রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

আর অপেক্ষা করতে চাই না তিস্তা নিয়ে

জিন্নাতুন নূর

আর অপেক্ষা করতে চাই না তিস্তা নিয়ে

হুমায়ূন কবির

ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এবার তার সফরে যে সম্মান দেখিয়েছে তা উল্লেখযোগ্য। প্রতিবেশী দেশটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে তার সর্বোচ্চ সম্মানই দেখিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, যা উল্লেখযোগ্য বিষয়। তবে ডিফেন্স কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক ও সাইবার নিরাপত্তাসহ তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে চুক্তি ছাড়া ভারতের সঙ্গে বাকি চুক্তিগুলোর অধিকাংশই চলমান সহযোগিতার অংশ। আমাদের প্রত্যাশা, তিস্তা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষরিত হোক। এ নিয়ে আমরা আর অপেক্ষা করতে চাই না। তবে আশার কথা বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে আমাদের যে প্রত্যাশা, তার বাস্তবায়ন শুরু হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। হুমায়ূন কবির বলেন, আনুষ্ঠানিকতায় শিষ্টাচারের দিক দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়েছেন। তিনি প্রথাগত প্রটোকলের বাইরে গিয়ে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনাও রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনে থেকেছেন। দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এসব দিক বিবেচনা করলে বলা যায় যে, শেখ হাসিনাকে যে সম্মান ভারত সরকার দেখিয়েছে তা উল্লেখযোগ্য। আর বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের ভালো লাগার মতো বিষয়। তিনি বলেন, ডিফেন্স কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক ও সাইবার নিরাপত্তাসহ তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে চুক্তি ছাড়া অন্য চুক্তিগুলোর অধিকাংশই চলমান সহযোগিতার সঙ্গে জড়িত। যেমন কানেকটিভিটি ও জ্বালানি খাতের চুক্তিগুলো নিয়ে ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এবারের সফরে মাত্র কয়েকটি নতুন ইস্যু যুক্ত হয়েছে। হুমায়ূন কবির বলেন, তিস্তা ও অন্যান্য নদীর পানিবণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে এবারও আমরা আশাবাদের কথা শুনেছি। আমরা এ বিষয়ে আশাবাদী হতে চাই। আবার একই সঙ্গে এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আমরা দ্রুত নিষ্পত্তিও চাই। তিনি বলেন, তিস্তা ছাড়াও গঙ্গা ব্যারাজসহ ৫২টি নদী বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। আমরা দেশটির সঙ্গে সামগ্রিক পানিবণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে আশাবাদের কথা শুনতে চাই। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, তিস্তা ছাড়াও বাংলাদেশ, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় করার বিষয়ে আগ্রহী। বাংলাদেশের জন্য ভারতের বাজার উন্মুক্ত হওয়ার পরও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারতের বাজার থেকে পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছেন না। ভারতের বাজারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সমৃদ্ধি চাইলে এ বিষয়ে অগ্রগতি ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা আছেন। আমরা আশা করছি এই প্রতিনিধিরা ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আর বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করেই দুই দেশের সম্পর্ক গভীর করতে চায়। একই সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে দুই দেশের কতটা অগ্রগতি হয়েছে তাও আমাদের দেখতে হবে। এমনকি প্রস্তাবিত বিসিআইএন (বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও নেপাল) আঞ্চলিক অর্থনীতির কথা বলা হলেও এ বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে আমরা সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত অগ্রগতি জানতে চাই। কারণ বিষয়টির নেতৃত্ব ভারতের কাছে। তিনি বলেন, এবার দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে তার অধিকাংশেরই আগ্রহ ভারতের দিক থেকে এসেছে। বাংলাদেশকে এ ক্ষেত্রে নিজস্ব চাহিদা ও আগ্রহের বিষয়গুলো চিহ্নিত করে ভারতের সামনে তুলে ধরার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। হুমায়ূন কবির বলেন, দুই দেশের মধ্যে কী চুক্তি হয়েছে তা বিস্তারিত জানতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। আশা করছি এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছে তার প্রত্যাশাগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরতে পেরেছে। একই সঙ্গে আমি মনে করি, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে আমরা প্রত্যাশা বাস্তবায়নের পথে যাত্রা করেছি।

সর্বশেষ খবর