মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বড় প্রাপ্তি বাংলাদেশেরই

লাকমিনা জেসমিন সোমা

বড় প্রাপ্তি বাংলাদেশেরই

আইপিইউ সম্মেলনে গতকাল আলোচনা অনুষ্ঠান —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে আইপিইউর ১৩৬তম সম্মেলন। রিড্রেসিং ইনইকুয়ালিটিজ : ডেলিভারিং অন ডিগনিটি অ্যান্ড ওয়েলবিং ফর অল’ প্রতিপাদ্য বিষয়ে এ সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী সমতা অর্জনে নিজেদের অভিমত তুলে ধরছেন বিশ্ব নেতারা। তবে দিন শেষে এই বিশাল আয়োজনের বড় প্রাপ্তিই জমা হচ্ছে বাংলাদেশের ঝুলিতে।

সম্মেলনে দৈনন্দিন কর্মসূচির বাইরে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। সংসদের স্পিকার থেকে শুরু করে এমপি-মন্ত্রীরা নিয়মিতই সাইডলাইন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের স্পিকার, এমপি ও অন্যান্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে। এরই মধ্যে সম্মেলনের তিন দিনে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রায় ৮-১০টি দেশের স্পিকার ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেছেন। গতকালও জার্মানি, সুইডেন ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। সৌজন্য সাক্ষাৎ হলেও সেখানে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়েও কিছু কথাবার্তা বলেছেন তারা। বিশেষ করে জার্মানির স্পিকারকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান বাংলাদেশের স্পিকার। এ ছাড়া সাধারণ আলোচনার প্রায় প্রতিটি সেশনই সঞ্চালনা কিংবা সভাপতিত্ব করেছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে দুদেশের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী জাতিসংঘ প্রতিনিধিসহ আইপিইউর ভিআইপি প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরেছেন। গতকাল রাশিয়ার সংসদীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বাংলাদেশের সংসদীয় একটি প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেন সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। এর আগে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আইপিইউর নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। এদিকে আইপিইউর বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের এমপি হওয়ায় প্রাপ্তির ঝুলিতে আরও খানিকটা অর্জন বেড়েছে বাংলাদেশের। আইপিইউভুক্ত দেশগুলোর নেতারা স্বউদ্যোগে এসে দেখা করছেন প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে। এর মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও নিজেদের বিভিন্ন অর্জনের কথা বিশ্ব নেতাদের কাছে তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু তাই না, আইপিইউ সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ সেশনগুলোতে ফ্লোর নিচ্ছেন বাংলাদেশের এমপিরা। এরই মধ্যে সম্মেলনের প্রথম দিন নারী এমপি ফোরামের আলোচনায় সভাপতিত্ব করেছেন দিপু মনি এমপি। সেখানে নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে যে বিশাল অর্জন তা তুলে ধরেন তিনি। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশের প্রতিনিধিই বাংলাদেশের এই অর্জনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি ছাড়াও আইপিইউর বিভিন্ন সেশনে এরই মধ্যে ১০-১২ জন এমপি অংশ নিয়েছেন। গতকাল শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা শীর্ষক সেশনে বাংলাদেশের তিনজন এমপি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। কূটনীতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন আইপিইউ আয়োজনে নিজেদের ক্ষমতা প্রমাণ করা। এই স্বীকারোক্তি খোদ দক্ষিণ আফ্রিকান আইপিইউ মহাসচিবেরও। গতকাল আইপিইউ মহাসচিব মার্টিন জুঙগং বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যখন আমরা বাংলাদেশে আইপিইউ সম্মেলন করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম তখন অনেক বিশ্বনেতাই এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। নিরাপত্তা নিয়ে অনেক দেশ শঙ্কিতও ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে তারাও পারে। এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ১৩৬তম সম্মেলন সফল করতে আমরা অন্তত ছয় মাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন অংশগ্রহণকারীরা সবাই বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন। এদিকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের খবর ছড়িয়ে দিতে অনন্য সুযোগ তৈরি করেছে আইপিইউ সম্মেলন। কেননা, সম্মেলন কেন্দ্রের এক পাশেই আয়োজন করা হয়েছে প্রদর্শনীর। সরকারের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর আয়োজনে সেখানে ৫৯টি স্টলে স্থান পাচ্ছে এসব পণ্য। এরই মধ্যে মেলার প্রথম দিনেই অন্তত ১০ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। বাকি দুদিনের হিসাব আরও বড়। শুধু পণ্যই নয়, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন, সংস্কৃতিও তুলে ধরা হচ্ছে এ মেলায়। এ ছাড়া দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলোকে ব্রান্ডিং করা হচ্ছে।

কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের আয়োজনে অংশ নেওয়ার বড় প্রাপ্তিই হলো সম্পর্ক উন্নয়ন। আর যেহেতু স্বাগতিক দেশ বাংলাদেশ, সুতরাং এখানে বাংলাদেশের প্রাপ্তি আরও খানিকটা বেশিই।

সর্বশেষ খবর