রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

মূল শিক্ষায় কীভাবে সম্পৃক্ত হবে কওমি মাদ্রাসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মূল শিক্ষায় কীভাবে সম্পৃক্ত হবে কওমি মাদ্রাসা

দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ এবং আরবি) সমমান দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাকে মূল শিক্ষায় সমন্বয়ে এখনো জটিল ও দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। কিছু শর্ত পূরণ ছাড়া কোনোভাবেই পুরো ব্যবস্থাকে এর ভিতরে আনা সম্ভব নয়। যদিও রাজনৈতিকভাবে চলতি ২০১৭ সালের মধ্যেই প্রথমবারের মতো সমমানের সার্টিফিকেট দেওয়ার চেষ্টা করবে সরকার গঠিত কমিটি। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে এ জন্য সাধারণভাবে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো জাগতিক শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি জাতীয় সংগীত পরিবেশনা, পতাকা উত্তোলনের বিষয়গুলো পালন করবে মাদ্রাসাগুলো। গঠিত কমিটি এ বিষয়ে আগের রিপোর্ট ও বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনা করে সমীক্ষা করে শিক্ষা মান ও বিষয় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আজ কমিটি প্রথম বৈঠকে বসতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ‘সরকারি স্বীকৃতি দিতে হলে অবশ্যই সরকার নিয়ন্ত্রিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম তৈরি করে তার আলোকে  কোনো স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তর হলে দিতে হবে।’ শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, ‘একটি পূর্ণাঙ্গ কারিকুলাম তৈরি করা ছাড়া কোনোভাবেই তাদের স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব নয়। তাদের অবশ্যই অন্যান্য কারিকুলামের মতো কোর কোর্স, প্রফেশনাল কোর্স পড়তে হবে। আর পুরনোদের কোনোভাবেই স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমান প্রদান করার লক্ষ্যে কওমি মাদ্রাসা বোর্ডসমূহ কর্তৃক গঠিত সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতি আল্লামা আহমদ শফী, কো-চেয়ারম্যান হিসেবে বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি, পাঁচজন সদস্য, গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা বেফাকুল কওমিয়া মাদ্রাসার দুজন সদস্য, চট্টগ্রামের আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়ার দুজন সদস্য, সিলেট আযাদ দ্বীনি এদারা বোর্ডের দুজন সদস্য, উত্তরবঙ্গ তানজিমুল মাদারিসিল কওমিয়ার দুজন সদস্য, জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের দুজন সদস্য থাকবেন। এ কমিটি সনদবিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের সনদ মাস্টার্সের সমমান বলে বিবেচিত হবে। এ কমিটির অধীনে ও তত্ত্বাবধানে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দাওরায়ে হাদিসের সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষার সময় নির্ধারণ, অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল ও সনদ তৈরিসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক বা একাধিক উপ-কমিটি গঠন করতে পারবে। এ কমিটি হতে হবে রাজনীতির ঊর্ধ্বে। জানা গেছে, কওমি মাদ্রাসাগুলো দুভাবে পরিচালিত হয়। একটি আহলে হাদিস পরিচালিত, অন্যটি হানাফি মাজহাবি নিয়মে পরিচালিত। মাদ্রাসা ভেদে দশ থেকে বারো বছরের কোর্সে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন হয়ে থাকে। আরবিতে এর পারিভাষিক নাম শাহাদাতুল কুল্লিয়া। একজন শিক্ষার্থীকে কোরআন, সুন্নাহর আলোকে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক সব শিক্ষা প্রদান করা হয় এসব সিলেবাসে। এ ছাড়াও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বিষয়গুলো সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয় এই শিক্ষার্থীদের। প্রতি বছর ক্লাস উত্তীর্ণের একটি পরীক্ষা নেওয়া হলেও দশ বছরের মধ্যে কোনো সার্টিফিকেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় না। কোরআনের পূর্ণ ব্যাখ্যা, বিশুদ্ধ ছয়টি হাদিস (সিয়াহ্ সিত্তাহ), ফিকহ ও উসুলে ফিকহ্, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, বালাগাত মানতিক, আরবি ভাষা ও সাহিত্য, আরবি ব্যাকরণসহ অন্যান্য বিষয়ে বিস্তর ধারণা ও জ্ঞান দেওয়া হয় কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের। কওমিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আহলে হাদিস পরিচালিত মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত অবস্থায় সাধারণ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডেও এক সঙ্গে পড়াশোনা চালাতে পারেন। তবে হানাফি মাজহাবি নিয়মে পরিচালিত মাদ্রাসাগুলোতে এমন কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। আহলে হাদিস পরিচালিত মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করা মো. আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনের। তিনি পাবনা জেলার পুরাতন বাঁশবাজারে অবস্থিত দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। পরে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পড়তে চাইলে তাকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হয়। সেখান থেকে আলিম (উচ্চমাধ্যমিক) পাস করার পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজে ভর্তি হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। উচ্চশিক্ষার সনদ সংগ্রহ করতেই আনোয়ারুল ইসলামের শিক্ষাজীবনের বড় একটি সময় পার হয়ে গেছে। দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর সনদ দেওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, নিঃসন্দেহে সরকারের এটি একটি ভালো উদ্যোগ। দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা না পাওয়ার কারণেই তরুণরা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে। কওমিতে পড়ুয়া কোনো শিক্ষার্থী জঙ্গিবাদে জড়াবে না।

কওমি মাদ্রাসাকে শর্তহীনভাবে সনদ প্রদান করা অযৌক্তিক : শর্তহীনভাবে কওমি মাদ্রাসাকে সনদ প্রদান অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন ইমাম আ’যম কনফারেন্সের বক্তারা। তারা বলেন, সরকারের নিয়মে মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম যুগ যুগ ধরে লাখ-লাখ হক্কানি আলেমেদ্বীন তৈরি হয়ে দেশ-জাতি মাযহাবে মিল্লাতের খেদমত করে যাচ্ছে। নতুন করে কওমি মাদ্রাসাকে শর্তহীনভাবে সনদ দেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। গতকাল জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম মিলনায়তনে ‘ইমামে আ’যম ও আ’লা হযরত গবেষণা পরিষদ’ আয়োজিত কনফারেন্সে বক্তারা এ কথা বলেন।

সংগঠনের সভাপতি উপাধ্যক্ষ মুফতি আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মুফতি মাওলানা বখতিয়ার উদ্দীনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল। বক্তব্য রাখেন আল্লামা শাহ আহ্সানুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ র ম আলী হায়দার মুর্শেদী।

সর্বশেষ খবর