শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বর্ষবরণের সঙ্গে ধর্মের কোনো সংঘাত নেই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলা নববর্ষটা বাঙালির। আমরা বাংলা নববর্ষ উদযাপন করি। এর সঙ্গে কোনো ধর্মের সংঘাতও নেই, কোনো ধর্মের সম্পৃক্ততাও নেই। এটা সম্পূর্ণ একটা বাঙালি সংস্কৃতি। বাঙালির চর্চা। গতকাল সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে আমাদের একটা নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। সেটা হলো-জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস। যে করেই হোক এর হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং শিক্ষার্থীদের ধ্বংসের পথ পরিহারে অনুপ্রাণিত করতে কাউন্সেলিং প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ময়মনসিংহ বিভাগের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী মতবিনিময় এবং রাজধানীর হাতিরঝিলে দুটি বিনোদন প্রকল্প উদ্বোধন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নববর্ষকে কেন্দ্র করে বাঙালির ব্যবসা-বাণিজ্যের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক ও হালখাতার একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অনেকেই এটাকে নানাভাবে বিকৃত করতে চান। কিন্তু এর সঙ্গে কোনো ধর্মীয় সংঘাতের বিষয় নেই। এর সঙ্গে কেউ ধর্মকে জড়ানোর চেষ্টা যেন না করে। শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে নববর্ষ যেন উদযাপন করা যায়। কারণ এটা একটা উৎসব, যেখানে বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ এক হয়ে একসঙ্গে পালন করে।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে। এখানে কিন্তু কোনো ধর্মীয় বিষয় নেই। এখানে আমাদের বাঙালির যে শিল্পকলা, মাটির পুতুল, হাতি, ঘোড়া, হাঁড়ি, পাতিল বানানো, নানারকম রং দিয়ে নানা কিছু সাজানো এটা আমাদের দেশে প্রচলিত। 

জঙ্গি-সন্ত্রাস কখনো ইসলামের পথ নয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নিরীহ মানুষ হত্যা করা কখনো ইসলাম অনুমোদন করে না। কিছু লোক অপকর্ম ও আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে কলুষিত করছে, বদনাম করছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করছে। দেশবাসীর কাছে এটাই চাইব, যে করেই হোক এর হাত থেকে আপনাদের সন্তানকে মুক্ত রাখতে হবে। আমাদের সমাজে বিশিষ্টজনরা আছেন, শিক্ষকরা আছেন, মসজিদের ইমামরা আছেন, ওলামায়ে কেরাম আছেন এবং বিভিন্ন পেশাজীবী ও অভিভাবক সবাইকে আমি অনুরোধ রাখব যে, কাদের ছেলেমেয়েরা এ ধরনের জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে, স্কুল-কলেজে কারা অনুপস্থিত রয়েছে- তার যেন খোঁজখবর নেন এবং কোনোভাবেই এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেন বিভ্রান্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তি এগুলো পরিবারকে ধ্বংস করে, সমাজকে ধ্বংস করে, বাবা-মার জন্য একটা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সঞ্চালনায় ময়মনসিংহ বিভাগের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

হাতিরঝিলে চালু হলো দক্ষিণ এশিয়ার বড় বর্ণিল ফোয়ারা : বাজছে গান; চলছে লাল, নীল, বেগুনি, সবুজসহ বর্ণিল রঙের খেলা; সঙ্গে জলের নাচন। বিনোদনের জন্য হাতিরঝিলে ঘুরতে গিয়ে এখন এমন হৃদয়কাড়া ইউরোপ-আমেরিকান ঢঙের পরিবেশই উপভোগ করবেন নগরবাসী। রাজধানীবাসীর চিত্তবিনোদনের জন্য এমন বর্ণিল আলোর ফোয়ারা নগরবাসীর জন্য বৈশাখী উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এই মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ওয়াটার ফাউন্টেইন এবং অ্যাম্ফিথিয়েটারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বর্ণিল ফোয়ারা বলে দাবি নির্মাতাদের। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এখন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সংগীতের তালে তালে বর্ণিল আলোর সঙ্গে হাতিরঝিলে দেখা যাবে জলের নাচন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের তার নববর্ষের উপহার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। স্বভাবত রাতেই বেশি নজর কাড়বে জলের নাচনের সঙ্গে লাল, নীল, বেগুনি, সবুজসহ অসংখ্য রং। ১ হাজার ৯৮০ বর্গমিটারের এ রঙিন ফোয়ারার পানি ১০ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৮০ মিটার পর্যন্ত ওপরে উঠবে। আপাতত প্রতিদিন সন্ধ্যা ও রাতে দুই দফায় ১৫ মিনিট করে দেখা যাবে জলের নাচন। হাতিরঝিলের গুলশানের আড়ং শোরুম ও পুলিশ প্লাজার মাঝামাঝি অংশে গোলাকার অ্যাম্ফিথিয়েটার (উন্মুক্ত মঞ্চ) তৈরি করা হয়েছে। এই থিয়েটারে একসঙ্গে দুই হাজার মানুষ বসতে পারবে। এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি ফোয়ারার জলের নাচন খেলা দেখা যাবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কার্স অর্গানাইজেশন (এসডব্লিউও ও-পশ্চিম) গণপূর্ত অধিদফতর, রাজধানী উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ (রাজউক) এবং ঢাকা ওয়াসার সহযোগিতায় নির্মাণ করা হয়েছে স্থাপনা দুটি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চিত্তবিনোদনের সুযোগটা খুব সীমিত। মানুষের চিত্তবিনোদনের একটু সুযোগ করে দিতে এই অ্যাম্ফিথিয়েটার এবং ফাউন্টেইনটা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব স্থাপনা জাতীয় সম্পদ, এগুলো রক্ষা এবং রক্ষণাবেক্ষণ আমাদেরই দায়িত্ব। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক ও প্রকল্প পরিচালক মেজর জেনারেল আবু সাইদ মোহাম্মদ মাসুদ। এ সময় গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর