রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

নগরবাসীকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন আরিফের

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

নগরবাসীকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন আরিফের

২০১৩ সালের ১৫ জুন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। মেয়র নির্বাচিত হয়ে সিলেট নগরবাসীকে দেখিয়েছিলেন উন্নয়নের নানা স্বপ্ন। আধুনিক মডেল নগরী গড়ারও প্রতিশ্রুতি ছিল তার। দায়িত্ব গ্রহণের পর সে পথেই হাঁটছিলেন আরিফ। তার কর্মোদ্যম দেখে আশ্বস্ত হয়েছিলেন নগরবাসীও। কিন্তু সেই উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারেননি তিনি। দেড় বছরের মাথায় তিনি জড়িয়ে পড়েন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায়। এরপর কারাগারে কাটাতে হয় তাকে দুই বছর। কারামুক্ত হওয়ার পরও মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পেতে তাকে দৌড়াতে হয়েছে আদালত থেকে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত তিনি ফিরে পেয়েছেন মেয়রের প্রশাসনিক আর্থিক ক্ষমতা। আগামীকাল থেকে মেয়রের পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে তার বসার কথা রয়েছে নগর ভবনে। আর মেয়রের দায়িত্ব নিয়েই তিনি নিজেকে সঁপে দিতে চান নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে। এ জন্য সরকার ও নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন মেয়র আরিফ। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব বুঝে পেয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এর আগে আদালতের রায়ে তিনি মেয়র পদ ফিরে পেলেও মন্ত্রণালয়ের আদেশ না পাওয়ায় অংশ নিতে পারছিলেন না উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে।

সূত্র জানায়, নগর ভবনের কাজে আজ মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে আরিফের। মন্ত্রণালয়ের কাজ সেরে আগামীকাল বা পরদিন মঙ্গলবার মেয়রের পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে নগর ভবনে ফিরবেন তিনি। আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে উন্নয়ন কাজের জন্য আরিফুল হক চৌধুরী সময় পাবেন এক বছর। ওই সময়ের মধ্যে নগরবাসীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন কীভাবে করা যায় নগর ভবনে ফিরেই সে পরিকল্পনা তৈরি করতে চান তিনি। তবে নগরীর সমস্যার মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি সাজাতে চান তার পরিকল্পনা। এক বছর সময়ের মধ্যে কীভাবে নগরবাসী প্রত্যাশা পূরণ করবেন—এমন প্রশ্নে আরিফুল হক চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের চার বছর সময়ের মধ্যে আমি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি দেড় বছরের কম সময়। সামনে রয়েছে প্রায় এক বছর। কারাগারে যাওয়ার আগে যেসব উন্নয়ন কাজ শুরু করেছিলাম, এ সময়ের মধ্যে আমি তা সম্পন্ন করতে চাই। এ জন্য সিলেটের সুশীল সমাজ ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করব। তাদের পরামর্শ নিয়ে প্রথমে নগরীর প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করব। এরপর শুরু করব উন্নয়ন কাজ।’ আরিফ মনে করেন, নগরীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এখনই জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ না নিলে আগামী রোজায় বৃষ্টিপাত হলে নগরবাসীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তিনি বলেন, ‘এখন বৃষ্টিপাত নেই। এ সুযোগে ছড়া ও খাল পুনঃখনন এবং সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুই দিনের মধ্যে ছড়া-খালগুলো সার্ভে করার নির্দেশ দিয়েছি। তাদের প্রতিবেদন পেলেই যেসব স্থানে ছড়া ও খাল ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, সেসব স্থানে কাজ শুরু করে দেব।’

সিলেট নগরীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ১২টি বড় ছড়া ও খাল। এ ছাড়া ছোট ছোট ছড়া ও খাল রয়েছে অনেকগুলো। এসব ছড়া-খাল খনন, সংস্কার, রিটেইনিং ওয়াল ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে সরকার ২৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ উন্নয়ন প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে গৃহীত পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আনাও প্রয়োজন বলে মনে করেন আরিফ। আগামী রমজানে নগরবাসীর দুর্ভোগ যাতে না হয় সে জন্য নগর ভবনে ফিরে নগরীর যানজট ও খাওয়ার পানির সংকট নিরসন এবং ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরুর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন আরিফ। তিনি বলেন, ‘কারাগারে যাওয়ার আগে আমি ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদ করেছিলাম। রিকশার জন্য আলাদা লেন করেছিলাম। কিন্তু কারাগারে যাওয়ার পর ফুটপাথগুলো আবারও হকারদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। রিকশার লেন তুলে ফেলা হয়েছে। এতে নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে। নগরবাসীর সহযোগিতা পেলে আবারও এ কাজগুলো করতে মাঠে নামব।’

আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে আরিফ বলেন, ‘মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর পাঁচ বছরের একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছিলাম। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছিলাম। দেড় বছরে যে উন্নয়ন করেছিলাম এর সুফলও মানুষ পাচ্ছিল। কিন্তু এরপর দুই বছর আমাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়। এতে নগরীর উন্নয়নে স্থবিরতা নেমে আসে। সামনে আর এক বছর সময় আছে। এই সময়ের মধ্যেই পরিষদের সব কাউন্সিলরকে নিয়ে অসম্পূর্ণ উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে চাই। এ জন্য প্রয়োজন সরকার ও নগরবাসীর সহযোগিতা।’ প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের শেষের দিকে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে নাম আসে আরিফুল হক চৌধুরীর। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ওই মামলার সূত্র ধরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর প্রায় দুই বছর জেল খেটে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন। তবে আইনি জটিলতায় ফিরতে পারেননি নগর ভবনে। ১৩ মার্চ হাই কোর্টের এক রায়ে মন্ত্রণালয়ের বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করে আরিফুল হক চৌধুরীকে মেয়র পদ ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলেও বহাল থাকে হাই কোর্টের আদেশ। আদালতের নির্দেশের পর ২ এপ্রিল মেয়র পদে বসলেও মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার মামলায় ফের সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাকে। পরে আদালতের আদেশে আবারও তিনি ফিরে পান মেয়রের পদ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকালে মন্ত্রণালয় থেকে আরিফকে প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চিঠি পাঠানো হয় সিটি করপোরেশনে।

সর্বশেষ খবর