বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

নারীদের ভোগান্তির শেষ ছিল না

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে সিটিং বাস সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নারী যাত্রীরা। বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বেসরকারি কোম্পানির বাসগুলো নারী যাত্রীদের বাসে তুলছেই না। নারী যাত্রীরা বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিটিং সার্ভিস বন্ধের অভিযান শুরু হওয়ায় বেশি লাভের আশায় বাসগুলোতে চালক ও হেলপাররা বাসে গাদাগাদি করে বেশি যাত্রী তুলছেন। কিন্তু নারীদের তারা বাসে তুলছেন না। এমনকি কয়েকটি বাস থেকে নারীদের সংরক্ষিত আসনগুলোও উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। আর কিছু বাসে নারী আসনে পুরুষ যাত্রী বসানো হচ্ছে। আশ্চর্যজনক হলেও বেশ কিছু বাসে আবার নারী ও শিশুর জন্য সংরক্ষিত আসনের স্টিকারটি পর্যন্ত তুলে ফেলা হয়েছে। এ অবস্থায় কর্মজীবী নারী, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী, গার্মেন্ট শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাজধানীতে গত তিন দিন বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী নারী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে তারা নিজেদের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেন। গতকাল মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় এনজিও কর্মী সাইমা রহমান জানান, কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য তিনি প্রায় ঘণ্টাখানেক বাসের অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কোনো বাসেই মহিলা যাত্রী নিচ্ছে না। বাসে উঠতে গেলেই ‘মহিলা সিট নাই’ বলে বাধা দিচ্ছে। এমনকি দাঁড়িয়ে যেতে চাইলেও বাসের হেলপার তাদের বাসে তুলছে না। ফলে সাইমার মতো অনেক নারীকে বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘক্ষণ গণপরিবহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। মিরপুর টেকনিক্যাল মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু বাসে নারীদের আসনেই পুরুষ যাত্রী বসানো হচ্ছে। মিরপুর ১ নম্বর থেকে প্রেস ক্লাবগামী এভারেস্ট পরিবহন ও নিউ ভিশন বাসগুলোর কোনোটিতেই নারী যাত্রীকে উঠতে দেওয়া হয়নি। উল্টো নারী ও শিশুদের জন্য সংরক্ষিত আসনে পুরুষ যাত্রীকে বসানো হচ্ছিল। এর কারণ জানতে চাইলে নিউ ভিশন পরিবহনের হেলপার বলেন, ‘নারী যাত্রী তুললে বাসে দাঁড় করাইয়া যাত্রী তুলতে পারি না। আর নারীদের দাঁড় করাইয়া নিয়াও যাওয়া যায় না। এজন্য ওস্তাদ নারী যাত্রী তুলতে নিষেধ করছে।’ এমনকি এভারেস্ট পরিবহনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলো উঠিয়ে সেখানে গাদাগাদি করে পুরুষ যাত্রী নেওয়া হয়। আর নারী ও শিশুদের জন্য সংরক্ষিত আসন লেখা স্টিকার মুছে ফেলা হয়েছে। এতে এ ধরনের মিনিবাসগুলোতে মেয়েদের জন্য এখন আর কোনো আসনই নেই।

আর নারীরা পুরুষের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠতে না পারায় গন্তব্যে পৌঁছাতে সমস্যায় পড়ছেন। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নারী যাত্রীরা। কয়েকজন যাত্রী এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, সরকার কিছুদিন আগে মহিলা আসনে পুরুষ বসলে শাস্তি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিল। অথচ এক মাস না যেতেই নারী যাত্রীরা গণপরিবহনে ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন না। তারা বলেন, সরকারি বাসগুলোতে নারী আসন থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত। এ অবস্থায় নারী যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে সরকার ও বাস মালিক কর্তৃপক্ষকে বিষয়টির দ্রুত মীমাংসা করার জন্য নারী যাত্রীরা আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর