রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা

কোরীয় উপদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ, শঙ্কায় চীন

প্রতিদিন ডেস্ক

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ কর্মসূচি ঘিরে নতুন করে বিশ্বযুদ্ধ বাধার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশটির এ উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঠেকাতে সম্প্রতি কোরীয় উপদ্বীপে বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস কার্ল ভিনসন ও আরও কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার মিত্রদেশ চীন শুক্রবার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে যে, অঞ্চলটিতে যে কোনো মুহূর্তে সংঘাত বেধে যেতে পারে। এ সংঘাতে কেউ জয়ী হবে না বলেও দেশটির অভিমত। তাই উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে সব পক্ষকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। এরই মাঝে    গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পারমাণবিক বোমা হামলার হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। কোরীয় উপদ্বীপে কোনো ধরনের উসকানিমূলক পদক্ষেপ না নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দিয়ে দেশটি এ কথা জানিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুংয়ের গতকাল ছিল ১০৫তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে দেশটির রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে অনুষ্ঠিত বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে আন্তমহাদেশীয় ও ডুবোজাহাজ থেকে নিক্ষেপণযোগ্য ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত চুয়ে রাইয়ং হায়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ওই সতর্কবার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের জবাব আমরা সর্বাত্মক যুদ্ধের মাধ্যমে দিতে প্রস্তুত।’ কোনো বহিঃশক্তির (যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে) পারমাণবিক হামলার শিকার হলে এর জবাবও একইভাবে দেওয়া হবে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিদ্যমান উত্তেজনার মাঝেই শোনা যাচ্ছে যে, কিম উন যে কোনো সময় নতুন করে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারেন। এর মধ্যেই দেশটির প্রতিষ্ঠাতা কিম সুংয়ের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ওই সামরিক প্রদর্শনী আয়োজনের ঘটনা ঘটল। উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেছেন। তবে কোরিয়ার সামরিক কুচকাওয়াজে প্রতি বছর প্রতিনিধি পাঠালেও এবার তা করা থেকে বিরত থেকেছে চীন। এর মাধ্যমে দেশটি যে কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতি নারাজ তারই আভাস দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করা উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের এক মাসের মাথায় দেশটি আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্র সফররত জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে নিয়ে ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের উন্নয়ন ঠেকাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকি মোকাবিলায় ট্রাম্প সম্প্রতি কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এদিকে, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট উত্তেজনায় সমূহ সংঘাতের আভাস দিয়েছে চীন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং শুক্রবার বলেন, ‘যুদ্ধ বাধলে কেউ জিতবে না। আমরা মনে করি এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সবার সতর্ক থাকা উচিত।’ উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় সেজন্য ‘কথায় বা আচরণে একে অন্যকে হুমকি দেওয়া ও চটানো থেকে বিরত থাকতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতিতে স্বভাবতই উদ্বিগ্ন চীন। তাদের এ উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ সমস্যার সমাধানে চীন এগিয়ে না এলে তার দেশ একাই ব্যবস্থা নেবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের ভাষায়, ‘চীন এ ক্ষেত্রে সহায়তার সিদ্ধান্ত নিলে তা চমৎকার হবে। না হলে আমরাই এই সমস্যার সমাধান করব।’ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে ১০ দিনের এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের আজ দক্ষিণ কোরিয়া পৌঁছার কথা। ট্রাম্প প্রশাসন শক্তি প্রয়োগ করে নয়, বরং চীনের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের দিকেই বেশি মনোযোগী বলে বার্তা সংস্থা এপি মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে। বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন।

সর্বশেষ খবর