বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
ভারত বিতর্কে দুই নেত্রী

পানির হিস্যা চাওয়ার সাহসও তার ছিল না

শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পানির হিস্যা চাওয়ার সাহসও তার ছিল না

সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী জানতে চেয়েছেন কেন তিস্তার পানি আনতে পারিনি? খালেদা জিয়ার কাছে আমার প্রশ্ন— ক্ষমতায় থাকতে আপনি কেন তিস্তার পানি আনতে পারেননি? আগে জাতির কাছে সেই জবাব দিন। তিনি ভারতের খোশামোদি, তোষামোদিতে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, পানি চাওয়ার সাহসও তার ছিল না। গত রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তিস্তার পানি আনা দূরের কথা, ১৯৯১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন বিএনপি নেত্রী ভারত সফরে গিয়েছিলেন। সফরে গিয়ে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা চাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি। চাওয়ার মতো সাহসও তার ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি ধর্ম পালন করি, ধর্ম মান্য করি। কিন্তু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি না। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বিএনপি ও খালেদা জিয়ারাই করেন। ধর্মকে তারাই ব্যবহার করেন। মুখে বিসমিল্লাহ বলে দুনিয়ার মিথ্যা কথা বলে বেড়ান, মানুষের ক্ষতি করেন।’ কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি প্রদান সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বিএনপি-জামায়াতই বায়তুল মোকাররম মসজিদে আগুন দিয়ে শত শত কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। মানুষ হত্যা করা, পুড়িয়ে মারা, গাছ কেটে ফেলা, জাতির সম্পদ নষ্ট করা এগুলো কোন ধর্ম পালন? আসলে ধর্মকে তারাই ব্যবহার করে। আজকে আমরা কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা দিয়েছি বলেই ওনার গায়ে জ্বালা ধরে গেছে। এই লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ যাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন না হয় সেজন্যই আমি সরকারে আসার পরই আলেম-ওলামাদের নিয়ে দীর্ঘদিন বৈঠকের পর এখন তারা একটা সমঝোতায় এসেছেন। এখানে খালেদা জিয়ার দুঃখটা কীসের?’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিস্তা-গঙ্গা দূরের কথা আমাদের স্থলসীমা যে চুক্তি করে গিয়েছিলেন জাতির পিতা, সেই স্থলসীমার সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা। খালেদার কাছে প্রশ্ন— তার স্বামী জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন তারা কেন স্থলসীমা নিয়ে কথা বলেননি? তোলার সাহসই তাদের হয়নি। জিয়া, এরশাদ, খালেদা কেউ বলেননি। সেটা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। এটা আমাদের কূটনৈতিক সাফল্য। খালেদা জিয়া ব্যর্থতার কী জবাব দেশবাসীর কাছে দেবেন? সমুদ্রসীমা নিয়েও একই অবস্থা। বিএনপি নেতাদের বলি, আপনারা কি কখনো সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন? তারা পদলেহনে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, ন্যায্য হিস্যা নিয়ে কথা বলতেই পারেননি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী বলেছেন জনগণকে নাকি অন্ধকারে রেখে সমঝোতা স্বাক্ষর করেছি। আমরা চুক্তি ও সমঝোতা করার আগে প্রতিটি বিষয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অনুমোদন নিয়েছি। সংসদে আলোচনা করেছি। আমি বিএনপি নেত্রীকে জিজ্ঞাসা করি, চীনের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলেন— সে চুক্তি কীভাবে করলেন? সেটা কি সংসদে আলোচনা হয়েছিল? মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উঠেছিল? নাকি কেউ দেখেছিল? কেউ দেখেনি। ওনার মতো ‘চুরিচুপি চুক্তিচোখ্যা’ করি নাই। তার মুখেই আমাদের শুনতে হয়, অন্ধকারে রেখে চুক্তি করেছি। আমরা ভারত যাওয়ার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে সব বলে যান। অন্যদিকে চুক্তির পর আমরা জয়েন্ট বিবৃতি দিই। সেখানেই সব পরিষ্কার করা হয়েছে। সব উল্লেখ করা হয়েছে। ওনার (খালেদা) মতো চুক্তিচোখ্যা করিনি। কেউ যদি চোখ থাকিতে অন্ধ হয়, তাহলে কিছু বলার নাই। আর যার চোখ থাকিতে অন্ধ তার কপাল মন্দ।