রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

উন্নয়নে সব সময় পাশে ভারত

---নরেন্দ্র মোদি

কূটনৈতিক ও নিজস্ব প্রতিবেদক, নয়াদিল্লি থেকে

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়নে ভারত সব সময় বন্ধুর মতো পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ‘ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। এ দেশ সব সময় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে। দুই দেশের সহযোগিতার সুফল অবশ্যই আমাদের জনগণ পাবে।’ গতকাল হায়দরাবাদ হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন নরেন্দ্র মোদি। অবশ্য গতকাল বিকালে আরেক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। মোদি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ সীমানা রয়েছে। ২০১৫ সালের জুন মাসে ঢাকা সফরের সময় স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং এ চুক্তি এখন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।’ তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এ অঞ্চলের জন্য এখন একটি হুমকি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে তিনি ঢাকার অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, ভারত সন্ত্রাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগকে সমর্থন জানায়। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আমাদের অংশীদারের বিষয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আমরা আমাদের সহযোগিতার বিষয়ে একমত হয়েছি এবং আমাদের এ সহযোগিতা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতেও সম্মত হয়েছি।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তুলতে চায়। বিশেষ করে কিছু উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, যেখানে দুই দেশের যুবসমাজের সম্পৃক্ততা থাকবে। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক, তথ্যপ্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ গবেষণা ও বেসামরিক পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতেও তারা আগ্রহী। তার দেশ দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা সৃষ্টি করতে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত সামগ্রী ক্রয়ে সহায়তায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ঋণ ঘোষণা করতে পেরে আমি খুশি হয়েছি। বাংলাদেশের প্রয়োজন ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা এটি বাস্তবায়ন করব।’ তিনি বলেন, বৈঠকে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় এ অঞ্চলের জনগণের শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য তাদের প্রয়াস অব্যাহত রাখতে সম্মত হন। মোদি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে আমাদের জনগণকে রক্ষা করতে একসঙ্গে কাজ করব। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিস্তার শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের জন্যই হুমকি সৃষ্টি করছে না, এ গোটা অঞ্চলের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।’

আত্মত্যাগেই বাংলাদেশের জন্ম : বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছিলেন যে ভারতীয় সেনারা, তাদের প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো ও পরিবারকে সহায়তা দিতে নয়াদিল্লির মানেকশ সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মোদি বলেন, বাংলাদেশের জন্মের গল্পটিই অনেক আত্মত্যাগের গল্প। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি বাড়িতে (৩২ নম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার আটকা পড়ে যায়। তখন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর অশোক তাদের উদ্ধার করেন। প্রতিবেশী বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, এ দেশটির জিডিপি তার জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ৩১ গুণ বেড়েছে, যা অনন্যসাধারণ এক অগ্রগতি। তিনি বলেন, ‘ভারত তার প্রতিবেশীদের নিয়েই উন্নত হতে চায়, এগিয়ে যেতে চায়। প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব সব সময়ই আমাদের কাছে বড় কিছু।’ এ সম্পর্ক সরকারে-সরকারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি নেতৃত্বের সঙ্গে নেতৃত্বের নয়, এ সম্পর্ক দুই দেশের জনগণের সঙ্গে জনগণের। আর আমরা কোনো সুসময়ের বন্ধুমাত্র নই। আমি যেমন আমার দেশের মানুষের ভালো চাই, তেমনি বাংলাদেশসহ সব প্রতিবেশী দেশের মানুষেরও সুন্দর জীবন কামনা করি।’ তিনি বলেন, যে স্বপ্ন তিনি ভারতের জন্য দেখেন, সেই শুভ কামনা বাংলাদেশের জন্যও। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি ছিল গত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলোর একটি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারতীয় সৈনিকরা কাজ করেছেন। তাদের আজ সম্মাননা জানানো হচ্ছে, যা একটি মহৎ উদ্যোগ। মোদি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাকি থাকা কাজ করছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার (শেখ মুজিবুর রহমান) প্রতিটি সিদ্ধান্ত ছিল জনতার জন্য। আজও বাংলাদেশের উন্নতির ধারা প্রশস্ত হচ্ছে তারই সিদ্ধান্তের ওপর ভর করে। তিনি বলেন, সোনার বাংলার স্বপ্ন সত্যি করতে বঙ্গবন্ধু কাজ করেছেন। তার মেয়ে আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সেটি তিনিই এগিয়ে নিচ্ছেন। এ ছাড়া জীবনের যে অবস্থা থেকে নিজেকে উত্তরণ করেছেন শেখ হাসিনা, দেশকে উত্তরণ করিয়েছেন, উন্নতির ধারায় নিয়েছেন, এ সাহস সবার নেই। পরিবারের ১৬ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এটা কল্পনা করা যায় না। এর পরও তিনি দেশের জন্য এগিয়ে এসে কাজ করছেন। তার চিন্তাই বাংলাদেশের প্রগতি ও উন্নতির। এ সময় তিনি বাংলাদেশের নানামাত্রিক উন্নয়ন তুলে ধরেন এবং প্রশংসা করেন। মোদি বলেন, ‘আমরা চাই না উন্নতি শুধু শত কোটি ভারতীয়র হোক। চাই প্রতিবেশীদেরও উন্নতি হোক। সবাই মিলে একত্রে কাজ করতে চাই। আমরা সুখ-দুঃখের সাথী। যে স্বপ্ন ভারতের জন্য দেখি, সেই শুভ কামনা বাংলাদেশের জন্যও করি।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর