সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। ড. এ টি এম শামসুল হুদা গতকাল বিএফডিসিতে নির্বাচনে ‘ইভিএম ব্যবহার বিষয়ক এক সংসদীয় বিতর্কে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছায়া সংসদে সরকারি দল বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি বিরোধী দল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে। অনুষ্ঠান শেষে বিতার্কিকদের ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। বিতর্ক অনুষ্ঠানে বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু রইস, ড. এস এম মোর্শেদ এবং মোস্তাফিজুর রহমান খান। ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, ইভিএম মেশিনের ব্যবহার নির্বাচনী ব্যয় হ্রাস, কম সময়ে ভোট গ্রহণ, ভোট নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস এর মতো নানাবিধ সুবিধা থাকলেও তা নিয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে। ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন উত্থাপন করা হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনের এ বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা প্রয়োজন। তিনি বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনসহ কয়েকটি নির্বাচনে আগামী কয়েক বছর ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটারদেরকে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ২৭টি দেশে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এ মেশিনের গঠন ও প্রকৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে। ড. হুদা আরও বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য ইভিএম একটি উপাদান মাত্র। অন্যান্য উপাদান যেমন ভালো আইন, নির্বাচন কশিমনের দক্ষতা, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সততা ও নিরপেক্ষতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ দায়িত্ব পালন ও রাজনৈতিক কমিটমেন্টের প্রয়োজন। এ ছাড়া নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ফলাফল গ্রহণ না করার মানসিকতা দুঃখজনক। একই সঙ্গে বিজয়ীরা রাষ্ট্র ও সমাজের সবকিছুর ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে থাকে। সেজন্য কেউ হেরে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চায় না। তাই আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ইভিএম ব্যবহার সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারে কিনা তা এখন দেখার বিষয়। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পারস্পরিক অবিশ্বাস রয়েছে তাই ইভিএমের ব্যবহার বিষয়ে যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং জনসচেতনতা তৈরি করা দরকার।
