মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

দশ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে ১৩ চুক্তি বাংলাদেশ-ভারতের

কূটনৈতিক ও নিজস্ব প্রতিবেদক, নয়াদিল্লি থেকে

প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি-সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। গতকাল নয়াদিল্লির তাজ হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এ-সংক্রান্ত ১৩টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন দুই দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিরা।

নয়াদিল্লির তাজ হোটেলে স্বাক্ষর হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিম্নরূপ। প্রথম : ভারতের রিলায়েন্স পাওয়ার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড—বিপিডিবিকে সঙ্গে নিয়ে মেঘনাঘাটে ৭৫০ মেগাওয়াটের লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস— এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। চুক্তি অনুসারে প্রথম পর্যায়ে এখানে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। পরে ২ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে এখানে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে চুক্তির প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এখান থেকে বিদ্যুৎ বিক্রির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত আছে চুক্তিতে। দ্বিতীয় : বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবকাঠামো স্থাপনের জন্য ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করতে অর্থ দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। তৃতীয় : ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভিপার নিগাম লিমিটেড—এনভিভিএন ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড—বিপিডিবিকে আরও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেবে। চতুর্থ : নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভিপার নিগাম লিমিটেড—এনভিভিএন ও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড—বিপিডিবি। পঞ্চম : ঝাড়খণ্ডে ১৬০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের জন্য আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) ও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বিপিডিবি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড ঝাড়খণ্ড থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিতরণ করবে। ষষ্ঠ : এলএনজি টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য ভারতের পেট্রোনেট এলএনজি লিমিটেড ও পেট্রোবাংলা একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। সপ্তম : কুতুবদিয়ায় এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে রিলায়েন্স পাওয়ার ও পেট্রোবাংলা। অষ্টম : সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ভারতের অয়েল করপোরেশন লিমিটেড—ইওসিএল এবং পেট্রোবাংলার এলএনজি। নবম : নুমালিগর রিফাইনারি লিমিটেড—এনআরএল এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন—বিপিসি গ্যাসোলিন ক্রয় ও বিক্রয়ের জন্য নিজেদের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। দশম : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কনটেইনার পরিবহনবিষয়ক সহায়তা বৃদ্ধির জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে কনটেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড এবং কনটেইনার করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড। একাদশ : তামিলনাড়ু ভেটেরিনারি সায়েন্স ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রাম অ্যানিমল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। দ্বাদশ : ভারতের বিশ্বভারতী ও খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। ত্রয়োদশ : ভারতের টাটা মেডিকেল কেন্দ্র ও বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেসের মেডিকেল সার্ভিসেস ডাইরেক্টরেটের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের বিজনেস ফোরামের এই ‘বিজনেস ইভেন্ট’ই ছিল চার দিনের সফরের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শেষ কর্মসূচি। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ভারতের ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান। হোটেল তাজ প্যালেসের শাহজাহান হলে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভারতের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ড. ধর্মেন্দ্র প্রধান, এফবিসিসিআইর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, আয়োজক আসোচেমের প্রেসিডেন্ট সন্দীপ জাজোদিয়া, গোদরেজ গ্রুপের চেয়ারম্যান এ ডি গোদরেজ বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নয়াদিল্লি আসা ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও। পরে বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

তাজ হোটেলের এই কর্মসূচি শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে ফিরে যান। সেখানে কিছু সময় বিশ্রাম শেষে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি ফ্লাইট বিজি-১০৯৮ নয়াদিল্লি থেকে যাত্রা করে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর পালাম স্টেশন থেকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রাকালে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান ভারতের ভারী শিল্প ও গণপরিবহনবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর