বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
ভারত বিতর্কে দুই নেত্রী

সব দিয়ে তিনি ফিরে এসেছেন খালি হাতে

খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

সব দিয়ে তিনি ফিরে এসেছেন খালি হাতে

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ব্যর্থ ও অন্তঃসারশূন্য দাবি করে বলেছেন, ‘ভারতের চাহিদামতো তিনি সবকিছু দিয়ে এসেছেন। জনগণের জন্য কিছুই আনতে পারেননি। কতগুলো আশ্বাস নিয়ে খালি হাতে দেশে ফিরেছেন। শুধু তাই নয়, অতীতের ধারাবাহিকতায় ভারতের   অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ও প্রস্তাবিত বিষয়গুলোতেই চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়েছে। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী এসব চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।’ রাজধানীর গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। এর আগে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি-প্রধান বলেন, ‘এই সফরকে দেশবাসী কেবলই দেওয়ার এবং কোনো কিছুই না পাওয়ার এক চরম ব্যর্থ সফর বলে মনে করে। তারা মনে করে, প্রধানমন্ত্রী ভারতকে শুধু দিয়ে এসেছেন, কিছু নিয়ে আসতে পারেননি। সফরকে প্রধানমন্ত্রী তৃপ্ত, ফলপ্রসূ মনে করলেও দেশের জনগণ শঙ্কিত ও আতঙ্কিত।’ ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তি এবং জনসাধারণের মতামত উপেক্ষা করে স্পর্শকাতর বিষয়ে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে দেশের জনসাধারণের সঙ্গে আমরাও শঙ্কিত।’ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.), মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর হাফিজউদ্দিন আহমদ (অব.), আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী (অব.), শাহজাহান ওমর, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপি নেতা আবদুল কাইয়ুম, শামা ওবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। সেগুলোর বিশদ বিবরণ প্রকাশ কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে কোনো আলোচনা এবং কারও মতামত নেওয়া হয়নি। এই গোপনীয়তার কারণে সবার মধ্যে যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছিল সফরের পর তা যথার্থ প্রমাণিত হয়েছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং বাংলাদেশি রপ্তানি-পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার মতো অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোতে অগ্রগতি হয়নি। আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের সুন্দরবনবিনাশী এবং পরিবেশবিধ্বংসী রামপাল কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের স্থান পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি কথাও বলেননি।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমান সরকার সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একটি প্রহসনের নির্বাচন করে। জালিয়াতির মাধ্যমে গঠিত সরকারের নৈতিক ভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। ভারতের বিগত সরকারের সরাসরি সহায়তা ও প্রত্যক্ষ সমর্থনেই জনবিচ্ছিন্ন এই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে। তাই কেবল কৃতজ্ঞতার ঋণই ক্রমাগত শোধ করে চলেছে এ সরকার। এতে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা। খর্ব হয়েছে আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব। ভারতের চাহিদামতো চুক্তি করে তিনি বাংলাদেশকে ভারতের সামরিক পরিকল্পনার অংশ করে এসেছেন। মানুষের সমর্থন ছাড়া কোনো সমঝোতা বা চুক্তিই যে কেবল গায়ের জোরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, তার প্রমাণ নিকট ইতিহাসেই রয়েছে।’

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। অগণিত প্রাণদান ও ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতার কথা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে অর্থনীতি, বাণিজ্য, পানিসম্পদ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাবলি নিরসনের নীতিতে আমরা বিশ্বাসী। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্ব্বেও প্রতিবেশী বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ব্যাহত করতে ভারতের বিগত শাসকদের একতরফা ভূমিকায় বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। আশা করি, ভারতের বর্তমান সরকার অতীতের সেই ভুল থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের মনোভাবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।’ তিনি বলেন, ‘ভাটির দেশ হিসেবে সব আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের অধিকার। এটা কারও কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য বা করুণার বিষয় নয়। তিস্তার পানি বণ্টন দুই সার্বভৌম দেশের মধ্যকার বিষয়। এজন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই বিষয়টি ফয়সালা করতে হবে।’ বেগম জিয়া বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বিভিন্ন দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক উচ্চমান অর্জন করেছে। ভারতের মতো কোনো অস্ত্র আমদানিকারক দেশ থেকে এই বাহিনীর জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করলে সেই মানের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো দেশের সম্পৃক্ততার ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।’

সরাসরি সম্প্রচার না করতে দেওয়ায় বিএনপির নিন্দা : দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করতে না দেওয়ায় নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী এ নিন্দা জানান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচার শুরু করলেও সঙ্গে সঙ্গে  বন্ধ করে দেওয়া হয়। অধিকাংশ চ্যানেল গুরুত্বহীনভাবে প্রচার করে। কোনো কোনো চ্যানেলে ব্ল্যাকআউট করা হয়েছে। সরকারের সরাসরি নির্দেশেই বিএনপি চেয়ারপারসনের বক্তব্য প্রচারে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। গণমাধ্যমের উপর সরকারের এই আচরণ স্বেচ্ছাচারি ও অগণতান্ত্রিক। ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ।

সর্বশেষ খবর