বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

৩৩ চুক্তি ও সমঝোতা হবে, গোপন কিছু নেই

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার আশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ এম মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, ‘ভারত সফরে গোপন করার মতো কোনো বিষয় নেই। সব চুক্তিই প্রকাশ করা হবে। সবাই সবকিছুই জানতে পারবেন। আমাদের নিন্দুকেরা যা বলছে সেটি ঠিক নয়।’ গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনক্লজ কনফারেন্স রুমে প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক এখন যে অবস্থানে আছে, সেখানে আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। সেখানে একটি বিষয় হলো কি হলো না, সেটি তেমন বড় কিছু নয়।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ভারত সফর করবেন। এ সফরের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান। আর পৃথক এক নিমন্ত্রণপত্রে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। এটা নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আশা করছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরে দুই দেশের মধ্যে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্তহাট স্থাপন, তথ্য ও সম্প্রচার, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান, ভারতের প্রদেয় তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতা সম্পর্কিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক। পাশাপাশি দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল, ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনাসদস্য শহীদ হয়েছেন, তাদের মরণোত্তর মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেওয়া হবে এবারের সফরে। সম্মাননা দেওয়া হবে সাতজন শহীদকে। পর্যায়ক্রমে ১৬৬১ জনকে এ সম্মাননা দেওয়া হবে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি হবে অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে। বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, যেমন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ তথা কানেকটিভিটি, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, পদ্মা (গঙ্গা) ব্যারাজ নির্মাণ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান, মানবসম্পদ রোধ প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাবে। বৈঠক শেষে দুই দেশ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

অভিন্ন পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনায় তিস্তা কতটুকু গুরুত্ব পাবে—এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, এর মধ্যে একটা হলো বা না হলো, এতে কিছু যায়-আসে না। এটা দেখতে হবে যে মূল ধারাটা কোথায় যাচ্ছে। এর মধ্যে একটা হবে কি হবে না, এটা এখন আমরা কিছু বলতে চাই না।’ সীমান্তহত্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হবে কি না—এ প্রশ্নে মাহমুদ আলী বলেন, অতিসম্প্রতি বৈঠক হয়ে গেল। আপনারা জানেন দুই পক্ষই খুব সিরিয়াসলি চেষ্টা করছে, যাতে এটা (সীমান্তহত্যা) একদম বন্ধ করা যায়, শেষ করা যায়। কাজেই এটা তো নতুন করে কিছু বলার নেই।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের ব্যবসায়ীদের একটি বিজনেস ইভেন্টে অংশ নেবেন। সেই ইভেন্টে বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের চিত্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরা হবে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা হবে। এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, আইন ও বিচার মন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।

সর্বশেষ খবর