সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
চেয়ারে বসার পর ফের বরখাস্ত তিন মেয়র

পাঁচ ছয় মিনিট পরেই খবর পেলেন বুলবুল

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

পাঁচ ছয় মিনিট পরেই খবর পেলেন বুলবুল

সকালে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক নিয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে আসেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এসেই তিনি বাধার মুখে পড়েন। দুপুরে তার দফতরের তালা খোলা হলো। দায়িত্ব নিয়ে যখন বসলেন মেয়রের চেয়ারে, তখনই এলো আবারও বরখাস্তের আদেশ। ফলে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে বুলবুলকে। গতকাল দুপুরে মাত্র ৫-৬ মিনিটের জন্য চেয়ারে বসার সময় পান মেয়র বুলবুল। এরপরই তাকে বরখাস্তের খবর জানানো হয়। মেয়র বুলবুলকে বরখাস্তের আদেশে স্বাক্ষর করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা। ওই চিঠিতে বলা হয়, বোয়ালিয়া থানার মামলা নম্বর ১৭, তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ অনুযায়ী আদালত যেহেতু অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে, স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করা হলো। বরখাস্তের খবর জানার পর বুলবুল মেয়রের চেয়ারে বসেই গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমার বরখাস্তের আদেশ সর্বোচ্চ আদালতে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট যে অর্ডার দিয়েছে, তাতে আগামী নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আমাকে বরখাস্ত করা যাবে না। আদালতের নির্দেশে আমিই বৈধ মেয়র। আমি সকাল ১০টা থেকে এখানে বসে আছি। কিন্তু আমার যেসব কর্মকর্তা আছেন তাদের দোচালা ভূমিকা আমি দেখতে পেয়েছি। দুই বছরে সিটি করপোরেশনের সেবা থেকে জনগণ বঞ্চিত হয়েছে।  মেয়র বুলবুল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ বলে আমি এখন থেকে মেয়র। আদালত থেকে পরবর্তী কোনো নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমি নিয়মিত অফিস ও দায়িত্ব পালন করব। এর আগে সকালে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সাময়িক বরখাস্তের দীর্ঘ ২৩ মাস পর আদালতের রায় হাতে নিয়ে নগর ভবনে আসেন। তিনি গিয়ে দেখেন মেয়রের কক্ষ তালাবদ্ধ। এরপর তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শরিফ উদ্দিনের দফতরে গিয়ে তালা খোলার কথা বলেন। কিন্তু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, কে বা কারা তালা ঝুলিয়েছে তিনি জানেন না। এ সময় মেয়র তার (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) কক্ষেই অপেক্ষা করেন। তালা খোলা না হলে নগর ভবন এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। মেয়রের কক্ষের তালা খুলে না দেওয়ায় ভাঙচুর চালিয়েছেন বিএনপিপন্থি বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলর ও দলীয় নেতা-কর্মীরা। মেয়রের একান্ত সচিব সাইদুল আলম মোল্লা ডেভিড ও পিএ আজমির আহম্মেদ মামুনের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে বিএনপিপন্থি কাউন্সিলর ও দলের নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেয়। মেয়রের পিএ শহিদুল ইসলাম জানান, মেয়রের সঙ্গে আসা লোকজনই তার কক্ষে ভাঙচুর চালিয়েছে। তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, মেয়রবিরোধী লোকজন ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিস্ত্রিকে ডেকে তালা ভাঙার চেষ্টা করলে মেয়রের পিএ শহিদুল ইসলাম ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ কে এম রাশিদুল হাসান তালা ভাঙতে বাধা দেন। তারা বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব না এলে তালা খোলা যাবে না। পরে দুপুর দেড়টার দিকে তালা ভাঙা হয়। নগরীর বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদাত হোসেন খান বলেন, এখানে যেন আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মেয়র বুলবুল বলেন, আদালতের রায় হাতে নিয়েই তিনি দায়িত্ব নিতে এসেছেন। তবে তিনি যেহেতু ভোটে নির্বাচিত এবং আদালতের রায়ে দায়িত্ব ফিরে পেয়েছেন, সেহেতু লিখিতভাবে কোনো আনুষ্ঠানিকতার দরকার নেই। তিনি এমনিতেই মেয়র। রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শরীফ উদ্দীন বলেন, কে বা কারা মেয়রের কক্ষে তালা দিয়ে গেছে তিনি জানেন না। চাবি না থাকায় তিনি খুলতে পারবেন না। তবে তিনি বলেন, মেয়রকে দায়িত্ব দেওয়ার কিছু নেই। তিনি নগর ভবনে আসামাত্র দায়িত্বের মধ্যে আছেন। দুপুর পৌনে ২টার দিকে মেয়রের কক্ষের তালা ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় বুলবুল মেয়রের চেয়ারে বসেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে ফ্যাক্স বার্তায় বুলবুলকে আবারও বরখাস্তের আদেশ পাঠানো হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে। ফ্যাক্স বার্তার খবরটি পাওয়ার পর মেয়রের চেয়ারে বসে বুলবুল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। ৩টার দিকে মেয়রের গাড়িতে করে বুলবুল বাড়ি চলে যান। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ৭ মে সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের ১০ মার্চ উচ্চ আদালত তার বরখাস্ত আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে। মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপরই গতকাল দায়িত্ব নিতে নগর ভবনে যান মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর