শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঢাকায় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

যেখানেই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সেখানেই প্রতিরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

যেখানেই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সেখানেই প্রতিরোধ

ঢাকায় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে গতকাল পবিত্র কাবা শরীফ মসজিদুল হারামের ইমাম শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসির আল খুযাইম এবং মসজিদে নববীর সিনিয়র ইমাম ড. আবদুল মহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিম —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ করে বলেছেন, যেখানেই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের উত্থান দেখবেন সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। জঙ্গিবাদের তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা করবেন। ইসলাম পবিত্র ও শান্তির ধর্ম, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই, এই সঠিক বার্তাটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। তিনি বলেন, ইসলাম মানুষ হত্যার দীক্ষা দেয় না। ইসলাম নিয়ে কেউ কটূক্তি, হেয় বা কলুষিত করলে সহ্য করব না। আমি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে বিশ্বের যেখানেই যাই আমার সামনে যখন আমাদের ইসলাম ধর্মের সঙ্গে জঙ্গিবাদ শব্দ ব্যবহার করে আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করি। আমি তাদের স্পষ্টভাবে বলে দিই কয়েকটা মানুষের জন্য আমাদের ধর্মপ্রাণ মানুষকে এভাবে হেয় করা যাবে না। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল ওলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসজিদুন নববীর ইমাম ও খতিব শায়খ ড. আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাশিম এবং মসজিদুল হারাম ও মসজিদুন নববীর ভাইস চেয়ারম্যান শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসের আল খোবাইনের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, মসজিদুন নববীর ইমাম ও খতিব শায়খ ড. আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাশিম, মসজিদুল হারাম ও মসজিদুন নববীর ভাইস চেয়ারম্যান শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসের আল খোবাইন, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রমুখ। সম্মেলনে সারা দেশ থেকে হাজার হাজার ওলামা-মাশায়েখের উপস্থিতি ঘটে। সকাল থেকেই আলেম-ওলামারা সম্মেলনস্থলে এসে পৌঁছেন। বিকাল ৩টার আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় ভরে যায়। উদ্যানের ভিতরে ও চারপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যাতে ইসলাম ধর্মকে হেয় করে কথা বলতে না পারে এর জন্য আমাদের সোচ্চার হতে হবে। যারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে তাদের ধর্ম নেই, দেশ নেই, সীমানা নেই, জঙ্গিবাদটাই তাদের ধর্ম। তারা ভুল পথে যাচ্ছে এটা আমাদের পবিত্র ইসলামের কথা। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আস সৌদের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনের বিরুদ্ধে যে কোনো পদক্ষেপে বাংলাদেশ সৌদি আরবের পাশে আছে এবং একসঙ্গে কাজ করবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি আজকে একটা মহল থেকে আমাদের পবিত্র ধর্মকে কলুষিত করার জন্য চক্রান্ত চলছে। যদি প্রশ্ন করি, এই যে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ তাতে লাভবান হয় কারা? যারা অস্ত্র তৈরি করে, বিক্রি করে তারা লাভবান হয়। কিন্তু কার লাভের জন্য মুসলমান মুসলমানদের রক্ত নিচ্ছে, হত্যা করছে। মুসলমানদের রক্তের বিনিময়ে অন্যরা লাভবান হচ্ছে, এটা কী ধরনের কথা। সৌদি বাদশাহ যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেখান থেকে যাতে পবিত্র ধর্ম ইসলামের শান্তি আসে, তাদের মধ্যে যেন ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়, তারা যেন শান্তির পথে ফিরে আসে সেজন্য আমরা আগে বলেছি, তার পাশে আছি এবং থাকব। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ আমাদের দেশের সমস্যা নয়। এটা সারা বিশ্বের সমস্যা। আমি সৌদি বাদশাহকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন বিশ্বের যারা শান্তিতে বিশ্বাস করে তাদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সন্ত্রাস দমনে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। এটাই বলতে চাই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনের জন্য বাংলাদেশ সব সময় সৌদি বাদশাহর পাশে থাকবে এবং এক হয়ে কাজ করবে। যাতে আমাদের পবিত্র ধর্মের সম্মান কেউ ক্ষুণ্ন করতে না পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে সৌদি আরবের যে দুজন মেহমান এসেছেন তাদের বক্তব্য ও আগমনে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে উজ্জীবিত করবে, দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত করবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যে অবস্থান তা আরও সুদৃঢ় করবে মেহমানদের বক্তব্যে। আপনারা যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন তারাও শুনে গেলেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তারা যে মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন সমাজের ওলামা-মাশায়েখ ও অভিভাবকসহ সবাই ইসলাম যে পবিত্র ধর্ম, শান্তির ধর্ম এই বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেবেন। তিনি বলেন, মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই হয়ে বসবাস করবে, কিন্তু এটা কেমন কথা— একজন মুসলমান আরেকজন নিরীহ মুসলমানকে বোমা মেরে হত্যা করে। তারা নাকি হিসাব নেয় জান্নাতে চলে যাবে। নিরীহ মুসলমানকে হত্যা করলে জান্নাতে নয়, জাহান্নামে যেতে হতে পারে। মসজিদুন নববীর ইমাম ও খতিব শায়খ ড. আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাশিম বলেন, ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ঠাঁই নেই। যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে লিপ্ত তাদের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, এই মহাসম্মেলন ইসলামের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে। এটি সৌদি আরব ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উষ্ণ আতিথেয়তায় আমরা সন্তুষ্ট। আমরা পৃথিবীর যে কোনো এলাকার হই না কেন, আমাদের বড় পরিচয় হলো মুসলমান। কোনো দেশ বা সীমানা আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। এক মুসলমান আরেক মুসলমানের সম্পর্ক আপন ভাইয়ের মতো। মসজিদুল হারাম ও মসজিদুন নববীর ভাইস চেয়ারম্যান শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসের আল খোবাইন বলেন, ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে লিপ্ত তাদের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নেই।

