শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

পদ্মার বুকে সবুজ বিপ্লব

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

পদ্মার বুকে সবুজ বিপ্লব

ঢালু পথ ধরে নামতেই চর। এই এলাকাটির নাম সড়কঘাট। মধ্য চরটির নাম চকরাজাপুর। মাঝে মাঝে কয়েকটি করে বাড়ি। তবে বিস্তীর্ণ পদ্মার বুকে যে চর জেগে উঠছে, তার যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সবুজ ফসলের মাঝে মাঝে গড়ে উঠছে বাগান। এ যেন পদ্মার বুকে সবুজ বিপ্লব।

রাজশাহী বাঘা উপজেলার বিস্তীর্ণ পদ্মা নদীর বুকে এখন সবুজের সমারোহ। এক সময় পদ্মা প্রমত্তা থাকলেও এখন তা শুকিয়ে ও পলি পড়ে আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। অক্টোবরের পর পদ্মার পানি কমতে থাকায় সেখানে ফসলের চাষ হয়েছে। নদীর চরে জেগেওঠা জমিতে চাষ করা ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষক। ফলেছে সোনার ফসল। কৃষক স্বপ্ন দেখছেন, ভালো ফসল ঘরে তুলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার। চরাঞ্চলের মানুষরা জানান, এক সময় শুধু চরের জমিতে ধান ও গম চাষ করা হতো। কিন্তু এখন সেই জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে আমবাগান, পেয়ারা বাগান, বরই বাগান, কলাবাগান। আগের মতো বন্যার পানিতে জমি প্লাবিত হয় না। ফলে মানুষ ধীরে ধীরে সেখানে বাগান গড়তে শুরু করে। গত চার বছর ধরে সেই হার বেড়েছে কয়েকগুণ। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পদ্মায় যেসব জমি জেগে উঠেছে এগুলো বাঘা, চারঘাট ও পবা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। এসব জমি মূলত চারঘাটের ইউসুফপুর, পরানপুর, বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, দাদপুর, কালিদাসখালী, কলিগ্রাম, পবা উপজেলার খিদিরপুর, শ্যামপুর, দাশমারি, ফুলতলা, তালাইমারী, শাহাপুর, শ্রীরামপুর ও বুলনপুর এলাকায়। এসব চরে চাষ হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজি, গম, ছোলা, মসুর, সরিষা ও বাদাম। এ ছাড়া শতাধিক আম, পেয়ারা, পেঁপে, কলাবাগান। পলাশি পতেপুরের চাষি জুলফিকার আলী জানান, তিনি ৫০ বিঘা জমিতে ফসল চাষ করেছেন। এসব জমিতে ছিল গম, ছোলা, মসুর ও বাদাম। জমিতে লাঙলের পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করতে হয়। মাটি নরম থাকার কারণে চাষের খরচ কম। এ ছাড়া সেচের জন্য ব্যবহার করা হয় শ্যালো মেশিন। একটি মেশিনে ৩০ থেকে ৩৫ বিঘা জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া যায়। তিনি জানান, শ্যালোমেশিনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডিজেল। কিন্তু ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় সেচ খরচ বেশি পড়ে। তবে চাষের খরচ এবং শ্রমিক কম লাগার কারণে চরের জমিতে উৎপাদন ব্যয় অনেক কম। এর ফলে চাষিরা ফসল চাষ করে লাভবান হন। শ্রীরামপুর এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৩৫ বিঘা জমি চাষ করেছেন। ফসল ঘরে তুলে লাভবান হয়েছেন। চকরাজাপুর এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা, সরিষা ও মসুর। এগুলো জমি থেকে তুলে সেখানে সবজির চাষ করেছেন। চরের জমিতে বন্যার সময় পলি পড়ায় উর্বরতা বেড়েছে। এ কারণে কম খরচে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়। কম খরচে বেশি ফসল উৎপাদন করে এ এলাকার অধিকাংশ কৃষক এখন সচ্ছল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যদি এদিকে নজর দেয় তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে সবুজ বিপ্লব ঘটবে পুরো চরে। চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আলম জানান, চরাঞ্চল এখন আর চর মনে হবে না। চারদিকে ফসলের চাষ হচ্ছে। গড়ে উঠেছে বিপুল পরিমাণ বাগান। ফলে চরে সবুজের বিপ্লব ঘটেছে। গত ৪-৫ বছর ধরে চরে ফসলের চাষ বেড়েছে। এখন বাগান গড়ে তোলার দিকে ঝুঁকছে মানুষ। নদীতে ফসল চাষ সম্পর্কে পবা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মনজুরে মওলা বলেন, চরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ভালো ফসল ফলানোর জন্য তারা কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হযরত আলী বলেন, চরের জমি খুবই উর্বর। ফসল উৎপাদনও ভালো হয়। এ কারণে কৃষকের মাঝে পদ্মার চরে ফসল ফলানোর আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। গত কয়েক বছরে চরে সবুজের নীরব বিপ্লব হয়েছে। এতে করে রাজশাহীতে উৎপাদনও বেড়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর