শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঢাকায় আইপিইউ সম্মেলন ৪র্থ দিন

এমপিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ

আহমদ সেলিম রেজা

এমপিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ

সারা বিশ্বে সরকার কর্তৃক এমপিদের বিরুদ্ধে মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি ও তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্টার পার্লামেন্টারিয়ান ইউনিয়ন (আইপিইউ)।

গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কমিটি অন হিউম্যান রাইটস অব পার্লামেন্টারিয়ানস-এর বৈঠকে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আফগানিস্তানের এমপি এফ কোফি। কমিটি সূত্র জানায়, গত বছর বিশ্বের ১৬ দেশের ২২৭ জন এমপি তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আইপিইউ-এর কাছে অভিযোগ  করেন। এর মধ্যে তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও নিকারাগুয়ার পরিস্থিতি ভয়াবহ। সবচেয়ে বেশি ৬০ জন এমপির মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে তুরস্কে। সেখানে বর্তমান সংসদের এমপিদের বিরুদ্ধে পাঁচ শতাধিক সন্ত্রাসী ও ফৌজধারি মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে অনেক এমপি প্রায় বন্দীদশায় জীবনযাপন করছেন। গত জানুয়ারি মাসে আইপিইউর সভায় ২২৭ জন এমপির মানবাধিকার লঙ্ঘনের কেসস্টাডি নিয়ে ঢাকার সম্মেলনে রেজুলেশন নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, তুরস্ক সরকার সন্ত্রাস, ফৌজধারি অপরাধসহ নানা বিষয়ে ৬০ জন এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। এদের মধ্যে ৫৫ জন তুরস্কের বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য। সেখানে এমপিদের সংসদীয় দায় মুক্তির বিষয়টিও সরকার বিবেচনায় নেয়নি। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ও বিবৃতিকে এমপিদের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এমপিদের আইনগত অধিকার, বাকস্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। একইভাবে নিকারাগুয়ার ২১, মালয়েশিয়ার ১৯, মিয়ানমার ও জিম্বাবুয়ের ১৪, শ্রীলঙ্কার ৫ জন এমপিসহ ইরাক, কুয়েত, ইয়েমেন, বাহরাইন, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডির এমপির বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব বিষয়ে সম্মেলনে আলোচনা শেষে ঐকমত্যের ভিত্তিতে রেজুলেশন গ্রহণ করা হবে বলে জানা যায়। সাধারণ অ্যাসেম্বলিতে আলোচনার পর ভোটাভোটিতে খারিজ হয়ে গেছে অভিবাসন নীতি ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ আবাসন নির্মাণবিরোধী প্রস্তাব। এর আগে কমিটি অন ডেমোক্রেসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসে-এ বিষয়ে দুটি জরুরি নোটিস উত্থাপিত হয়। অভিভাসন নীতি প্রশ্নে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে মেক্সিকো। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ আবাসন নির্মাণবিরোধী জরুরি প্রস্তাব আনেন আরব গ্রুপের পক্ষে প্যালেস্টাইন। ভোটে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করায় প্রস্তাব দুটি খারিজ হয়ে যায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধি দলের নেতা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, বাংলাদেশ এই দুটি প্রস্তাবের পক্ষে ছিল। কিন্তু ভোটাভুটিতে আমরা হেরে গেছি। তবে আফ্রিকা ও ইয়েমেনে খরা ও দুর্ভিক্ষের কবলে পড়া লাখ লাখ মানুষকে রক্ষা করা ও খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা বিষয়ক নিরাপত্তার বিষয়ক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবে আইপিইউ সদস্যদেশগুলো একত্রিত হয়ে এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে। অপর কোনো দেশে নাক না গলানোর বিষয়ে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে আইপিইউর সাধারণ অধিবেশন গতকালও ছিল সরগরম। কোনো সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ রোধে এমপিদের ভূমিকা সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাব গ্রহণের বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে একটা নীরব ঐকমত্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গতকাল চারটি স্থায়ী কমিটির সভাসহ মোট পাঁচটি সেশনে অনুষ্ঠিত হয়। এ সেশনে বিশ্বে গণতন্ত্রের সুপ্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া এমপিদের মানবাধিকার, টেকসই উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধি অর্জন নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের প্রশংসায় ফ্রান্সের এমপি : সন্ত্রাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ফ্রান্সের এমপি পোযো ডি বোরগো। তিনি বলেন, সন্ত্রাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ, এটা সবার দরকার। আইপিইউ সম্মেলনে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। পোযো ডি বোরগো বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ সবার জন্য শিক্ষা। সন্ত্রাস জাতিগত সমস্যা নয়, এটা বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এটা মোকাবিলায় ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্র সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ফ্রান্সে সন্ত্রাসী আক্রমণ হচ্ছে। আমরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু এটা সেখানের প্রকৃত চেহারা নয়। সন্ত্রাসীরা আমাদের অনেক শিশুদের মারছে। অনেককে আহত করছে। এ জন্য তাদের সুরক্ষা করার উপায় বের করতে হবে। চক্রান্তের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটি দেশের সমস্যা নিয়ে তাদের নিজেদেরকেই ভাবতে হবে এবং নিজেদেরকেই সমাধান করতে হবে। গণতন্ত্র ছাডা উন্নয়ন হয় না। বাংলাদেশেরও গণতন্ত্রের উন্নয়ন হচ্ছে। এ উন্নয়নকে ধরে রাখতে হবে।

পরবর্তী সম্মেলন রাশিয়ায় চায় না ইউক্রেন : ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৭তম সম্মেলন রাশিয়ায় করার ঘোর বিরোধিতা করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের এমপি বি. টারজোক বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। দেশটি চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। আইপিইউ যেসব বিষয় ধারণ করে তা রাশিয়ার মধ্যে নেই। তাই ওই দেশে আইপিইউয়ের সম্মেলন যাতে না হয় সেই দাবি জানাচ্ছি। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আইপিইউ এসেম্বলির তৃতীয় দিনে সাধারণ বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান। সম্মেলনের সভাপতি বাংলাদেশের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া এই সেশনে মঞ্চে ছিলেন আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী।

 সম্মেলনে বি. টারজোক বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে লুটতরাজ চালাচ্ছে। আমরা ইউক্রেনিয়ানরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, রাশিয়া যদি জাতিসংঘের নিয়মগুলো মেনে চলে তাহলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।

ইউক্রেনের এই এমপি বলেন, আইপিইউ ও জাতিসংঘ মিলে আমরা শান্তি রক্ষা করে চলতে চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমরা প্রতিজ্ঞা করতে চাই আর যেন একটিও মৃত্যু না ঘটে। কোনো মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয়— সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর