সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঢাকায় আইপিইউ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন

বিশ্বব্যাপী সংকট মোকাবিলা করবেন তরুণ এমপিরাই

লাকমিনা জেসমিন সোমা

বিশ্বব্যাপী সংকট মোকাবিলা করবেন তরুণ এমপিরাই

আইপিইউ সম্মেলনে দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি ও অতিথিরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সংসদে তরুণ নেতৃত্বই পারে বিশ্বব্যাপী তরুণদের সংকট মোকাবিলা করতে। ভবিষ্যৎ তরুণ প্রজন্মের সমস্যা সমাধানে এই তরুণ এমপিরাই কাজ করতে পারেন। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন—আইপিইউ’র সম্মেলনে এমন অভিমত জানিয়েছেন বিশ্বের তরুণ এমপিরা।

গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল ১১টায় আইপিভুক্ত দেশগুলোর তরুণ এমপিদের ফোরামের একটি অধিবেশন হয়। অধিবেশনে শতাধিক দেশের তরুণ এমপিরা অংশ নেন। আলোচনা পর্বে তারা বিশ্বব্যাপী তরুণদের বিভিন্ন সমস্যা, সংকট এবং তা সমাধানে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। পরে আলাদা সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে একাধিক দেশের তরুণ এমপিদের বিশ্বব্যাপী সংসদে তরুণ নেতৃত্ব বিষয়ে নিজেদের অভিমত তুলে ধরেন। প্রতিবেশী দেশ এমপি চিত্রনায়ক দেব বলেন, এক সময় মনে করা হতো কেবল অভিজ্ঞ ও বয়স্করাই সংসদে যেতে পারে। কিন্তু এই ধারণা পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ এবং ভারত দুই দেশের ক্ষেত্রেই গেল কয়েক বছরে সংসদে তরুণ নেতৃত্ব অনেক বেড়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সংসদে তরুণ কিন্তু জানা-শোনা শিক্ষিত নেতৃত্ব আসা অপরিহার্য। একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য নাভানা আকতার বলেন, অন্যান্য দেশের মতো আমাদের পার্লামেন্টে তরুণ এমপিদের কোনো ফোরাম নেই। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চাইছেন এখানে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ুক। এক প্রশ্নের উত্তরে ইতালি থেকে আগত ২৪ বছর বয়সী এক এমপি বলেন, বেশির ভাগ দেশেই সংকটগুলো তৈরি হয় পুরাতন ধ্যান-ধারণা সম্পন্ন মানুষের চিন্তা থেকে। আর তাই এই সংকটগুলো নিরসনে চাই তরুণ নেতৃত্ব। নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এবং সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়ে এই সংকট মোকাবিলা করতেই আজ আমরা একত্রিত হয়েছি। ফোরামের আলোচনার শেষাংশে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফোরামের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন উগান্ডার সর্বকনিষ্ঠ এমপি অসুরন মৌরিন। তিনি বলেন, আজকের তরুণরা বেকারত্ব থেকে শুরু করে অনেক সমস্যারই সম্মুখীন হচ্ছে। যে সমস্যাগুলো তরুণ এমপিরা সবচেয়ে ভালো বুঝবেন। তবে আমি বলব, তরুণরা আজ অনেক এগিয়েছে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের সংসদেই এখন ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ তরুণ নেতৃত্ব আছে। এই ফোরামে একত্রিত হয়ে আমরা সেটিকেই আরও উৎসাহিত করতে চাইছি। এ প্রসঙ্গে নাইজেরিয়ার এমপি বলেন, বিশ্বব্যাপী জাতীয় সংসদে তরুণ প্রতিনিধিত্ব কম। আর তাই আমরা আইপিইউর এই তরুণ ফোরামের আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, নীতিনির্ধারণ ও সংসদীয় গণতন্ত্রে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ব্যাপারে কথা বলেছি। বিশ্বব্যাপী তরুণদের এমন অভিমতের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংসদে এক সময় নারী নেতৃত্বের সংকট ছিল। এখন ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব থাকার নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও এটি বলা হয়েছে। এখন তরুণ নেতৃত্ব বাড়াতেও যদি আমাদের সরকার বা রাজনৈতিক নেতারা এমন নীতিমালা করে দেন, তবে ভবিষ্যতে সংসদেও তরুণ নেতৃত্বের সংকট থাকবে না।

বাংলাদেশের প্রশংসায় বিশ্ব : বাংলাদেশ  জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সিপিএ  নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, পোল্যান্ড ও মঙ্গোলিয়ার ডেলিগেশন প্রধানরা সাক্ষাৎ করে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ১৩৬তম আইপিইউ  অ্যাসেম্বলি আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। গতকাল বিআইসিসিতে স্পিকারের কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তারা এ প্রশংসা করেন। সাক্ষাৎকালে যুক্তরাজ্যের ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি ও ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সিলেক্ট কমিটির সহসভাপতি নাইজেল ইভান্স এমপি ১৩৬তম আইপিইউ  অ্যাসেম্বলি  অত্যন্ত সুন্দরভাবে আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বর্তমান বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্ব সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশকে একটি মডেল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ সময় স্পিকার বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে চমৎকার সম্পর্ক। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এর আগে থাইল্যান্ড ন্যাশনাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রতিনিধি দলের প্রধান সুরাচি লিয়েনবুনলার্টচাই-এর নেতৃত্বে থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি দল স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অ্যাসেম্বলি আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। এ সময় থাইল্যান্ড প্রতিনিধি দলের প্রধান থাইল্যান্ডের নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিষয়টি স্পিকারকে অবহিত করেন। স্পিকার থাইল্যান্ডকে নতুন সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধানকে অনুসরণ করার আহ্বান জানান।

পরে পোল্যান্ড প্রতিনিধি দলের প্রধান এলজবিয়েটা ক্রুক- এর নেতৃত্বে পোল্যান্ড প্রতিনিধি দল স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ সময় ১৩৬তম আইপিইউ অ্যাসেম্বলি  বাংলাদেশ অত্যন্ত সুন্দরভাবে আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানান। ইউরোপের মধ্যে দ্বিতীয় দেশ পোল্যান্ড স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এরপর তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পরবর্তী নির্বাচনে পোল্যান্ডের প্রার্থীকে বাংলাদেশের সমর্থন কামনা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর