সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে সমালোচকরাই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে সমালোচকরাই : প্রধানমন্ত্রী

আগারগাঁওয়ে গতকাল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ভবনের উদ্বোধনকালে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে অন্যায্য সমালোচনাই তাকে হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাহাত্তরে বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত তার প্রায় প্রতিটি কাজের সমালোচনা করা হয়েছে। সদ্যস্বাধীন দেশের পুনর্গঠনে যে সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল তাকে দেওয়া হয়নি। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ফেরার  পর এটা হলো না, ওটা হলো না। নানা রকম কথা, সমালোচনা, নানা বক্তৃতা, অনেক কিছু শুরু হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝে মাঝে মনে হয় এই লেখালেখি ও সমালোচনার মাধ্যমে ১৫ আগস্টের সুযোগ সৃষ্টি আর স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় আসার সোপান তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। আজকে সেই সমালোচকরা নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পারছেন, কত ভুল চিন্তা তাদের ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমার এই প্রশ্নটা মনে জাগে, স্বাধীনতার পর পর একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, লাখ লাখ মা বোনের পুনর্বাসন-চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে, তিন কোটি মানুষ গৃহহারা। তাদের খাদ্য নিরাপত্তাসহ সব কিছুর ব্যবস্থা করা কি সহজ কাজ ছিল? প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় যারা জাতির জনকের সমালোচনা করেছেন, তারা কি সেটা উপলব্ধি করেননি যে এটা একটা প্রদেশ ছিল। এই দেশে একটা টাকা রিজার্ভ মানি ছিল না। রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে শুরু করে সবই ধ্বংসপ্রাপ্ত। সেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে শূন্য হাতে বঙ্গবন্ধু কী করেননি সেই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে দেখি প্রতিটি কাজই তিনি করে দিয়ে গেছেন। আমি নিজে অবাক হয়ে যাই এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে তিনি এত কাজ করেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ পূরণ করা, কমনওয়েলথ থেকে শুরু করে জাতিসংঘের সদস্যপদ তিনি করে দিয়ে গেছেন। আমাদের ল্যান্ড বাউন্ডারি চুক্তি তিনিই করেছেন। দুপুরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘শিখা চির অম্লান’ প্রজ্বালনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ছোট ছোট শিশুরা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী জাদুঘরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। ব্যতিক্রমী স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত নয় তলা জাদুঘর ভবনটি আগারগাঁও পঙ্গু হাসপাতালের বিপরীত দিকে অবস্থিত। প্রায় দুই বিঘা জায়গাজুড়ে নির্মিত ভবনের ব্যবহার যোগ্য আয়তন ১ লাখ ৮৫ হাজার বর্গফুট। ২০১১ সালের ৪ মে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই জাদুঘরে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার করা বিভিন্ন সামগ্রী, মুক্তিযুদ্ধের দলিল ও চিঠি মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার স্মৃতিস্মারক রয়েছে। চারটি গ্যালারিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মূল্যবোধের নানা দিক। ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এতদিন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি সেগুনবাগিচার একটি ছোট্ট দোতলা বাড়িতে ছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী প্রমুখ। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি অভিনেতা আলী যাকের, স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইন, লেখক মফিদুল হক, অভিনেত্রী সারা যাকের, বিএমএ’র সাবেক মহাসচিব ডা. সারওয়ার আলী এবং আক্কু চৌধুরী অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নতুন প্রজন্ম যেন মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে না যায়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জানতে পারে, কত ত্যাগের বিনিময়ে এদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেই স্মৃতিচিহ্নগুলো তারা দেখবে, অন্তরে ধারণ করবে, নিজেদের চরিত্র গঠন করবে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিচালনা করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। এর জন্য আছে ট্রাস্ট ও ট্রাস্ট ফান্ড। এসব ফান্ডে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করছি। সেখানে ছোট পরিসরে হলেও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থাকবে। যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানতে পারে কত মহান ত্যাগের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেই স্মৃতি চিহ্নগুলো তারা দেখবে, উপলব্ধি করবে, অন্তরে ধারণ করবে, সেভাবে নিজেদের চরিত্রকে গঠন করবে এবং দেশপ্রেমে তারা উদ্বুদ্ধ হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিঃশেষ করে দিতে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করার পর ইতিহাস পাল্টে গেল, অনেকে ঘোষক হয়ে গেল, যেন বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে দিল, যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। কিন্তু জাতির জনক দীর্ঘ সংগ্রাম করে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা নিছক ক্ষমতা দখলের জন্য ছিল না বা এটি কেবল একটি পরিবারকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া ছিল না, এটা ছিল একটা চেতনাকে ধ্বংস করা, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে নস্যাৎ করা, স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিকে ধ্বংস করাই ছিল এই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য। তা সবার কাছে প্রমাণিত হলো যখন ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দুটি বোন পৈতৃক সূত্রে ৩২ নম্বরের বাড়িটি পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কিছু একটা করব যা ইতিহাস হয়ে থাকবে। বাংলাদেশে আর কোনো নেতার ছেলে মেয়ে কিন্তু সম্পত্তি দেয়নি। সবাই ভোগ দখল করেছে। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল আমরা এটা স্মৃতি জাদুঘর করব এবং আমরা স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা ?উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওয়াদা ছিল যদি ক্ষমতায় আসতে পারি, এদের বিচার আমরা করব। সে ওয়াদা আমরা রেখেছি। সেই বিচার আমরা করে যাচ্ছি। বিচারের রায়ও আমরা কার্যকর করেছি। জাতির পিতার হত্যাকারীদেরও বিচার হয়েছে।

সর্বশেষ খবর