বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই বক্তব্যের তাত্পর্য খুঁজছে নয়াদিল্লি

জুলকার নাইন ও রফিকুল ইসলাম রনি, নয়াদিল্লি থেকে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের শেষ দিন দেওয়া দুই বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এর তাত্পর্য অনুধাবনের চেষ্টা করছেন নয়াদিল্লির  কর্মকর্তারা। এ ছাড়া পুরো সফরের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণের কাজও করছেন নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকের বাংলাদেশ-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সফর অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ ও ফলপ্রসূ। এর মাধ্যমে দুই দেশের আন্তরিকতা আরও বেড়েছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে এলেও দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে এখনো শেখ হাসিনার সফর নিয়ে আলোচনা আছে। বিশেষত তিস্তা চুক্তির বিষয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। এ জন্য দেশটির গণমাধ্যমগুলো দ্রুত তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। সূত্র জানায়, সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর নয়াদিল্লিতে কর্মরত ঢাকার  কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা হয় সে দেশের পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের। সেখানে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা ও ব্যবসায়ীদের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ভারত সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেই গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। পুরো বক্তব্যের লিখিত ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহ করে পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে ভারত সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। এ দুই বক্তব্যেই প্রধানমন্ত্রী তিস্তা চুক্তি নিয়ে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছিলেন। নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বলেছেন, দীর্ঘ সাত বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরের মাধ্যমে দুই দেশের রাজনৈতিক আন্তরিকতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য যে কোনো উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ ও ভারত আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারবে। তিনি বলেন, সফরে তিস্তা চুক্তি রাজনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে এটা সত্য, কিন্তু এ সফরে কানেকটিভিটির প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে উভয়ের বিশেষ আগ্রহ ছিল। বাংলাদেশ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছে উল্লেখ করে ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, এর বেশির ভাগ বিষয়েই ভারত অত্যন্ত ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

গতকাল নয়াদিল্লির শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার খববে বলা হয়েছে, তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতা ব্যানার্জি যে নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধুই তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন ছাড়া আর কোনো কিছুতে শেখ হাসিনা রাজি নন। ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনায় দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ভারতের দৈনিকটি। ফার্স্টপোস্ট নামের অনলাইনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী-সংক্রান্ত ইস্যুতে শেখ হাসিনা যেন তার দেশের মাথা উঁচু রাখতে পারেন তাতে ভারতের ভূমিকা রাখা উচিত। দ্য হিন্দুর সম্পাদকীয়তেও সফরকে রূপান্তরের সফর উল্লেখ করে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতের আরও ভূমিকা রাখার কথা বলা হয়েছে।

শুক্রবার চার দিনের সফরে ভারত এসেছিলেন শেখ হাসিনা। নরেন্দ্র মোদির আমলে এটাই শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। সফরের শুরুতেই প্রটোকল ভেঙে বিমানবন্দরে হাজির হয়ে চমক দেখান মোদি। সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকেন হাসিনা। দুই দফায় বাংলাদেশ-ভারত মোট ৩৫ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এ সফরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের সম্মাননাও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর