শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

নজরদারিতে ৫০ শিক্ষক

থামছে না প্রশ্ন ফাঁস

সাখাওয়াত কাওসার

প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের অর্ধশতাধিক সদস্যকে খুঁজছে পুলিশ। একাধিক সিন্ডিকেটের এই অর্ধশতাধিক সদস্যের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারের শিক্ষক এমনকি সরকারি কর্মকর্তাও। এরই মধ্যে সন্দেহভাজন কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তথ্য যাচাই বাছাই শেষে পর্যায়ক্রমে তাদের গ্রেফতার করা হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাজী বিল্লাত আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং সাভারের গাজীরচক এএম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্র ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষা উপ-নিয়ন্ত্রক অদ্বৈত কুমার রায় জানান, আগামী বছর থেকে এসব কেন্দ্রে আর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। এ ছাড়া প্রশ্নফাঁস এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, সাধারণত তিনটি পর্যায়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যারা থাকেন, তাদের কারও মাধ্যমে। দ্বিতীয় পর্যায় হলো মুদ্রণ স্থান অর্থাৎ বিজি প্রেস থেকে। আর তৃতীয় পর্যায় হলো, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পরীক্ষার কেন্দ্র উপ-কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র সরবরাহের সময়ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযোগ পাওয়া এমন সব সরকারি কর্মকর্তাকে আরও যাচাই-বাছাইয়ের পর যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই গ্রেফতার করা হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রাথমিক তদন্তে এরই মধ্যে প্রশ্নফাঁস চক্রের অন্তত ৫০ জন শিক্ষকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এসব শিক্ষকরা ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২৪টি কোচিং সেন্টারে কর্মরত। সেই সঙ্গে এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিজি প্রেসের কর্মীদের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের কতিপয় কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে। রয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদমর্যাদার কর্মকর্তাও। প্রশ্নফাঁস সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাভার উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাহরিয়ার মেন্দিস ও সৃষ্টি শিক্ষা পরিবার নামে একটি কোচিং সেন্টারের চেয়ারম্যান ড. শফিকুল ইসলাম রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে জড়িত থাকার বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তথ্যের যাচাই-বাছাই চলছে। সূত্র আরও বলছে, সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সম্প্রতি প্রশ্নফাঁস চক্রের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন প্রিন্সিপালসহ আরও ১১জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে আশুলিয়ার এ এম গাজীর চক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো, মোজাফ্ফর হোসেনসহ একই কলেজের শিক্ষক আতিকুল ইসলাম, অফিস সহকারী আবদুল মজিদ ও ছাত্র আরিফ হোসেন আকাশ ওরফে আদু ভাই, রাকিব হোসেন সাইদুর রহমান ও তানভীর হোসেন এবং টঙ্গীর কোনিয়া কোচিং সেন্টারের শিক্ষক হামিদুর রহমান ওরফে তুহিন ও উত্তরার সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণিত শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। প্রিন্সিপালসহ গ্রেফতারকৃতরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ‘স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি’ দিয়েছেন। এ ছাড়াও সন্দেহভাজন অনেক শিক্ষককে মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে এনে ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কয়েকটি চিহ্নিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ডিবি কার্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে। ডিবির তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাজধানীর মতিঝিল কলোনি হাই স্কুল, কমলাপুর রেলওয়ে স্কুল অ্যন্ড কলেজ, মনিপুর স্কুল অ্যন্ড কলেজ, মানিকনগর আইডিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ ও শাহজাহানপুর রেলওয়ে হাইস্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ ছাড়া ঢাকার বাইরের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাভার ও টাঙ্গাইলের স্কুল অ্যান্ড কলেজ অন্যতম। কোচিং সেন্টারগুলোর মধ্যে রয়েছে, গাজীপুরের কোনিয়া ও অভিনব, মানিকগঞ্জের জয় একাডেমি এবং জ্ঞানকোষ একাডেমিসহ কয়েকটি কোচিং সেন্টার গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া সৃষ্টি শিক্ষা পরিবারের সারা দেশের ১৫টি শাখাসহ খুলনা, জামালপুর, আশুলিয়া, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও টাঙ্গাইলসহ ঢাকা থেকে পরিচালিত কোচিং সেন্টারগুলোর শাখা অফিসগুলোই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ৩১ মার্চ বিকালে ডিবি (উত্তর) বিভাগের একটি টিম মগবাজার নয়াটোলায় অভিযান চালিয়ে শহিদুল ইসলাম, গোলাম সরোয়ার সাজিদকে গ্রেফতার করা হয়। এরা মোবাইল, আইটি ডিভাইস ব্যবহার করে বিভিন্ন নামে ফেসবুক ফেক আইডি, ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ, হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকের কাছ থেকে ভুয়া প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে অবৈধভাবে অর্থ সংগ্রহ করে আসছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর