রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিচার বিভাগের সঙ্গে দ্বন্দ্ব কাম্য নয় : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচার বিভাগের সঙ্গে দ্বন্দ্ব কাম্য নয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ শাসন, বিচার ও আইন বিভাগকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রের সঙ্গে বিচার বিভাগের দ্বন্দ্ব আছে— এমন কথা আসা কারও জন্যই কাম্য নয়। তিনি বলেন, এই তিন অঙ্গ একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে। একে অপরকে অতিক্রম করবে না। আমি স্পষ্ট করতে চাই— রাষ্ট্রের সঙ্গে বিচার বিভাগের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। গতকাল সকালে রাজধানীর কাকরাইলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য নবনির্মিত আবাসিক ভবন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ও অ্যাটর্নি জেনালের মাহবুবে আলম। চার ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। পরে মোনাজাত শেষে তিনি ভবনের বিভিন্ন তলা ঘুরে দেখেন। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে কে কাকে সম্মান করবে, কে কাকে করবে না; কে কার সিদ্ধান্ত মানবে আর কারটা নাকচ করবে, এই দ্বন্দ্বে যদি আমরা যাই তাহলে একটা রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই সবার কিছু কিছু ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষমতা আমরা কতটুকু প্রয়োগ করতে পারি, কতটা করলে জনস্বার্থ ব্যাহত হতে পারে, তিনটি অঙ্গের মধ্যে দ্বন্দ্ব হতে পারে— এই বিবেচনাটুকু সব পক্ষের থাকা উচিত।  এর আগে একই অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, একটি মহল সব সময় সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে দূরত্ব তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত। এরকম ভুল বোঝাবুঝির কারণে সাধারণ জনগণের কাছে ভুল বার্তা চলে যায়। সম্পূর্ণ ভুল তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সরকার প্রধানের কাছে সত্য গোপন করে সিদ্ধান্তগুলো হাসিল করা হয়েছে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করা হলে ভুল বোঝাবুঝি হতো না।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মাননীয় প্রধান বিচারপতি কিছু প্রসঙ্গ তুলেছেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী এবং বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া। এখানে আমার কোনো ক্ষমতা নেই। কোনো রকম কিছু হলে এখানে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করাটাই ভালো। এক্ষেত্রে আমাদের যদি কিছু করণীয় থাকে, নিশ্চয়ই আমাদের পক্ষ থেকে তা দেখব। তিনি বলেন, সংবিধানেই আছে রাষ্ট্রপতি যখন বিচারপতি নিয়োগ দেন তখন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করবেন। কাজেই এখানে কোনোরকম কিছু হলে তা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করাটাই ভালো। আমি চাই না এরকম কোনো কথা উঠুক যে আমাদের দ্বন্দ্ব্ব বা কোনো কিছু আছে। এ ধরনের কথা উঠলে এটি সমগ্র জাতি বা জনগণের জন্য ভালো হবে না।

 বিচার বিভাগের ইমেজ যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হবে তেমনি লেজিসলেটিভ এবং এক্সিকিউটিভ সম্বন্ধেও জনগণ একটা ভুল ধারণা নিয়ে যাবে।

আইন প্রণয়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা হঠাৎ করেই সংসদে কোনো আইন পাস করি না। এটি একটি দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মধ্য দিয়ে আসে। একটি আইন যখন মন্ত্রণালয় থেকে কেবিনেট ডিভিশনে আসে তখন আমরা কেবিনেটে বসে নীতিগত সিদ্ধান্ত দেই। প্রথম রিডিংটা আমরা ওখানে করি। এরপর এটি চলে যায় আইন বিভাগে ভেটিংয়ের জন্য। সেখান থেকে আবার কেবিনেটে আসার পর আমরা আবার রিডিং দিয়ে অনুমোদন দেই। এরপর এটা যায় সংসদে। সংসদে বিল যাওয়ার পর সেটার সঙ্গে যদি আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যায় এবং তিনি সই করেন। সেখান থেকে সংসদে আসার পর বিল আকারে এটি সংসদে উত্থাপন করা হয়। এ সময় বিরোধী পক্ষের কারও যদি বিলটির বিষয়ে কোনো আপত্তি থাকে ওই সময় তারা তা দিতে পারেন। আপত্তি গ্রহণযোগ্য হলে সেটা গ্রহণ করা হয়। আবার বিলটি ফেরত পাঠানো হয়। আর আপত্তি গ্রহণযোগ্য না হলে সেটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যায়। ওই কমিটিতে দীর্ঘদিন আলাপ-আলোচনা হয়। এই আলোচনার সময় সংশ্লিষ্ট কোনো মন্ত্রণালয়ের কোনো বিভাগের প্রতিনিধির প্রয়োজন হলে তখন তাদের ডেকেও আলোচনা করা হয়। সবশেষে ওই কমিটি আবার বিলটি সংসদে উত্থাপন করে। সংসদে উত্থাপনের পর সময় দেওয়া হয় যদি কেউ কোনো সংশোধনী দিতে চান। যারা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করবেন তারা সংসদে এর পক্ষে বক্তব্য দেবেন। এর মধ্যে দফা ওয়ারি সংশোধনী দিলে সেগুলো গ্রহণ করেই বিলটি পাস করার জন্য উত্থাপন করা হয়। তারপর পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা আইন এতগুলো ধাপ পেরিয়ে তারপর পাস করি এবং প্রতিটি আইন যখন পাস করা হয় তখন বিষয়টি নেওয়াই হয় জনগণের কোনো না কোনো স্বার্থে। আর সেই আইনটি যদি আমরা দেখি দুজন বসে নাকচ করে দেন তখন আর কিছুই করার থাকে না। তাহলে এতদিন ধরে সরকারি অফিসার থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি সবাই মিলে যে খাটা-খাটুনি করল সব কিন্তু ব্যর্থ হয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেরানীগঞ্জের যে জেলখানা করা হয়েছে সেখানে আমি নির্দেশ দিয়েছি আদালতে বিশেষ রুম করে দেওয়ার। যেন ঢাকা থেকে বসেও ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ওখানে বিচারকার্য পরিচালনা করা যেতে পারে। আসামি নিয়ে যেন টানাটানি করতে না হয় সেখানে আইনজীবীরাও থাকবেন। সেরকম ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ, এর হাত থেকে আমরা দেশকে মুক্ত করতে চাই। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী সংস্থা এতটা সক্রিয় ছিলেন, যে কারণে সমগ্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। তিনি বলেন, নববর্ষের সঙ্গে ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। এর সঙ্গে অর্থনীতির একটা সম্পর্ক আছে। পুরাতন হিসাব মিলিয়ে হালখাতা করে আবার নতুন করে হিসাব শুরু হয়। দেশে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষই নববর্ষ পালন করে।

এমপিদের ফ্ল্যাটে অন্য কেউ থাকতে পারবে না : দুুপুরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শেরেবাংলা নগরে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংসদ সদস্যদের (এমপি) আবাসনের জন্য নির্ধারিত ফ্ল্যাটে অন্য কেউ থাকতে পারবে না। ন্যাম ফ্ল্যাটে শুধু এমপি থাকবে। যারা নিজেরা না থেকে ন্যামে ফ্ল্যাট নিয়ে রেখেছেন তাদের নাম কাটা যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওখানে শুধু সংসদ সদস্যরা পরিবার নিয়ে বা নিজেরা যারা থাকবেন, কেবল তারাই থাকবেন। আমি পার্টিতে বলেছি, তারা শোনেন নাই। আজকে পাবলিকলি বললাম। বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, চিফ হুইফকে বললাম যদি ব্যবস্থা না নেন তবে তার ব্যবস্থা আমি নেব।

শেখ হাসিনা বলেন, এরপর কারও ফ্ল্যাট নষ্ট হলে এমপিদের কাছ থেকে টাকা কেটে নেব। ছাড়ব না। সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল। এই মানসিকতা যেন না থাকে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ।

সর্বশেষ খবর