রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
পর্যবেক্ষণ

আনন্দানুষ্ঠানে ঢাকার মেয়র

মুস্তাফা জামান আব্বাসী

আনন্দানুষ্ঠানে ঢাকার মেয়র

পয়লা বৈশাখের আনন্দানুষ্ঠানে গুলশান পার্কের বিরাট মাঠে আমি প্রধান গায়ক। সময় কম, তাই মাত্র চারটি গান গাইলাম। শেষ গানটা গাইবার আগে ডেকে নিলাম ঢাকার মেয়রপত্নী কন্যাসম নিপা-কে। একসঙ্গে একটি গান গাইলাম: ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে’। সবাই গানটির সঙ্গে কণ্ঠ মেলালেন, রবীন্দ্রনাথের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। শেষ গানটি ‘ভায়ের মায়ের এত স্নেহ, কোথায় গেলে পাবে কেহ’। সঙ্গে ডেকে নিলাম কলকাতা থেকে আগত শিল্পী ইন্দ্রানি চক্রবর্তীকে। সবাই গলা মেলালেন। মেয়র নিজেও। যে কথা বলতে এই নিবন্ধের সূত্রপাত তা হলো : মেয়র আনিসুল হকের বক্তৃতা। মাত্র বারো মিনিটে এর চেয়ে ভালো বক্তৃতা আর জীবনে শুনিনি। তিনি শোনালেন স্বপ্নের কথা। বললেন, ‘আমিও স্বপ্ন দেখেছি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করছি। ফুটপাথগুলো আপনাদের জন্য এমন করে দেব যে, পৃথিবীর লোক দেখতে আসবে। চারদিক হবে সবুজ। শুধু ফুল আর ফুল। দোকানগুলো হবে ঝকঝকে-তকতকে। মেয়েরা নির্ভয়ে বাজার-হাট করতে পারবে। গাড়িগুলো সরিয়ে দেব। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করব। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি নিচের দিকে যে শহরের অবস্থান তাকে অনেকটা উঠিয়ে নেব। আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আমি কথা রাখব। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমার এক মুহূর্ত বিশ্রাম নেই। আমার স্ত্রীও আমার সঙ্গে কাজ করছেন। আপনারা আমার সঙ্গে কাজ করুন’। সমস্ত শ্রোতামণ্ডলী অভিভূত। আমিও। মেয়র একা কী করে করবেন? যদি বাড়ির সামনে রোজ জঞ্জালগুলো ফেলি, লেকের পানি দূষিত করি? সব ঝাড়ু মেয়রের হাতে, হবে কেন? আমি ঝাড়ু হাতে নেব না কেন? আমার বাড়ির লোকেরা নেবে না কেন? এই প্রশ্ন শুধু মেয়রের নয়, আমারও। সবাই মিলে জঞ্জাল সাফ করব, একা মেয়র নয়। বাংলাদেশকে সবাই ভালোবাসি। একচেটিয়া কারও নয়। সবাইকে ভাগিয়ে দেবেন না। তা হলে নিজেরাই মারা যাবেন। বিভক্তি দেশে সর্বনাশ করবে। মাড়োয়ারিরা ওতপেতে আছে। সব ব্যবসা বাণিজ্য কেড়ে নেবে। মীরজাফররা কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতা কেড়ে নেয় কার বাপের সাধ্য? সবাই রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কে রক্ত নেবে এস? এ দেশ সবার। কেউ বাদ নেই। আমরা সবাই এক। আলাদা নই। যারা রক্তের হোলি খেলতে চায়, তাদের বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করুন। ওরা আমাদের বন্ধু নয়, ওরা আমাদের শত্রু। আমরা মুসলমান, কিন্তু হিন্দু ভালোবাসি। পৃথিবীতে একমাত্র মুসলমান যারা হিন্দুদের মন্দির গড়ে দি’। ভাঙি না। আমরা মূর্তি পূজারি নই। কিন্তু ওদের মূর্তিকে আমরা ভাঙতে দেব না। এটাই ইসলাম। এটাই শান্তির ধর্ম। পয়লা বৈশাখে বক্তৃতা করার সুযোগ পাইনি। তাই আজ একটু বক্তৃতা দিলাম। শুভ নববর্ষ। লেখক : সাহিত্য-সংগীত ব্যক্তিত্ব, [email protected]

সর্বশেষ খবর