শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রতিরক্ষায় সমঝোতা স্মারক

দিল্লির সড়কে সড়কে হাসিনা-মোদির ছবি ব্যানার

ঋতুপর্ণা রায়, নয়াদিল্লি

প্রতিরক্ষায় সমঝোতা স্মারক

নয়াদিল্লির রাজপথে শোভা পাচ্ছে এ রকম অনেক বিলবোর্ড

দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ঘণ্টা বাজিয়ে ‘প্রতিবেশী’কে সতর্ক করে নয় বরঞ্চ সমঝোতা স্মারক-মেমোরেন্ডাম অব (মউ) সই করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বড় মাপের সমঝোতার পথে হাঁটতে চলেছে ভারত। শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুটি সমঝোতা স্মারকপত্র সই হবে। বাংলাদেশকে সমরাস্ত্র কেনার জন্য দেওয়া হবে ৫০ কোটি ডলার ঋণ। সব মিলিয়ে এরপর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভূকৌশলগত রাজনীতিতে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছানো যাবে বলে আশা করছে নয়াদিল্লি। এটা ঘটনা যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বেইজিং-ঢাকা অক্ষ রক্তচাপ বাড়িয়েছে নয়াদিল্লির। অনেক আগেই বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সামরিক সহযোগিতা নিয়ে চুক্তি হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকায় ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর নজরদারি এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দখলদারি রাখতে বেইজিংয়ের সক্রিয়তা বাড়ছে। ঢাকাকে পাশে পেতেও ক্রমশ প্রভাব বাড়াচ্ছে চীন। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিকাঠামোতে অকাতরে অর্থ দিচ্ছে বেইজিং। গত দুই বছরে বাংলাদেশকে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার অর্থ সাহায্য করেছে চীন, যার মধ্যে অনেকটাই সামরিক ক্ষেত্রে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে প্রতিরক্ষা নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই-এর বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের ঘরোয়া রাজনীতিতে ভারতের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে বিরোধিতার ঝড় উঠেছে। সে দেশের বিএনপি-জামায়াত জোট এবং নাগরিক সমাজের একাংশ এ কথাও বলছে যে, অর্থের বিনিময়ে নিরাপত্তাকেও ভারতের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে হাসিনা সরকার। আর তাই এ ব্যাপারে কিছুটা সতর্কতার সঙ্গে নিচু তারে বিষয়টিকে বাঁধার পরিকল্পনা করা হয়েছে। লক্ষ্য, প্রথমত, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারকে চাপের মধ্যে না ফেলা। দুই, চীনের কাছেও খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে কোনো বার্তা না দেওয়া। পাশাপাশি ঘরোয়া সমালোচনার প্রতিবাদে হাসিনা জানিয়েছেন যে তিনি ভারতের সঙ্গে যখন চুক্তি করবেন সেখানে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখেই করবেন। দেশবাসীর কাছে কিছুই গোপন রাখবেন না। তাই বেণি না ভিজিয়ে স্নান করার একটি কৌশল হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ সমঝোতা স্মারক সই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

বিদেশ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, মোট দুটি সমঝোতাপত্রে সই হবে। এক, দুই দেশের মধ্যে চলতি সামরিক সহযোগিতাগুলোকে একটি ছাতার তলায় নিয়ে এসে একটি সামগ্রিক ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরি করা। যার মধ্যে রয়েছে সাবমেরিন-প্রশিক্ষণ, তথ্য সহযোগিতা, উপকূলরক্ষীদের মধ্যে সহযোগিতা, সেনাপ্রধান পর্যায়ে আদানপ্রদানের মতো বিষয়গুলো। দুই, ভারত থেকে সমরাস্ত্র এবং সামরিক প্রযুক্তি কেনার জন্য বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হবে।

পাশাপাশি তিস্তা নিয়েও পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ যাতে অক্ষুণ্ন রেখে চুক্তি করা যায় তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজে আলোচনা হবে নরেন্দ্র মোদি ও মমতা ব্যানার্জির মধ্যে। তিস্তা নিয়ে মমতার বক্তব্য, সিকিমে মুড়িমুড়কির মতো অসংখ্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি ৮টি বড় বাঁধ তৈরি হয়েছে। সিকিম এভাবে এলোপাতাড়ি বাঁধ দেওয়ায়, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় জলের সংকট হচ্ছে। আর বর্ষায় সিকিম বাঁধ বাঁচাতে জল ছাড়লে ভেসে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিঙের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন মমতা। প্রধানমন্ত্রী, সুষমা, রাজনাথকেও জানিয়েছিলেন। রাজ্য সরকারের অভিযোগ, ঢাকার সেই সফরের পরে এক বছরেরও বেশি কেটে গেলেও সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে একসঙ্গে বসিয়ে তিস্তা নিয়ে কোনো বৈঠক করেননি মোদি। সিকিমকেও কেন্দ্রের তরফে বাঁধ নিয়ে সতর্ক করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় জলসংকটের জন্য উত্তরবঙ্গে জলের সমস্যা যাতে না হয়, সে জন্য ছোট ছোট জলাধার গড়ার কথা বলা হয়েছিল। মমতা নিযুক্ত নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র কমিটি এই প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু এখনো কেন্দ্র এ নিয়ে উদ্যোগী হয়নি। উত্তরবঙ্গে বিকল্প জলপ্রকল্পের জন্য কোনো বিশেষ আর্থিক প্যাকেজও বরাদ্দও হয়নি।

সূত্র জানায়, এই বিষয়গুলো নিয়ে ৮ এবং ৯ এপ্রিল কথা হবে কেন্দ্র, রাজ্য এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে।

সর্বশেষ খবর