তার লাশ দেখে পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন। এজন্য মুসার মা সুফিয়া বেগমের ডিএনএ’র নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।’

যান চলাচল শুরু : আতিয়া মহলের অভিযান চলাকালে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় অভিযানস্থলের পাশেই বোমা হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার পর শিববাড়ী এলাকায় যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রশাসন। গতকাল সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্থানীয়রা তাদের দোকানপাটও খুলতে শুরু করেছেন।

আটক নেই, হয়নি মামলা : বোমা হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় গত রাত ৮টা পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া আতিয়া মহলের ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা বলেন, ‘বোমা হামলার ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। তবে তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। তদন্তের স্বার্থেই তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। আতিয়া মহলের ঘটনায় মামলা করা হয়নি।’

উদ্বেগ : আতিয়া মহলের পাশেই বোমা হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে বাইরের ‘জঙ্গিরা’ জড়িত বলে স্থানীয়দের অভিমত। কিন্তু বাইরের কোনো জঙ্গি ধরা না পড়ায় সিলেটে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। ধরা না পড়লে সিলেটে আবারও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ।

বোমাসদৃশ বস্তু ঘিরে আতঙ্ক : সিলেট নগরীর শাহি ঈদগাহে একটি দোকানের সামনে বোমাসদৃশ বস্তু ঘিরে গতকাল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানের মালিক মহানগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনাম আহমদ সকালে দোকান খুলতে এসে কালো স্কচটেপে মোড়ানো বস্তুটি দেখতে পেয়ে পুলিশে জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে বস্তুটি বোমা নয় বলে নিশ্চিত করে। মহানগর পুলিশের উপকমিশনার ফয়সাল মাহমুদ জানান, সেটি ফলস ককটেল ছিল, যা ফাটলে বিকট শব্দ হয়। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সেটি নিষ্ক্রিয় করেছে।

লে. কর্নেল আজাদের অবস্থা অপরিবর্তিত : সিলেটে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে বোমা বিস্ফোরণে আহত এলিট ফোর্স র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সেনাবাহিনীর দুঃসাহসী এই প্যারা-কমান্ডোর চিকিৎসা চলছে। গতকাল র‌্যাব সদর দফতরের কয়েকজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, সিঙ্গাপুরে লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল, এখানেও সে ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে সিএমএইচের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) লে. কর্নেল আজাদের চিকিৎসা চলছে। গতকাল তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড শারীরিক বিষয়ে পর্যালোচনা করেছে। তবে তারা কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। ২৫ মার্চ সিলেটের শিববাড়ীর আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলাকালে বোমা বিস্ফোরণে লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ গুরুতর আহত হন। বিস্ফোরিত বোমার একটি স্প্লিন্টার লে. কর্নেল আজাদের এক চোখ দিয়ে ঢুকে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। ওই দিন রাতেই হেলিকপ্টারে করে তাকে সিলেট থেকে ঢাকায় সিএমএইচে আনা হয়।

পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৬ মার্চ রাত ৮টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সিঙ্গাপুরের প্যারাগন মেডিকেল সেন্টারের নিউরো বিশেষজ্ঞ ডা. ম্যাথিউর নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে এই বীর সেনানীর পরিবারের সদস্যরা তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন। ২৯ মার্চ রাত ৮টায় তাকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর লে. কর্নেল আজাদকে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। এদিকে লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকায় তার পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমেই বাড়ছে। তারা লে. কর্নেল আজাদের জন্য শুভাকাঙ্ক্ষীসহ দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। গত বছর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় প্যারা-কমান্ডোদের অপারেশন থান্ডারবোল্টেও এই কমান্ডোর বিশেষ ভূমিকা ছিল। এর আগে জঙ্গিবাদ ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকার জন্য বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ পদক) এবং পিপিএম (প্রেসিডেন্ট পদক) পুরস্কারে ভূষিত হন লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ।

সর্বশেষ খবর