শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিভিন্ন দেশে এমপি নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে আইপিইউ

আহমদ সেলিম রেজা

বিশ্বের ৪২টি দেশের পার্লামেন্টের সাড়ে চার শতাধিক সদস্য নিজ নিজ সরকারের হাতে হয়রানি ও নির্যাতনে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে যে অভিযোগ তুলেছেন ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) তার তদন্ত করে দেখছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়ে মত প্রকাশের কারণে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে, আটকাদেশও দেওয়া হয়েছে।

আইপিইউর প্রতিবেদন অনুযায়ী মানবাধিকার রক্ষায় উচ্চকিত হওয়ায় ইউরোপ-আমেরিকার ২১৮ জন আইন প্রণেতার অধিকার হরণ করা হয়েছে। আমেরিকা মহাদেশের ১৫৫ জন, এশিয়ার ১১০ জন, আফ্রিকা মহাদেশের ৮৯ জন ও ইউরোপের ৬৩ জন এমপি হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার। একক দেশ হিসেবে তুরস্কের এমন ৬০টি অভিযোগের মধ্যে আইপিইউ ৫৫টি অভিযোগ আমলে নিয়েছে। ভুক্তভোগীরা অধিকাংশই তুরস্কের বিরোধী দলের সংসদ সদস্য। ২০১৬ সালে পাওয়া এসব অভিযোগের তদন্ত ইতিমধ্যে শুরুও হয়েছে। তবে শুধু তুরস্ক নয়, বিশ্বের নানা প্রান্তে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে অভিযোগ দায়েরকারী এসব এমপির অধিকাংশই নিজ নিজ দেশে বিরোধী দলের সদস্য। আইপিইউর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিরোধী দলের এই এমপির সংখ্যা ৩৩৬ জন। এ ছাড়া অভিযোগ দায়েরকারীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সরকারি দলের সদস্য রয়েছেন ১১২ জন এবং ১১ জন স্বতন্ত্র এমপিও রয়েছেন। আইপিইউর বার্ষিক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্যচিত্র ও প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। আইপিইউর কমিটি অন হিউম্যান রাইটস অব পার্লামেন্টারিয়ানসের সদস্যরা এর মধ্যে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমে পড়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে ২২৭ এমপির মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে আইপিইউ উদ্বেগ প্রকাশ করে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের কাছে এমপিদের বিরুদ্ধে চলমান হয়রানিমূলক মামলা বন্ধের অনুরোধ জানায়। ঢাকায় সদ্য সমাপ্ত আইপিইউর ১৩৬তম অ্যাসেম্বলিতে এ বিষয়ে গৃহীত এক প্রস্তাবে এমপিদের মানবাধিকার রক্ষায় সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

‘পরমাণুমুক্ত দেশ’ চায় আইপিইউ : পরমাণু শক্তি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা বন্ধ করে বিশ্বের বৈষম্য কমাতে দারিদ্র্য দূরীকরণে নিজেদের সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর জন্য বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আইপিইউ চায় পরমাণুমুক্ত অঞ্চলের পরিবর্তে ‘পরমাণুমুক্ত দেশ’। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জাতিসংঘের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে আইপিইউ অ্যাসেম্বলির পার্শ্ব ইভেন্ট হিসেবে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠক থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। ঢাকায় ১৩৬তম ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন-আইপিইউ   শেষে গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

 ‘পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ এবং নিরস্ত্রীকরণে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা’ শীর্ষক এ বৈঠকের আয়োজন করে ‘পার্লামেন্টস ফর নিউক্লিয়ার নন- প্রোলিফারেশন অ্যান্ড ডিসআর্মামেন্ট (পিএনএনডি)। আইপিইউর সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পিএনএনডি প্রধান মনি শংকর আয়ারসহ ব্রিটেন, বাংলাদেশ, ভারত, জাপান, নিউজিল্যান্ড, নেপাল ও ভুটানের এমপি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পিএনএনডির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি মঈন উদ্দীন খান বাদল। বৈঠক সঞ্চালনা করেন ফোরামের গ্লোবাল কোঅর্ডিনেটর এলাইন ওয়্যার। 

সাবের হোসেন চৌধুরী পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ এবং নিরস্ত্রীকরণে আইপিইউর ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, আইপিইউ সব সময়ই বিশ্বশান্তি, গণতন্ত্র ও বৈষম্যমুক্ত বিশ্ব গড়ার কথা বলে আসছে। বাংলাদেশও সব সময় শান্তির পক্ষে। তাই পরমাণুমুক্ত অঞ্চলের পরিবর্তে আমরা চাই ‘পরমাণুমুক্ত দেশ’ ।

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমরণ নিরস্ত্রীকরণ ও শান্তির পক্ষে ছিলেন। এ লক্ষ্য অর্জনে বিশ্বের সব দেশকে এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর