রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

নতুন যাত্রায় উন্নত দক্ষিণ এশিয়া

---শেখ হাসিনা

কূটনৈতিক ও নিজস্ব প্রতিবেদক, নয়াদিল্লি থেকে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার যে নবযাত্রা শুরু হয়েছে এতে করে শুধু দুই দেশের জনগণই না, পুরো দক্ষিণ এশিয়াই লাভবান ও উন্নত হবে। গতকাল দুপুরে নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পাশাপাশি অপরাধ কার্যক্রমমুক্ত এবং শান্তিপূর্ণ সীমান্ত গড়ে তোলার ব্যাপারে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। দুই প্রধানমন্ত্রী তিস্তার মতো অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পদ্মা-গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প এবং আন্তসীমান্ত নদীর অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনাসহ পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইস্যুতে আলোচনা করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি দ্রুততার সঙ্গে এসব ইস্যুর সমাধানে আমরা ভারতের সমর্থন পাব। তিনি বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় চমৎকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে তাদের এই বৈঠককে ফলপ্রসূ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, পারস্পরিক উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের ব্যাপারে আমাদের বোঝাপড়া আরও এগিয়ে নিতে আমাদের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের সব দিক নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ এবং বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অমূল্য অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, এ জন্য আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, তার বর্তমান দিল্লি সফরকালে ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শহীদ সদস্যদের সম্মান জানাতে পেরে তিনি আনন্দিত। একাত্তরের গণহত্যার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় নয়াদিল্লি সমর্থন দিতে সম্মত হওয়ায় তিনি এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি একমত হয়েছেন যে, এ দুটি দেশের উন্নয়নে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই আমরা খুলনা-কলকাতা রুটে নতুন যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস, পরীক্ষামূলকভাবে খুলনা-কলকাতা দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং মালামাল পরিবহনের জন্য বিরল-রাধিকাপুর রেলপথটি পুনরায় চালু করতে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে ভালো পারস্পরিক সহযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ উদ্বোধন করেছি এবং নেপাল ও ভুটান থেকে ক্রসবর্ডার বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে আরও বেশকিছু উদ্যোগ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক ঘাটতি বাড়তে থাকার বিষয়টি মেনে নিয়ে এ বিষয়ে তার সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়েও আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা পাট রপ্তানির ক্ষেত্রে ‘অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক’ আরোপের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার বিষয়েও আলোচনা করে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমতা আনয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশের বিভিন্ন নির্দিষ্ট স্থানে ভারতের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করারও উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য সব বিষয়ে আলোচনা করেছি। দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আন্তব্যক্তিক যোগাযোগই বড় শক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে কারণেই আমরা আমাদের আগরতলা ভিসা অফিসকে যুগোপযোগী করে সম্প্রতি সহকারী হাইকমিশন এবং গৌহাটিতে আরেকটি নতুন সহকারী হাইকমিশন খুলেছি। ভারতও বাংলাদেশে আরও অনেকগুলো ভারতীয় ভিসা অ্যাপলিকেশন সেন্টার (আইভিএসি) খুলেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলো আমাদের মধ্যকার পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিতকে সম্প্রসারিত করছে। শেখ হাসিনা বলেন, আজ দুটি দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ফলে সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক জ্বালানির ব্যবহার, আউটার স্পেস, যোগাযোগ প্রযুক্তি, গণমাধ্যম প্রভৃতি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ইতিমধ্যেই প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করেছে এবং খুব দ্রুতই শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে পাওয়ার হাউস হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এখন একটি সন্তোষজনক হারে এগোচ্ছে, ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তার গতিশীল নেতৃত্ব এবং উদ্ভাবনী চিন্তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এর ফলে যে ভারতই শুধু দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে তা নয় বরং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রেও যোগ করছে নতুন মাত্রা। একটি সমন্বিত এবং টেকসই সম্পর্ক সৃষ্টির আমাদের যে লক্ষ্য তা আমাদের যৌথ ঘোষণায় প্রতিফলিত হয়েছে। এখন আমাদের এই ঘোষণাকে কাজে লাগিয়ে এর একটি শক্ত ভিত প্রদান করতে হবে।

গণহত্যা দিবসে ভারতের সমর্থন : ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ পালনে ভারতের সমর্থন আদায় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শীর্ষ বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে এই সমর্থন পাওয়ার কথা জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অমূল্য অবদানের কারণে আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। ১৯৭১ এ সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আমাদের উদ্যোগে ভারতের সহায়তা চেয়েছি আমরা। ভারত আমাদের সহায়তা করতে রাজি হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর