শিরোনাম
সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

অন্য দেশে নাক গলানো বন্ধের বিষয়ে আসছে সিদ্ধান্ত

আহমদ সেলিম রেজা

কোনো সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ রোধে এমপিদের ভূমিকা সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে আইপিইউ সম্মেলনে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনো সরকারকে কোনো মিলিটারি বা অন্য কোনো শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে     উত্খাতের চেষ্টাকে এ খসড়া প্রস্তাবে নিন্দা জানানোর কথা বলা হয়েছে।

এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ ‘এনজিও’র মাধ্যমে অন্য দেশে নাক গলানোর চেষ্টা বন্ধে একটি সংযোজনী দিয়েছে। তবে খসড়া প্রস্তাবটি গ্রহণ বা বর্জনের সিদ্ধান্ত হবে ভোটের মাধ্যমে।  আগামীকাল এ ভোট হবে। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে শান্তি ও নিরাপত্তাবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় দিনভর এ খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে তীব্র বিতর্ক হয়। জানা যায়, চীন, ভারত, রাশিয়াসহ অনেক দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে থাকলেও জি-১২ প্লাস গ্রুপ এ প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আবার বিতর্ক শেষে প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করা হবে। আগামীকাল সম্মেলনে এ খসড়া প্রস্তাব নিয়ে ভোটের মাধ্যমে প্রস্তাবটি গ্রহণ বা বাতিল করা হবে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আইপিইউর জনসংযোগ কর্মকর্তা। এ বিষয়ে গতকালের ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, এর মাধ্যমে আইপিইউর সংসদীয় কূটনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। প্রাণবন্ত বিতর্কে বিষয়টি এখন উন্নত দেশের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের কূটনৈতিক লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। জেনেভায় এ বিষয়ে একটি খসড়া প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। গতকাল কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী  দীপু মনি খসড়া প্রস্তাবে একটি সংযোজনী আনার প্রস্তাব করে বলেন, বর্তমানে অনেক দেশ ‘এনজিও’র মাধ্যমে অন্য দেশে নাক গলানোর চেষ্টা করে। এটি বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি দেশের নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে। প্রতিটি দেশের অধিকার আছে নিজেকে শাসন করার এবং কীভাবে উন্নয়ন করবে সেটি ঠিক করার। তবে অনেক দেশ মনে করে তারা ইরাক বা সিরিয়াতে নাক গলানোর অধিকার রাখে। ফলে সে দেশে সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রায় এক বছর আলোচনার পর এ রেজ্যুলেশনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি দেশ এ খসড়ার বিরোধিতা করেছে। তারা এটিকে বাতিল করার প্রস্তাব করেছে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গ্রুপ-১২ প্লাস জোটের মোট ৪৭টি সদস্য দেশ এ খসড়ার চরম বিরোধিতা করছে। এ জোটের সদস্য জার্মানি জানিয়েছে, ইতিহাসে শত শত নাক গলানোর উদাহরণ আছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাক গলাতে হয়। তাই এ খসড়া বাতিল করা উচিত। একই সুরে কথা বলেছে ইউক্রেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ক। রাশিয়া ইউক্রেনের অংশ ক্রিমিয়া দখল করেছে। কিন্তু তারপরও অন্য দেশের নাক গলানো বন্ধের এ রেজ্যুলেশনের বিরোধিতা করে ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার সংসদ ক্রিমিয়া দখলের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিল। তাই এ ধরনের খসড়ার কোনো গুরুত্ব নেই। বেলজিয়াম বিরোধিতা করে জানিয়েছে, এটি ভারসাম্যপূর্ণ খসড়া নয়। অন্যদিকে তুরস্ক এই আইপিইউ সম্মেলনে এ খসড়া নিয়ে আলোচনা না করার আহ্বান জানায়। এ খসড়া প্রস্তাব সমর্থন করে চীন বলেছে, বিদেশি শক্তি এবং এর প্রভাব গ্রহণযোগ্য নয়। ২০০৩ সালে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অজুহাত দেখিয়ে একটি দেশ ইরাক আক্রমণ করেছিল। কিন্তু পরে দেখা গেছে, সেখানে এ ধরনের কোনো অস্ত্র নেই। রাশিয়া এ খসড়া সমর্থন করে জানিয়েছে, এটি বাতিল করা হলে সারা বিশ্বে একটি ভুল বার্তা যাবে। ভারতও এ প্রস্তাব সমর্থন করেছে বলে জানায় বৈঠক সূত্র। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেন, আইপিইউর স্ট্যান্ডিং কমিটি-১ এ আলোচনাটা ছিল, আন্তর্জাতিক পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি নিয়ে জেনেভাতে পূর্ববর্তী আলোচনায় যে রেজ্যুলেশন তৈরি হয়েছে, ওই রেজ্যুলেশন নিয়ে বাংলাদেশসহ ৪০ দেশ আলোচনায় অংশ নিয়েছে। রেজ্যুলেশনটা চেইঞ্জ করা দরকার। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো কোনো উন্নত শক্তিশালী দেশ কখনো দুর্নীতি, কখনো গণতন্ত্র, কখনো জঙ্গিবাদ বা কোনো একটা ছুঁতা ধরে কোনো কোনো দেশে হস্তক্ষেপ করে। ফলে ওই দেশের অবস্থা ভালো হয় না। বরং পৃথিবীর অবস্থা খারাপ হয়। তিনি বলেন, এ হস্তক্ষেপের জায়গাটা বন্ধ করা দরকার। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন জায়গায় যে দুর্ভিক্ষ চলছে সে ব্যাপারটিও আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া আমরা একাত্তরে গণহত্যার কথা এবং রোহিঙ্গাদের কথা তুলে ধরেছি। সম্মেলনে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের মতো এশিয়ান পার্লামেন্ট করা যায় কিনা এমন একটা প্রস্তাব আসছে বলেও জানান তিনি। দীপু মনি বলেন, এ খসড়াটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্ব্বপূর্ণ। কারণ কয়েক বছর ধরে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান ক্রমাগত নাক গলিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকার এবং তাদের জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদগুলো বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিয়েছে ও রেজ্যুলেশন গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অন্য দেশের কোনো বিষয়ে নাক গলানোকে সমর্থন করে না। শুধু বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি খুব প্রয়োজন পড়ে তবে জাতিসংঘের ম্যান্ডেট নিয়ে ইন্টারফেয়ার করা যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর