সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

অর্থনৈতিক সহিংসতা নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থনৈতিক সহিংসতা নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি

কৈলাস সত্যার্থী

বিশ্বব্যাপী আয় বৈষম্যই হচ্ছে অর্থনৈতিক সহিংসতা। এই সহিংসতা মানব জাতির নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য বড় ধরনের হুমকি। এ জন্য বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান ও সামাজিক বৈষম্য কমাতে সংসদে আইন করে সরকারকে চাপে রাখতে হবে। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন—আইপিইউ সম্মেলনে ভারতের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী এ কথা বলেন। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সবার মর্যাদা ও কল্যাণ সাধন’। কৈলাশ সত্যার্থী এ বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী ও মহাসচিব মার্টিন চুনগং। কৈলাশ সত্যার্থী বলেন, বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিশ্বে আটজন ধনী লোক রয়েছে, যাদের সম্পদ ৫০টি দেশের সম্পদের সমান। অথচ বিশ্বের একজন মানুষের প্রতিদিন গড় আয় দুই ডলারের নিচে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমপিদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১০ কোটি মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। শিশুদের স্কুলে যাওয়ার হার বেড়েছে । এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনে সংসদে আইন পাস করে সরকারকে চাপে রাখতে তিনি এমপিদের প্রতি আহ্বান জানান। শিশুর অধিকার বিষয়ে কাজ করে নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলেন, কয়েক যুগ আগে যেখানে বেতন বৈষম্য ছিল ১ ভাগের বিপরীতে ৭ ভাগ। বর্তমানে এই বৈষম্য বেড়ে একজনের বিপরীতে ২০০ ভাগে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি প্রতিদিন গড়ে ৯ হাজার শিশু ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কারণে মারা যাচ্ছে। প্রকৃত অর্থে তারা মারা যাচ্ছে না, তাদের হত্যা করা হচ্ছে। ২৭ লাখ শিশু এই মুহূর্তে স্কুলে যাচ্ছে না। আড়াই লাখ শিশু পাচারের শিকার হচ্ছে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বের প্রায় ২৩ কোটি শিশুর জীবন বিপন্ন। কৈলাশ আরও বলেন, বর্তমানে ২৩০ মিলিয়ন শিশু পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে জেগে উঠেছে। শিশুরাই শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছে। অথচ এই বিষয়টি এমডিজিতে ছিল না। এসডিজিতে অন্তর্ভুক্ত। বিষয়টি আমাদের বাজেট ও নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজে এমন একটি ধারণা আছে যে অসমতা আমাদের জীবন সঙ্গী। বিশ্বে ডিজিটাল অভ্যুত্থান ঘটছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। বিশ্বের সব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মাত্র ২২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, যা বিশ্বের ৩ দশমিক ৫ দিনের প্রতিরক্ষা বাজেটের সমান। কৈলাশ সত্যার্থী বলেন, আজই সময়, এই ঢাকা থেকেই আমাদের শিশুদের জন্য কিছু করার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সহানুভূতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার এখনই সময়। যুব সমাজের নানা সমস্যা রয়েছে। যুব সমাজ খুব সহজেই ভুল পথে পরিচালিত হয়। বর্তমানে এক কোটি শিশু ও যুবক ভুল পথে রয়েছে। তাদের সঠিক পথে আনতে হবে। আমরা যদি এই শক্তিকে কাজে লাগাতে না পারি, তবে তারা হতাশাগ্রস্ত, অসহিষ্ণু এবং সহিংস হয়ে পড়বে। নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি নারীকে আমরা সমভাবে ক্ষমতায়িত করতে পারতাম তাহলে গত ৫ হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাসে অনেক সমস্যা আমাদের মোকাবিলা করা লাগত না। যা এখন আমোদের করতে হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সমতা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, উন্নয়ন থেকে কেউ যাতে বঞ্চিত না হয় সেজন্য সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর এ বিষয়ে সাধারণ আলোচনা হয়। এর আগে আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আইপিইউ পরিচালনা পরিষদের এক বৈঠক হয়। বৈঠকে শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ১৩৬তম সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়। এ ছাড়া আইপিইউর সভায় আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র এবং টুভালুরকে আইপিইউর নতুন সদস্য দেশ-এর মর্যাদা দেওয়া হয়। ফলে এই ফোরামের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১৭৩-এ উন্নীত হলো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর