বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশের ক্ষতি আমার দ্বারা হবে না : প্রধানমন্ত্রী

জঙ্গিবাদ দমনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পুলিশ
পিওএইচএস আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ক্ষতি আমার দ্বারা হবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তার কার্যালয়ে পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটির প্লটের বরাদ্দপত্র বিতরণ করেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কোনো চুক্তি হলে তা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই হবে। অনেকে অনেক কথা বলবে, নিজের বিবেক যদি ঠিক থাকে, দেশপ্রেম থাকে, আমার দেশের ক্ষতি অন্তত আমাদের দ্বারা হবে না। দেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছুই করা হবে না।’ তিনি বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের দমনে বাংলাদেশের পুলিশ উন্নত দেশগুলোর চেয়ে বেশি সফলতা দেখিয়েছে। উন্নত দেশগুলোতেও দেখলাম না, ঘটনা ঘটার আগে যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করতে যাচ্ছে বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তাদের তারা কিন্তু এ পর্যন্ত ধরতে পারেনি। এ দৃষ্টান্তটা আমরা বাংলাদেশে দেখাতে পেরেছি।’ গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটির প্লটের বরাদ্দপত্র বিতরণকালে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল ১৯৭৪ সালে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত ২৫ বছরের সমঝোতা চুক্তিকে গোলামির চুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। গোলামি না, বরং অনেক জমি, অনেক কিছু বাঙালিরা পেয়েছে। এই চুক্তি থেকে সীমান্ত সমস্যা সমাধানসহ বাংলাদেশেরই অর্জন বেশি। অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির জন্য শেখ হাসিনা দেশের পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারগুলোকেই দায়ী করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া কখনো ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। উপরন্তু তারা সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে উদাসীন ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত তাদের শাসনামলে দেশের ভেতরের সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র পাচারের মূল হোতা ছিল। ওই অস্ত্র বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে চোরাচালান হয়ে ভারতে যাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব অটুট রেখেই সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। একই সঙ্গে একইভাবে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সমস্যারও সমাধান করেছে। তিনি বলেন, নিজেরা করতে পারবে না। আবার অন্যরা করতে গেলে শর্ত দেবে, তা হয় না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা প্রশংসিত। যদিও অনেকেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গৃহীত আমাদের অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে সমালোচনা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশই পৃথিবীতে একমাত্র দেশ, যারা জঙ্গিদের অ্যাকশনের আগেই বহু জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে পুলিশ অফিসার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি (পিওএইচএস) প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পুলিশ কর্মকর্তাদের আবাসনের চিন্তা দূর হবে। শহরের ওপর চাপ কমাতে ঢাকার আশপাশে, বিভাগীয় ও জেলা শহরে এ ধরনের আরও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। পুলিশকে আবাসন প্রকল্প গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশ অফিসার্স সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দসহ ২৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে আইজিপি স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এরপর পুলিশ অফিসার্স সমবায় সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও এআইজি ডেভেলপমেন্ট গাজী মোজাম্মেল হক পিওএইচএস প্রকল্পের এক পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন। প্রধানমন্ত্রী আবাসক প্রকল্পের একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন। এরপর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে আইজিপি পর্যন্ত ২৩ জনকে বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করে (প্রতীকী হস্তান্তর) কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির কর্মকর্তরা জানান, রাজধানীর খিলক্ষেতের বড়ুরা এলাকার ৩০০ ফুট রাস্তার পাশে ১৪৩ একর জমির ওপর বাস্তবায়িত হচ্ছে পিওএইচএস প্রকল্প। এ প্রকল্পে এএসপি থেকে আইজিপি পর্যন্ত ১১০০ কর্মকর্তাকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের আবাসিক এলাকাটিতে ৫৭ শতাংশই হবে আবাসিক ভবন। ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ জায়গায় থাকবে রাস্তা ও ফুটপাত। এ ছাড়া ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ জায়গায় পাঁচটি স্কুল, চারটি কলেজসহ সামাজিক সুবিধাগুলো থাকবে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রকল্পটির একপাশে দেশের সবচেয়ে অভিজাত আবাসিক এলাকা বসুন্ধরা। কাছে পূর্বাচল উপশহর এলাকা। পিওএইচএস বাস্তাবায়ন করা হলে সরকারের পরিকল্পিত নগরায়ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। পুলিশের কর্মকর্তাদের নিরাপদ আবাসনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটবে। এ প্রকল্পে বর্তমানে সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। ২০০৭ সালের আগে যারা বিসিএস কর্মকর্তা তারাই প্লট বরাদ্দ পাচ্ছেন সেখানে। ২০০৭ সালের পর থেকে পুলিশে যোগদান করা এক হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা এ সুবিধা পাবেন না। এ ছাড়া পরিদর্শক ও উপ-পরিদর্শকদের (এসআই) এখনই এ সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না। গতকাল পুলিশ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব বিষয় তুলে ধরলে তিনি ঢাকার বাইরে আরও আবাসিক প্রকল্প তৈরির নির্দেশনা দেন। পুলিশের বহুমুখী সমবায় সমিতির সংশ্লিষ্টরাও তাদের আরও প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনার কথা জানান।

সর্বশেষ খবর