সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
টিআইবির প্রতিবেদন

দুই হাজারের বেশি কটূক্তি সংসদে প্রতিপক্ষকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বৈত অবস্থানের কারণে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল সংসদে তাদের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। সংস্থাটি মনে করে, সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশিত। কিন্তু বর্তমান বিরোধী দল তা করতে পারেনি। কেননা, এ দলটি একই সঙ্গে সরকারের পক্ষে ও বিপক্ষে— উভয় ভাষাতেই কথা বলে এবং কাজ করে। জাতীয় সংসদের কার্যক্রমের ওপর পরিচালিত টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদে বিভিন্ন আলোচনা পর্বে অসংসদীয় ভাষা (আক্রমণাত্মক, কটু ও অশ্লীল শব্দ) ব্যবহারে মোট সময়ের ১৫ ভাগ ব্যবহার হয়েছে। সংসদের বাইরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে দুই হাজার ১০১ বার, সংসদের ভিতরের প্রতিপক্ষকে নিয়ে ৪৩৩ বার বিভিন্ন কটূক্তি, আক্রমণাত্মক শব্দ ও অশ্লীল শব্দের ব্যবহার হয়েছে। এতে ২৭০ বিধির ছয় উপ-বিধির ব্যত্যয় ঘটেছে। দশম জাতীয় সংসদের সপ্তম থেকে ত্রয়োদশ অধিবেশনের ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করে টিআইবির পার্লামেন্ট ওয়াচ। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো চুক্তি ছাড়া সম্পাদিত সব আন্তর্জাতিক চুক্তি রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করার নির্দেশনা সংবিধানে থাকলেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে স্বাক্ষরিত ৬৯টি চুক্তি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি। অধিবেশন চলাকালে অধিবেশন কক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে স্পিকারের ভূমিকার ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিবেদনে সংসদে অধিকতর শৃঙ্খলাসহ অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারকে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এ জন্য সংসদকে আরও অধিক কার্যকর করতে ১১ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, দশম সংসদের সপ্তম থেকে ১৩তম অধিবেশনে সংসদ নেতার উপস্থিতি ছিল মোট কার্যদিবসের ৮৪ শতাংশ এবং বিরোধীদলীয় নেতার উপস্থিতি ছিল ৮৩ শতাংশ। দশম সংসদে অধিবেশনের গড় বৈঠককাল, প্রতি কার্যদিবসে সদস্যদের গড় উপস্থিতি তুলনামূলক বৃদ্ধি এবং কার্যদিবসের গড় কোরাম সংকট তুলনামূলকভাবে হ্রাস পাওয়ার মতো কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে। তবে সংসদের প্রত্যাশিত কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাহত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহের ওপর আলোচনা না হওয়ার পাশাপাশি আইন প্রণয়ন পর্বে সদস্যদের অংশগ্রহণ কম এবং বিরোধী দলের সদস্যদের মতামত ও প্রস্তাবকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইন প্রণয়নে জনমত গ্রহণের বিদ্যমান পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগের ঘাটতির ফলে জন-অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত আলোচিত হত্যাকাণ্ড, জঙ্গি অপতৎপরতা, আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে বাজেট ও রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা  বা অনির্ধারিত আলোচনায় আলোচিত হলেও জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিস পর্বে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তিন-চতুর্থাংশের বেশি কার্যদিবসে নারী সদস্যদের উপস্থিতি পুরুষ সদস্যদের তুলনায় বেশি ছিল। তবে আইন প্রণয়ন ও প্রশ্নোত্তর পর্বে নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম ছিল। তা ছাড়া সংসদীয় কমিটিতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান রয়েছে। ফলে বিধি অনুযায়ী কমিটির সভা না হওয়া, কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের সময়সীমা ও বাধ্যবাধকতা না থাকা এবং সংসদের কার্যবিবরণী ও কমিটি প্রতিবেদনসমূহের উন্মুক্ততা ও অভিগম্যতার ঘাটতি ইত্যাদি চ্যালেঞ্জসমূহ লক্ষণীয় ছিল। দশম সংসদের ৫০টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মধ্যে ৪৭টি কমিটি ৩৩৭টি সভা করেছে। এর মধ্যে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সর্বোচ্চ ২২টি সভা করেছে। কমিটির সভাপতি ও সদস্য নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রভাব এবং কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। হলফনামার তথ্যানুযায়ী ৯টি কমিটিতে সদস্যদের কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা দেখা যায় যা কার্যপ্রণালি বিধির লঙ্ঘন। স্থায়ী কমিটিসমূহের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমিটির সভায় সদস্যদের সার্বিক গড় উপস্থিতি ছিল প্রায় ৬৫ শতাংশ।

 

সর্বশেষ খবর