রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

আগামী বছরের শুরুতে ছয় সিটি নির্বাচন

গোলাম রাব্বানী

আগামী বছরের শুরুতে ছয় সিটি নির্বাচন

আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রংপুর, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে এই ছয় সিটি নির্বাচন করার চিন্তাভাবনা করছে নতুন নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে ইসি সচিবালয় তিনটি প্রস্তাবনা দিতে চাইছে নির্বাচন কমিশনকে। ১. এককভাবে রংপুর সিটিতে ভোটগ্রহণ শেষ করে অন্য সিটিতে ভোট করা। ২. বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট এবং গাজীপুর সিটি একই দিনে ভোটগ্রহণ করা। ৩. ছয় সিটিতে একই দিনে ভোটগ্রহণ করার। ২০১৮ সালের শেষ বা ২০১৯ সালের শুরুতে একাদশ সংসদ নির্বাচন থাকায় ইসি সচিবালয় এমন প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইসি সচিবালয় এসব সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ করতে চায়। ইতিমধ্যে ইসি সচিবালয় এসব নির্বাচনের জন্য একটি প্রাথমিক কার্যপরিধির খড়সা তৈরি করেছে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এককভাবে রংপুর সিটিতে ভোট করতে হলে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে তফসিল দিতে হবে। আর অন্য সিটির সঙ্গে রংপুরের ভোট করতে হলে এই সিটি মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, অন্য সিটিগুলো মেয়াদ শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে এই ছয় সিটি নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও সবার আস্থা অর্জনে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে নতুন ইসিকে। তাই এই ছয় সিটি নির্বাচন নিয়েও নতুন ইসিতে দীর্ঘ মেয়াদি কাজ করতে হবে। যাতে করে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই এসব নির্বাচন বিতর্কিত না হয়। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার পরে এই ছয় সিটিতে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেও কুমিল্লায় পরাজিত হয়েছে ক্ষমতাসীন এই দল। সেই হিসাবে আগামী ছয় সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ-বিএনপির জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাই প্রধান দুই দলের স্থানীয় নেতারা নিজ নিজ সিটিতে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ছয় সিটি নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, আমরা এসব সিটি বিভিন্ন পরিসংখ্যান সংগ্রহ করতে ইসি সসিবালয়কে বলেছি। তারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। ইসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য উপস্থাপন করলে কবে নির্বাচন হচ্ছে তা বলা যাবে। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী রোডম্যাপে এই ছয় সিটিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, রংপুর সিটি নির্বাচন করতে হবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে। আর পাঁচ সিটি খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট ও গাজীপুর করতে হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে। তবে এর আগে চার সিটি (খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট) মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহণ নিয়ে নানা জটিলতা হওয়ায় নির্বাচনের সময়সীমা কিছুটা পরিবর্তনও হতে পারে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপযোগী হয় মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস পূর্বে। আর মেয়াদ হচ্ছে সিটির প্রথম সভা হতে পরবর্তী পাঁচ বছর। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিধিমালা অনুযায়ী, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১৮ সালের শেষ বা ২০১৯ সালের শুরুতে যেহেতু একাদশ সংসদ নির্বাচন রয়েছে। তাই বছরের শুরুতে এসব সিটি নির্বাচন শেষ করতে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিতে চাই ইসি সচিবালয়কে। যাতে সিটি নির্বাচন শেষ করেই পুরোপুরিভাবে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া যায়। এ জন্য বর্তমান ইসির আগামী ২২ মাসের নির্বাচনী রোডম্যাপে এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ইসির সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনী রোডম্যাপে পর্যায়ক্রমে প্রথমে রংপুর সিটির নির্বাচন, এরপর চার সিটি তথা বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট এবং শেষে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রাখা হচ্ছে। তবে ইসির কর্মকর্তারা বলছেন—এই ছয় সিটির মেয়াদ কাছাকাছি সময়ে শেষ হবে। তাই অনেক কর্মকর্তা ছয় সিটি নির্বাচন একসঙ্গে করার পরামর্শ দিচ্ছেন। ইসির কর্মকর্তারা জানান, নতুন কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার পরই তফসিল দেয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের, তা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এরপরের নির্বাচনের মধ্যে রয়েছে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বরে। এরপর একসঙ্গে নির্বাচন রয়েছে বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। ২০১৩ সালের ১৫ জুন একদিনে এ চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছিল ওই বছরের ৬ জুলাই। আইন অনুযায়ী, আগামী বছরের প্রথম দিকে এসব সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে হবে। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরি করাই হবে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও দলটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়েছিল। এবারও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এসব নির্বাচন আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরি করবে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন ইসিকে পা ফেলতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে নতুন কমিশনের প্রধান কাজ। এ ছাড়াও নির্বাচন নিয়ে জনমনে যে সন্দেহ-অবিশ্বাসের আবহ তৈরি হয়েছে তা দূর করতে হবে। বিগত ইসির নানা বিতর্কিত কাজ থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে হবে বর্তমান কমিশনকে।

সর্বশেষ খবর