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়েছিলাম সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রটোকল ভেঙে আমাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে এসেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘ভারতে প্রতিটি কর্মসূচি সফলভাবে হয়েছে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সৈন্য জীবন দিয়েছিলেন তাদের মরণোত্তর সম্মাননা দিই। এ সময় ২৪টি এমওইউ, ১৩টি অ্যাগ্রিমেন্ট সই করি। আমার সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়ীরা গিয়েছিলেন। তারা বৈঠক করেছেন। ভারতের ব্যবসায়ীরা বলেছেন তারা এখানে বিনিয়োগ করবেন। আমরা বিদ্যুৎ আনতে পারব। রোমানী থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ডিজেল আনতে পারব। এলএমজির মাধ্যমে গ্যাসের সমস্যার সমাধান করব। পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস নিয়ে আসব। সাইবার সিকিউরিটিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমঝোতা স্বাক্ষর করি। উন্নয়নের জন্য ভারত আমাদের মোটা অঙ্কের অর্থ ঋণ দেবে।’ বৈঠকসূত্র জানায়, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক বিষয় উত্থাপন করেন। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে স্থানীয় সাংগঠনিক নানা সমস্যা এবং চট্টগ্রামে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের চলমান দ্বন্দ্বের বিষয়টি তুলে ধরেন। কুমিল্লা নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে সবাই মিলেই কাজ করেছে। ফলাফল যাই হোক ভালোই হয়েছে। আর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গটি বৈঠকে আলোচনা না করতে বলেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে মানুষের মন জয় করতে হবে। ভোটারের মন জয় করেই নির্বাচনে জিততে হবে। তবে দলের শৃঙ্খলা ও সিদ্ধান্ত কেউ অমান্য করে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করলে তাদের কঠিন ও কঠোরতম শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সে যত বড় নেতাই হোন না কেন। কেউই ছাড় পাবেন না। এ ছাড়া বৈঠকে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার দিবস পালন, ২৫ মে কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী, ৭ জুন ছয় দফা দিবস উদ্যাপন, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন নিয়ে আলোচনা হয়। পহেলা বৈশাখে প্রতিবছর আওয়ামী লীগ র‌্যালি করলেও এবার তা হচ্ছে না। তবে সকালে গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী।

নববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। নববর্ষ উৎসবকে দেশের ঐতিহ্য অভিহিত করে তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ পালন ও ধর্মের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নরসিংদী জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের শপথ অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পয়লা বৈশাখ বাঙালির নববর্ষ হিসেবে মুঘল আমল থেকেই পালন করা হচ্ছে। মঙ্গল শোভাযাত্রাও মুঘল আমল থেকেই শুরু হয়। মঙ্গল কোনো হিন্দুয়ানি শব্দ নয়।

বাংলা বছরের শেষ দিন চৈত্রসংক্রান্তিতে হালখাতা করার প্রচলনের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব বলেন, বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে ধর্মের কোনো যোগ নেই। এটা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এটা যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাংলা বছরের প্রথম দিন উদযাপন করে। বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করে অনেকে। দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, চীন ও ইরানেও নববর্ষ উদ?যাপিত হয়। এটিকে ধর্মের সঙ্গে মেলানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, আমি পয়লা বৈশাখে ইলিশ না ধরতে ও না খেতে আহ্বান জানাই। বরং এর বদলে খিচুড়ি, পান্তা ভাত, সবজি, ডিম ভাজি ও পোড়া শুকনো মরিচ খাওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর