রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

নারীসহ আরও তিন লাশ

মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের দুই জঙ্গি আস্তানার মধ্যে নাসিরপুরের সফল অভিযানের পর বড়হাটের আস্তানায় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে ঢাকা থেকে আসা সোয়াত টিম। অপারেশনের কোনো এক সময়ে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নারীসহ ৩ জঙ্গি নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করছে সোয়াত টিম। দু’দিনব্যাপী অভিযান শেষে গতকাল সকালেই আস্তানাটি নিয়ন্ত্রণে নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে তারা আস্তানার ভিতরে ঢুকে এক নারী ও দুই পুরুষের ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখতে পায়। লাশগুলো বিকৃত হওয়ায় তাদের সঠিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। বিকাল সাড়ে ৩টায় লাশগুলো মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। নিহত জঙ্গিদের মধ্যে এক পুরুষ সিলেটের আতিয়া মহলের পাশে চেকপোস্টে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল বলে নিশ্চিত কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম। ওই বিস্ফোরণে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে: কর্নেল আবুল কালাম আজাদসহ সাতজন নিহত হন। এদিকে ওই বাড়ির মালিকও সন্দেহের মধ্যে রয়েছেন। বাড়িটি ছিল দুর্ভেদ্য বুলেটপ্রুফ কাচে ঘেরা।  বড়হাটের অপারেশন ম্যাক্সিমাস সমাপ্ত করার পর গতকাল দুপুর ১২টায় ঘটনাস্থলের কাছেই হোসেন কমিউনিটি সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা ভবনে প্রবেশ করে দুজন পুরুষ এবং একজন মহিলার ক্ষতবিক্ষত লাশ পেয়েছি। নিহত তিনজনের নাম-পরিচয় পাওয়া না গেলেও তাদের মধ্যে পুরুষ একজন সিলেটে বোমা হামলার ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল। আমরা মোটামুটি নিশ্চিত, নিহতদের একজন সিলেটের আতিয়া মহলের পাশে পুলিশের চেকপোস্টে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। সে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মৌলভীবাজারে চলে আসে। এই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা আমরা টেকনোলজির মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখেছি। এখান থেকে গিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়ে আবার বড়হাটে চলে আসে সে। যে কারণে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এখানে হাই লেভেলের না হলেও আপার মিড লেভেলের জঙ্গি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ওই হামলায় র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে: কর্নেল আবুল কালাম আজাদসহ ৭জনের মৃত্যু হয়। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, তাদের জীবিত আটক করে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো, কিন্তু তা আমরা পারিনি। আমরা আগেই জানতে পেরেছিলাম বড়হাটে ৩জন জঙ্গি অবস্থান করছে। জঙ্গি আস্তানার বাড়িতে অনেক কক্ষ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কক্ষগুলোতে বিস্ফোরক সেট করে রেখেছিল। গত পরশু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই ভবনের ছাদে উঠে দুটি গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছিল এ নারী জঙ্গি। এর একটি বিস্ফোরিত হয়, অপরটি ধান ক্ষেতে অবিস্ফোরিত অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা জঙ্গি দমনে লে. কর্নেল আজাদসহ ৯ জনকে হারিয়েছি। ফলে সেই স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা এগুচ্ছি। সিলেটের ঘটনার অভিজ্ঞতা নিয়ে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সতর্কতার সঙ্গে অভিযান চালানোর কারণে সময় লেগেছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। অভিযানকালে এই এলাকার মানুষের অনেক কষ্ট হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এলাকার মানুষের নিরাপত্তার খাতিরে তাদের কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সময় নিয়ে হলেও অপারেশনটি কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া করব। যেহেতু বড় ঘটনা তারা ঘটিয়েছে, সে কারণে তাদের জীবিত ধরার উদ্দেশ্য ছিল। এ জন্য তাদের বার বার আমরা আহ্বান করেছি আত্মসমর্পণ করতে। যখনই আমরা কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, তখনই তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এ কারণে গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় আমরা অপারেশন স্থগিত করি। এরপরও তারা বিস্ফোরণ ঘটায়। গতকাল সকালে যখন সোয়াত সদস্যরা এসেছে, তখনো তারা তিনটি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আমাদের ধারণা ছিল আগুন ধরেছে। যখন আমরা বুঝলাম তারা আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে, তখন আমরা ঘরে ঢুকে তিনটি মরদেহ দেখেছি।

সোয়াত ছাড়াও সিআরটি, বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট, মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল ইউনিট, মিডিয়া ও এলাকার লোকজনের সহায়তায় অপারেশন ম্যাক্সিমাস সফল করা সম্ভব হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে মঙ্গলবার রাতে নসিরপুর ও বড়হাটের দুই জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। পরে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় সোয়াত, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, সিটিসিসহ অন্যরা।

দুই আস্তানায় নিহত ১০ : মৌলভীবাজারের নাসিরপুর ও বড়হাটের দুই জঙ্গি আস্তানায় দুদিনের অভিযানে ১০জন নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালেই ‘অপারেশন হিটব্যাক’ নামে নাসিরপুরের আস্তানাটি দখলে নেয় সোয়াত দল। সেখানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুই নারী, এক পুরুষ ও ৪ শিশু নিহত হন। এদিকে শুক্রবার সকালে শুরু হওয়া বড়হাটের আস্তানায় অভিযান গতকাল সকালে শেষ হয়। এতে ১ নারী ও ২ পুরুষ নিহত হয়। 

জঙ্গিরা দানব : সিটিটিসি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, নাসিরপুরের আস্তানায় নিহত জঙ্গিরা দানব। তারা এত পাষণ্ড যে নিজের বাচ্চাদেরও কেউ রেহাই দেয়নি। কয়েক মাসের শিশুকে পেটের সঙ্গে বেঁধে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হয়েছে। লাশ ক্ষতবিক্ষত থাকায় নাসিরপুরে নিহত ৭ জনের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

সন্দেহে বাড়ির মালিক : বড়হাটের জঙ্গি আস্তানার বাড়িটা দুর্ভেদ্য নির্মাণ কৌশল ও শক্তিশালী নির্মাণ উপকরণ অভিযানে অংশ নেওয়া সংস্থাগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে। ডুপেক্স ভবনটাতে বুলেটপ্রুফ কাচ ও ভবনের ভিতরে-বাইরে টাইলসের আস্তরণ থাকায় তা ভাঙতে বেগ পেতে হয় সোয়াতের। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অভিযানের সময় দেয়াল এবং বুলেটপ্রুফ মার্কারি গ্লাস থেকে গুলি ফিরে আসে। গ্লাসের গায়ে গুলির আঁচড় সামান্য লাগলেও পুরো একদিনে তা ভাঙা যায়নি। পুলিশ সূত্র আরও জানান, জুয়েল স্থানীয়দের বাড়ি ভাড়া না দিয়ে একই জঙ্গি গ্রুপকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে দুই বাড়ি ভাড়া দেওয়ায় আগে থেকেই তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর