বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

তিনজনের ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত

গাজীপুরে ডেকে পাঠাল মুফতি হান্নান ও বিপুলের পরিবারকে সিলেটে রিপনের পরিবারের সাক্ষাৎ, কারাগারে নিরাপত্তা

বিশেষ প্রতিনিধি

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি)-এর শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার দুই সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুল এবং দেলোয়ার হোসেন রিপনের বিরুদ্ধে আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করতে প্রস্তুত কারা কর্তৃপক্ষ। কারা সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর এই তিন কয়েদির ফাঁসি কার্যকরে কার্যত কোনো বাধা নেই। এখন চূড়ান্ত আদেশের অপেক্ষা। ইতিমধ্যে ফাঁসির    মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। জল্লাদ ঠিক করা হয়েছে। তারা ফাঁসির মঞ্চে মহড়া দিয়েছে। এদিকে রায় কার্যকর করার আগে গতকাল সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে রিপনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। যদিও তারা সাক্ষাৎ শেষে বের হয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানায় তারা নিজ উদ্যোগে রিপনের সঙ্গে দেখা করেছেন। কারা কর্তৃপক্ষ তাদের ডাকেনি। গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের কয়েদি মুফতি আবদুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুলের সঙ্গে শেষ বারের মতো দেখা করার জন্য স্বজনদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছে কারা  কর্তৃপক্ষ। তবে গতকাল কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য কারাগারে যাননি বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ। গাজীপুর জেলা ও সিলেট মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, তিন কয়েদির ফাঁসির রায় কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে কারাগার ও তার আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী মুফতি আবদুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুলের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করার জন্য গতকাল স্বজনদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রপতির কাছে করা দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুজনের প্রাণ ভিক্ষার আবেদন (মার্সি পিটিশন) নাকচ হওয়ার পর বিধি মোতাবেক এ বার্তা পাঠানো হয়। তবে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বজনদের কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য কাশিমপুর কারাগারে আসেননি বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান জানান, সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি আবদুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুল আদালতে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে গত ২৭ মার্চ রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন (মার্সি পিটিশন) করেন। পরে তা স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। সম্প্রতি ওই আবেদন নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। তাদের আবেদনের রিজেক্ট কপি সোমবার কারাগারে পৌঁছে। প্রাণভিক্ষা নাকচের চিঠির সঙ্গে ফাঁসি কার্যকরের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনাও এসেছে। প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার খবর সোমবারই তাদের জানানো হয়েছে। মুফতি হান্নান ও বিপুলের ফাঁসি কার্যকরে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে কারা প্রশাসন। ফাঁসির মঞ্চ, মৃত্যু কূপ ও ফাঁসি কার্যকরের জন্য বিশেষ ধরনের ম্যানিলা রশি সবকিছুই প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দণ্ড কার্যকর করতে জল্লাদ রাজু প্রস্তুত রয়েছে।

কাশিমপুর কারাগারে দুই জঙ্গির ফাঁসিকে কেন্দ্র করে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলগেট ও আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিকালে কারাগার এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এ সময় তিনি বলেন, মুফতি হান্নান ও বিপুলের ফাঁসির রায় কার্যকর করা নিয়ে আমরা প্রস্তুত। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ কারাগার এলাকায় কাজ করছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

সিলেট থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল সকালে রাষ্ট্রপতির কাছে রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার চিঠি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছার পরই শুরু হয় ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি। সকাল সাড়ে ৯টায় তার প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার চিঠি কারাগারে এসে পৌঁছায়। পরে তা রিপনকে পড়ে শোনায় কারা কর্তৃপক্ষ। রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার চিঠি পাওয়ার পর থেকেই ফাঁসি কার্যকর প্রক্রিয়া শুরু করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার চিঠি মঙ্গলবার সকালে পেয়েছি আমরা। পরে তা রিপনকে পড়ে শোনানো হয়েছে। তার ফাঁসি কার্যকরের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্দেশনা পেলেই ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে।’

এদিকে, গতকাল রিপনের সঙ্গে তার পরিবারের লোকজন দেখা করেছেন। সকাল পৌনে ১১টার দিকে রিপনের মা সমিরুল নো মেলি, বাবা আবু ইউসুফ, ভাই শামসুল মোহাম্মদ শিপন ও ভাবী সামিয়া উর্মি কারাগারে ঢুকেন। প্রায় আধা ঘণ্টা রিপনের সঙ্গে দেখা করার পর বেরিয়ে আসেন তারা। এ সময় রিপনের বাবা আবু ইউসুফ বলেন, ‘টেলিভিশনের মাধ্যমে রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার বিষয়টি জেনেছি আমরা। এ খবরে রিপনকে দেখতে এসেছি।’

কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়া বলেন, ‘রিপনের পরিবার স্বেচ্ছায় দেখা করে গেছে। কারা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কোনো বার্তা পাঠায়নি। ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে নিয়ম অনুযায়ী পরিবারের সদস্যরা আরেকবার দেখা করার সুযোগ পাবেন।’ প্রসঙ্গত, সিলেটে শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের প্রধান ফটকে ২০০৪ সালের ২১ মে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় তিনজন নিহত ও আহত হন ৭০ জন। এই ঘটনার দায়ের হওয়া মামলায় আদালত মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।

সর্বশেষ খবর