সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রস্তুত মুফতি হান্নানের ফাঁসির মঞ্চ

নিজস্ব প্রতিবেদক


প্রস্তুত মুফতি হান্নানের ফাঁসির মঞ্চ

ভয়ঙ্কর জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত। জল্লাদদের তালিকাও তৈরি হয়ে গেছে। গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের মঞ্চে ইতিমধ্যে ফাঁসির মহড়া সম্পন্ন হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর ফাঁসি কার্যকরে কার্যত আর কোনো বাধা নেই। এখন চূড়ান্ত আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে জেল কর্তৃপক্ষ। কাশিমপুর কারাগারে আটক নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন হরকাতুল জেহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি)-এর এই নেতার কোনো ভাবান্তর নেই। প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের বিষয়টি জানার পরও তিনি রয়েছেন স্বাভাবিক। খাবার খাচ্ছেন। কথা বলছেন কারারক্ষীদের সঙ্গে। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশ পাওয়া মাত্র রায় কার্যকর করতে বিলম্ব হবে না। তবে অপর একটি সূত্র বলেছে কাল বা পরশু ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে বলেছেন, চূড়ান্ত রায়ের পর ফাঁসি কার্যকরে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। জেল কোড অনুযায়ী (রিভিউ খারিজ আদেশের কপি হাতে পাওয়া) ২১ দিনের কমে নয় ও ২৮ দিনের ঊর্ধ্বে নয়, এই সময়ের মধ্যেই ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। আমরা সেই জন্যই অপেক্ষা করছি। আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। সব ফরমালিটি শেষ হলেই আমরা রায় কার্যকর করব। তবে কবে রায় কার্যকর হবে, তা মন্ত্রী স্পষ্ট কিছু জানাননি। গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মিজানুর রহমান জানান, ‘আমরা শুনেছি মহামান্য রাষ্ট্রপতি মুফতি হান্নানের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আমরা পাইনি। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য কারা মহাপরিদর্শকের নির্দেশক্রমে এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেলে আমরা বিধিমোতাবেক তা বাস্তবায়ন করব।’ ঢাকার সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারে মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল বিপুল এবং দেলোয়ার হোসেন রিপনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এদিকে রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারা সূত্র জানায়, মুফতি হান্নানের সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামিরা হলো শরীফ শাহেদুল বিপুল এবং দেলোয়ার হোসেন রিপন। হান্নানের সঙ্গে বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে কাশিমপুর কারাগারেই। আর রিপন রয়েছে সিলেট কারাগারে। সিলেট কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে রিপনের জন্য। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, গোপালগঞ্জে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং রমনা বটমূলে বোমা হামলাসহ মোট ১৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রমনা বটমূলে বোমা হামলার মামলাতেও বিচারিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি হান্নান ২০১৩ সাল থেকে কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তবে হাজিরা দেওয়ার জন্য এ কারাগার থেকে দেশের বিভিন্ন আদালতে নেওয়া হয়। এদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে করা প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে স্বাভাবিক অবস্থাতেই আছেন মুফতি আবদুল হান্নান। কারাগারের একটি সূত্র জানায়, তার মধ্যে ভাবান্তর নেই। দু-এক দিনের মধ্যে কোনো আত্মীয়স্বজন তার সঙ্গে দেখা করতে আসেননি। ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন। ওই মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত পাঁচ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত বছরের ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। ১৪ জুন রায় হাতে পাওয়ার পর ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি হান্নান ও বিপুল। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেন। আপিলের শুনানি শেষে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল খারিজ হয়ে যায়। গত ১৭ জানুয়ারি এ রায় প্রকাশের পর আসামিরা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। চলতি বছরের ১৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তিন জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন (রিভিউ) খারিজ করে দেন। গত ২২ মার্চ মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলকে উচ্চ আদালতের রায় পড়ে শোনানো হয়। গত ২৩ মার্চ কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের মৃত্যু পরোয়ানা আসে। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে মুফতি আবদুল হান্নান ও বিপুল প্রাণভিক্ষার আবেদন করে। রাষ্ট্রপতি আবেদন নাকচ করে দেন।

 

সর্বশেষ খবর