গ্যাস বিক্রির চুক্তি করে ক্ষমতায় গিয়েছিল  বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিবেশী দেশটির কাছে গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জিততে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলো। আর সেই ক্ষমতায় আসার পেছনে বেশ ভালো একটা চুক্তি ছিল— বাংলাদেশের সম্পদ গ্যাস। এই সম্পদ গ্যাস বিক্রি করতে চাইল আমেরিকা, কিনবে ভারত; আমেরিকান কোম্পানি গ্যাস তুলবে, ভারতের কাছে বিক্রি করবে। ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গতকাল ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

বক্তব্যে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে সফরে আসা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সৌজন্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমানের সরকারি বাসভবন যমুনায় মধ্যাহ্নভোজের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই আলোচনা যখন একপর্যায়ে শেষ হলো, আমরা চলে এলাম। বিএনপির নেতারা ওখানে থেকে গেলেন। তারপর, তাদের মধ্যে গ্যাস বিক্রির চুক্তি করেই ২০০১ এ তারা ক্ষমতায় এলো। ভোটের দিক থেকে আওয়ামী লীগ কিন্তু বেশি ভোট পেয়েছে, কিন্তু সিট পেল না। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব তার কাছেই দিয়েছিলেন জানিয়ে নিজেকে ওই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তখন আমি বলেছিলাম, আমাদের দেশে কত গ্যাস আছে, আমরা এখনো জানি না। আমাদের দেশের মাত্র সামান্য কয়েক পার্সেন্ট মানুষ এই গ্যাসের সুবিধাটা পাচ্ছে। দেশের সম্পদের মালিক জনগণ। আগে জনগণের চাহিদা আমাকে পূরণ করতে হবে। চাহিদা পূরণ করার পর ৫০ বছরের মজুদ রাখব ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য। তার অতিরিক্ত গ্যাস যদি থাকে, তখন আমরা তা বিক্রি করতে পারি। তার আগে বিক্রি করতে পারি না।  ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সভাপতি এ টি এম আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মহাসচিব আবদুর রশীদ খান।

সর্বশেষ খবর