সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
চেয়ারে বসার পর ফের বরখাস্ত তিন মেয়র

তিন ঘণ্টা পরই জানলেন তিনি আবার নেই

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

তিন ঘণ্টা পরই জানলেন তিনি আবার নেই

সিলেট নগরীকে ‘বদলে দেওয়া’র স্বপ্ন নিয়ে মেয়র পদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। নিজের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজও শুরু করেছিলেন। আরিফের মাথায় স্নেহের হাত ছিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। মিলিত প্রচেষ্টায় ক্রমেই ঝকঝকে আধুনিক এক নগরী হয়ে উঠছিল সিলেট। কিন্তু বছর খানেক যেতে না যেতেই মামলার ফাঁদ ঘিরে ধরে আরিফকে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় জড়িয়ে যেতে হয় জেলে, হতে হয় মেয়রের পদ থেকে বরখাস্ত। পরে তার নাম জড়ায় সুরঞ্জিত সেনের জনসভায় বোমা হামলা মামলায়। আইনি লড়াইয়ে মেয়রের পদ ফিরে পেয়েছিলেন তিনি। গতকাল সকালে দায়িত্বভারও গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু মাত্র তিন ঘণ্টার মাথায় ফের বরখাস্তের আদেশ শুনতে হয়েছে তাকে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা নং-০৪/২০০৯ এর সম্পূরক অভিযোগপত্র স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে গৃহীত হওয়ায় আরিফুল হক চৌধুরীকে ফের বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত ২২ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হয়। গতকাল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে আরিফকে বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা নং-০৪/২০০৯ এর সম্পূরক অভিযোগপত্র ২২ মার্চ স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে গৃহীত হয়েছে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ (২০০৯ সনের ৬০ নং আইন) এর ধারা ১২ উপধারা(১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আরিফুল হক চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। মন্ত্রণালয়ের এমন আদেশ পাওয়ার পর আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এ শুধু আমাকেই বরখাস্ত করা নয়, এ হচ্ছে সিলেটের মানুষকে বরখাস্ত করা। আমি সিলেটের মানুষের মেয়র ছিলাম, আছিও। এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় দলীয় নেতা-কর্মী ও এলাকার লোকজন নিয়ে বাসা থেকে শোডাউন করে বেলা সোয়া ১১টায় নগর ভবনে পৌঁছে মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আরিফ। এ সময় নগর ভবনে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে ফুলেল অভ্যর্থনা জানান। পুনরায় দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর কয়েকটি ফাইলেও স্বাক্ষর করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সব মহলের মতামত নিয়ে নগরীর উন্নয়নে কাজ করা হবে। কিন্তু বেলা ২টায় ফ্যাক্সযোগে মন্ত্রণালয়ের আদেশ সিলেট সিটি করপোরেশনে পৌঁছার পর কালো মেঘে ঢেকে যায় আরিফের মুখ। ২০১৩ সালের ১৫ জুন সিসিক নির্বাচনে বিজয়ী হন আরিফ। দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর নগরীকে যানজটমুক্ত, জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা ও ফুটপাথ দখলমুক্ত করাসহ নানা প্রশংসিত কাজে হাত দেন। মেয়র থাকা অবস্থাতেই হবিগঞ্জে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় তার নাম যুক্ত হয়। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করলে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। পরে ৭ জানুয়ারি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ মামলা চলাকালীন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলা ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার চার্জশিটে গত বছরের ২০ জুলাই নাম যুক্ত হয় আরিফের। গত ২২ মার্চ মামলার চার্জশিট আদালতে গৃহীত হয়। এর আগে ৩ জানুয়ারি চারটি মামলায় জামিন পান আরিফ। পরে হাই কোর্টে একটি রিট করেন তিনি। হাই কোর্ট কিবরিয়া হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় আরিফকে বরখাস্তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ২৩ মার্চ আপিল বিভাগ আগের আদেশই বহাল রাখে। এর প্রেক্ষিতেই গতকাল নগর ভবনে যান আরিফ। কিন্তু সে যাওয়া স্থায়ী হয়েছে মাত্র তিন ঘণ্টা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর