রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বরখাস্তের খড়গে হিসাব মিলছে না মনিরের

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

বরখাস্তের খড়গে হিসাব মিলছে না মনিরের

‘প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সরকার একটা আইনের প্রয়োগ করছেন। তবে এতে করে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কাজ করতে পারছেন না। আদালত সরকারের সেই আদেশ স্থগিত করে দিচ্ছেন, জনপ্রতিনিধি আবার ফেরত আসছেন।

এটা নিয়ে সংবাদপত্রেও বেশ উত্তেজনাকর খবর ছড়িয়ে পড়ে। নাগরিকদের মধ্যে নানা কৌতূহল সৃষ্টি হয়। হতাশা আছে এটা নিয়ে। তবে সত্যিকার অর্থে এতে লোকসান হয়। প্রশাসনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধারা ব্যাহত হয়।’ কথাগুলো বলছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় এক বছর ১৯ দিন সিটি করপোরেশনের বাইরে ছিলাম। তারপর ফিরে এসে দেখলাম, এখানে রাজস্ব ব্যয়ের যেমন শৃঙ্খলাটা নষ্ট হয়েছে, একইভাবে রাজস্ব খাতে আয়ের শৃঙ্খলাটাও ব্যাহত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ প্রশাসনও এই এক বছরে অনেকটা বিঘ্নিত হয়েছে।’ মেয়র মনিরুজ্জামান মনে করেন, নগরবাসীর সেবা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা থাকা উচিত। কখনো যদি বরখাস্তের খড়্গে মেয়র, কাউন্সিলর, জনপ্রতিনিধিরা পড়ে যান, তাহলে উন্নয়ন কাজ থেমে যায়। যে পরিকল্পনা মোতাবেক সেবা দেওয়ার ‘ডিজাইন’ তৈরি করা হয়, তা আর বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান একই সঙ্গে বিএনপির খুলনা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জানা যায়, রাজনৈতিক দুটি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে রিট করেন।  আদালত ওই বরখাস্ত আদেশ স্থগিত করলে এক বছর ১৯ দিন পর ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পান তিনি। উন্নয়ন বরাদ্দ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ইচ্ছা থাকলেও বরাদ্দের অভাবে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয় না। সরকার অনেক ক্ষেত্রে ঢাকা দক্ষিণ, উত্তর, চট্টগ্রাম বা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বরাদ্দের ব্যাপারে যে ধরনের নীতি অনুসরণ করে, খুলনা, রাজশাহী বা সিলেটে বরাদ্দের ব্যাপারে তেমন নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আরও কিছু পরিকল্পনা ছিল, কিছু ঘাটতিও রয়েছে। আমরা এই ঘাটতির জায়গাটা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূরণের চেষ্টা করছি।’ নাগরিক সেবা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পাঁচ বছরের জন্য জনগণ একটা পরিষদ নির্বাচিত করেছে। এই পরিষদের পরিকল্পনা ও প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে বরাদ্দ দিলে কাজগুলো শুরু করে দিতে পারতাম। আমরা খুবই চেষ্টা করেছি। তবে সেভাবে সাড়া পাইনি। সে কারণে আমরা নাগরিকদের নানা রকম সুবিধা নিশ্চিত করতে পারিনি।’ খুলনার চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে এক প্রশ্নে মেয়র বলেন, ‘বিশেষ করে উচ্চপর্যায়ের মিটিংয়ে বলা হচ্ছে, যেহেতু এই টার্মে আপনাদের হাতে আর সময় নেই, তাই এটা আর এভাবে নির্মাণ করার কোনো প্রয়োজন নেই।’ খুলনা সিটি করপোরেশনের জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বারবার চাহিদাপত্র দেওয়া হলেও নতুন অর্গানোগ্রাম আমাদের দেওয়া হয়নি। আমরা সেই ’৮৭-৮৮ সালের অর্গানোগ্রামের ওপরই চলছি। সিটি করপোরেশনের কাজকর্মের ব্যাপ্তি যেভাবে বেড়েছে, ডেভেলপমেন্ট যে লেভেলে চলে গেছে, তাতে করে এই জনবল দিয়ে এখন আর চলে না। সেখানে আমরা “মাস্টার রোল” বা “নো ওয়ার্ক নো পে” পদ্ধতিতে বেশকিছু শ্রমিক বিভিন্ন জায়গায় কাজে লাগাতে বাধ্য হয়েছি।’

সর্বশেষ খবর