সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

মধ্যরাতে একুশে পালন পুঁজিবাদী প্রথা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

মধ্যরাতে একুশে পালন পুঁজিবাদী প্রথা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, মধ্যরাতে একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস পালন পুঁজিবাদী প্রথা। এই যে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করি। সে উদযাপন আমরা এক সময় করতাম সকাল বেলা প্রত্যুষে। এটি হচ্ছে আমাদের প্রথা। আমাদের পয়লা বৈশাখ, সেটি সকালে শুরু হয়। পাখির গানের সঙ্গে, প্রকৃতির জেগে ওঠার সঙ্গে সেটা শুরু করি আমরা। কিন্তু ১২টা ১ মিনিটে মধ্যরাতে যে উদযাপন সেটি পুঁজিবাদীরা করে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৩৮তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালে প্রথম, যখন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তীব্র হয়েছে এবং নির্বাচন সামনে আসছে, তখন একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন মধ্যরাতে চলে গেল। ১২টা ১ মিনিটে মধ্যরাতের যে উদযাপন সেটি পুঁজিবাদীরা করে। তাদের থার্টিফার্স্ট নাইট মধ্যরাতে অন্ধকারে আতশবাজি এবং বোমাবাজির মধ্যে শুরু হয়। এ যে আমরা (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালকে মধ্যরাতে নিয়ে গেলাম, এর তাত্পর্য কী? সেটি আমার কাছে একটা প্রশ্ন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্ন রেখে বলেন, এর তাত্পর্য কী এই যে, আমাদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা পুঁজিবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে? এ সময় তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ভেলেনটাইনস ডে’ পালন সম্পর্কে বলেন, যে ফেব্রুয়ারি মাস এলে ভেলেনটাইনস ডে আসে, এটি একুশে ফেব্রুয়ারিকে ম্লান করে দিতে চায়। এটি কি পুঁজিবাদের আক্রমণ? আমাদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার ওপর একটি প্রতীক হিসেবে ধরা দেয় কিনা। আমরা যদি নিজেদের দিকে তাকাই— তাহলে দেখতে পাব আমরা স্বাধীন হয়েছি বটে কিন্তু আমরা মুক্ত হতে পারিনি। আমরা যে উন্নতি করেছি সেটি পাহাড়ের মতো, দৈত্যের মতো পুঁজিবাদী উন্নয়ন। জঙ্গিরাও পুঁজিবাদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ যে সব জঙ্গি নিজেদের আদর্শবাদী বলে মনে করছে, আসলে তারা ভ্রান্ত আদর্শের জন্য লড়ছে, প্রাণ দিচ্ছে। তারা পুঁজিবাদের জন্য লড়ছে। তারা মনে করে, ইহকালে তারা মারা গেলে পরকালে বেহেশতে চলে যাবে। এসব কাজের মধ্যদিয়ে পরকালের জন্য পুঁজির সঞ্চার করছে। এটাও একটা পুঁজিবাদী চিন্তা। ধর্মনিরপেক্ষতা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত বলে মনে করেন এই ইমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা না হলে আমরা গণতন্ত্রের দিকে এগোতে পারব না। আজকে প্রগতিশীলরাও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে না। তারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলেন। ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। ধর্মের প্রতি সহনশীলতা ধর্মনিরপেক্ষতা নয়। আসল কথা হচ্ছে রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। ধর্ম থাকবে ব্যক্তি পর্যায়ে। আর রাষ্ট্র থাকবে সবার জন্য। এ জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে আমরা কখনোই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারব না। দেশ সেই পাকিস্তানের মতোই থেকে যাবে। এর আগে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত, দলীয় সংগীত গেয়ে, পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। ‘ছাত্র-জনতা ঐক্য গড়, শিক্ষা-সংস্কৃতি রক্ষা কর’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি লাকী আক্তার। সঞ্চালনা করেন জিএম জিলানী শুভ। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতারা। বক্তারা ডাকসু নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। এতে ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপালের বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশের পর একটি র‌্যালি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ-মৎস্য ভবন-মতিঝিল-কাদের চত্বর-শিক্ষা অধিকার চত্বর, দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়। বিকাল ৪টায় টিএসসি রাজু স্মারক ভাস্কর্যে সম্মেলনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আজ টিএসসির মিলনায়তনে সকাল ১১টায় ‘নয়া উদারবাদী অর্থনৈতিক দর্শনের কবলে শিক্ষা’ এ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক সেমিনার। বিকাল ৩টায় একই স্থানে সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হবে। ৪-৫ এপ্রিল ৬০০ কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে সংগঠনের ৩৮তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর