রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

দায়িত্ব নিয়ে নতুন চাপে বুলবুল

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

দায়িত্ব নিয়ে নতুন  চাপে বুলবুল

বরখাস্ত, বহাল, আবার বরখাস্ত, আবার বহাল। নানা নাটকীয়তার পর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আর দায়িত্ব নিয়েই চাপে পড়েছেন মেয়র। হোল্ডিং ট্যাক্স কমানো, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়া ও দলীয় কর্মীদের প্রত্যাশার চাপে পড়েছেন তিনি। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিজাম উল আযীমের সময় নগরীতে বাড়ানো হয় হোল্ডিং ট্যাক্স। সেই ট্যাক্স বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই প্রতিশ্রুতি রাখেননি। এ নিয়ে আন্দোলনরত নাগরিকরা মেয়রের সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা গত বছর ডিসেম্বরে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর দাবিতে আন্দোলনরত অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ জানান, বুলবুল তাদের আন্দোলনে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। তখন তিনি দায়িত্ব পেলে বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে ঘোষণা না আসায় তারা হতাশ। তবে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল জানান, হোল্ডিং ট্যাক্স যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, এর বিপক্ষে অবস্থান তার। তবে ট্যাক্স কী পর্যায়ে কমিয়ে সহনীয় করা যায় এ নিয়ে তিনি ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন। নিজাম উল আযীম দায়িত্বে থাকাকালে নগরীর উন্নয়নে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার কাজ শুরু হয়। এ ছাড়া নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে সম্প্রতি সরকার আরও ১৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এসব প্রকল্প নিজামের সময় নেওয়া বলে নগরীতে জনশ্রুতি আছে। ফলে বুলবুলকে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আরও নতুন উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে নগরবাসীর প্রত্যাশার চাপ আছে তার ওপর। তবে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘পাঁচ বছরের সব সমস্যা আগামী ১৫ মাসের মধ্যে সমাধানে উদ্যোগ নেব। সরকার আমাকে সাহায্য করলে আমি অসমাপ্ত সব কাজ করতে পারব। যে ১৬ মাস দায়িত্ব পালন করেছি, তখনো সহযোগিতা পেয়েছি। তাই ভবিষ্যতেও সরকারের সহযোগিতা পাব বলে আশা রাখি।’ সিটি মেয়রের পাশাপাশি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নগর বিএনপি সভাপতি। প্রায় দুই বছর পর মেয়র হিসেবে তার ফিরে আসায় দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশাও বেড়েছে। মেয়রের দফতর থেকে শুরু করে অন্য দফতরগুলোতে যারা অন্য দলের কর্মী ছিলেন, তাদের বাদ দেওয়ার দাবি উঠেছে দলের ভিতর থেকে। সেই সঙ্গে ওই পদগুলোতে দলীয় কর্মীরা নিয়োগ পেতে চান। এ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও বাগিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করেছেন বিএনপিকে অর্থ সহায়তাকারী ঠিকাদাররা। জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, দলের কেউ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকলে তার কাছে কর্মীদের প্রত্যাশা বেশি থাকে। রাজশাহীতে একমাত্র বুলবুলই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। ফলে তার কাছে প্রত্যাশাও বেশি। কিন্তু দলের কর্মীদেরও মনে রাখতে হবে, মেয়র চাইলেই সবকিছু করে দিতে পারেন না। সরকার তাকে আদৌ কোনো সহযোগিতা করছে কি না সেটিও দলের কর্মীদের দেখতে হবে। চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কর্মীদের সঙ্গে নেতাদের দূরত্ব বাড়ে। কর্মীরা যদি সেটি অনুধাবন করতে পারে, তাহলে বুলবুল তার কাজ সঠিকভাবে করতে পারবেন। মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল জানান, দলের কর্মীদের চাপ থাকবে। সেটি কাটিয়ে উঠে তিনি নগরীর উন্নয়নে কাজ করতে চান। কর্মীরা তাকে ভুল বুঝবে না বলেও মনে করেন তিনি। বুলবুল দায়িত্ব নিয়ে ১০ দিন পার করেছেন। ইতিমধ্যে নতুন করে বুঝে নিয়েছেন তার কাজ। অতীত পেছনে ফেলে নতুন উদ্যোমে নগরীর উন্নয়নে কাজ করতে চান তিনি। মেয়র বলেন, ‘আমি চাই সিটি করপোরেশনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে। গত দুই বছরে নিয়ম ভেঙে সিটি করপোরেশনে একটা অচলাবস্থার তৈরি করা হয়েছে। আগামী ১৫ মাসে এ অচলাবস্থার অবসান করা হবে। আর এটাই আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’ তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে এই সিটি করপোরেশনে একটা সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা। যে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছিল, যে সম্পর্কে ঘুণ ধরেছে, সে সম্পর্ক নতুন করে তৈরি করা। স্বৈরাচারী মনোভাব ছেড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। এটিই হবে আমার বড় চ্যালেঞ্জ।

সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন, সেবা, স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত কিংবা অন্যান্য জায়গায় যদি কোনো দুর্বলতা থাকে, সেগুলো খুঁজে সবাইকে জানানো হবে। কোনো নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হবে না। আগামী ১৫ মাসে আমার যদি চারগুণ পরিশ্রম করতে হয়, তবে সে পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সেটিকে পাঁচ বছর বানানোর চেষ্টা করব।’ ২৩ মাস মেয়রের দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকার পর ২ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগর ভবনে আসেন বুলবুল। কিন্তু নগরপিতার কক্ষ তালাবদ্ধ। ফলে তিনি পাশের একটি কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ নিয়ে নগর ভবন এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে এ উত্তেজনা ভাঙচুরে রূপ নেয়। বেলা ৩টার দিকে বুলবুল সিটি করপোরেশনে নিজ কক্ষে বসেন। এর পরপরই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ফ্যাক্সে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ আসে। ৪ এপ্রিল বুলবুল তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রিট করেন। হাই কোর্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশ স্থগিত করেন। ফলে ৫ এপ্রিল আবারও নগর ভবনে ফেরেন তিনি। তবে এদিন তাকে বাধা পেতে হয়নি। নগর ভবনে আসামাত্র বিপুলসংখ্যক কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। খোলা রাখা হয়েছিল মেয়রের দফতরের প্রধান ফটকটি। কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি ছাড়া মেয়রের কক্ষে প্রবেশ করেন তিনি। মেয়রের চেয়ারে বসার আগে দোয়া পড়েন, মোনাজাত করেন বুলবুল।

সর্বশেষ খবর