বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
যাত্রীকল্যাণ সমিতির ব্রিফিং

মাস্তান দিয়ে যাত্রী শায়েস্তা চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিস বন্ধের পর যাত্রীরা তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দিতে চাওয়ায় অনেক স্থানেই তাদের গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনা ঘটেছে। মিরপুর রুটে অধিকাংশ বাসে মাস্তানপ্রকৃতির লোক রেখে যাত্রী শায়েস্তা চলছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তালিকার চেয়ে বাড়তি ভাড়া না দিলে অথবা ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন তুললে এই মাস্তানরা যাত্রীদের দিকে তেড়ে আসে। বিভিন্নভাবে অপমান-অপদস্থ করে। গত দুই দিনে নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যানবাহনের প্রায় ৪০ শতাংশ রাস্তায় নামানো হয়নি। বাদুড়ঝোলা এসব বাসে চলতে গিয়ে নারী, শিশু ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকেরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। অধিকাংশ বাসে মাস্তানপ্রকৃতির তিন-চার জন করে লোক রাখার দৃশ্য দেখা গেছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নগরীতে চলাচলকারী স্বাধীন এক্সপ্রেস, হিমাচল পরিবহন, শিকড় পরিবহন, কোমল মিনিবাস সার্ভিস, মেঘলা ট্রান্সপোর্ট লি., বেকার মিনিবাস সার্ভিস, শ্রাবণ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি, শ্রাবণ সুপার, গুলিস্তান-আদমজী ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি, ভূঁইয়া পরিবহন, দিশারী পরিবহন, নূর-এ-মক্কা, জাবালে নূর, অনাবিল সুপার, অছিম, পরীস্থান, অগ্রযাত্রা, রবরব, গ্যালাক্সি, তেঁতুলিয়া পরিবহন প্রভৃতি বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। শতাব্দী, আল-মক্কা, মনজিল, মালঞ্চ, বসুমতি, গাজীপুর পরিবহন, রাইদা, সময় নিয়ন্ত্রণসহ বহু গাড়িতে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া সুপ্রভাত, শুভেচ্ছা, ওয়েলকাম, তানজিল, গুলিস্তান-গাজীপুর পরিবহন লি, মেশকাত, ৭ নম্বর রুটের মিনিবাসেও সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। একদিকে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই, অন্যদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে যাত্রীসাধারণের মধ্য তীব্র ক্ষোভ ও চাপা উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। মধ্যবিত্তরা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছেন। যাত্রীকল্যাণ সমিতির অভিযোগ, কথিত সিটিং সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করা হলেও আগের মতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বহাল রয়েছে। বাসমালিকরা ইচ্ছামতো বর্ধিত ভাড়া আদায় করছেন। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অচিরেই বন্ধ করা না হলে তা বৈধতা পাবে। রাজধানীতে প্রতিদিন ২ কোটি ২০ লাখ যাত্রী গণপরিবহন ব্যবহার করেন। এখানে ৪ হাজার ২৫০ জন যাত্রীর জন্য মাত্র একটি বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। এসবের অধিকাংশই যাত্রী পরিবহনের অনুপযোগী, লক্কড়-ঝক্কড়। যানজট, অব্যবস্থাপনা, মাঝপথে যাত্রী ওঠানো-নামানোসহ নানা অভিযোগ তো রয়েছেই। অবিলম্বে এসব সমস্যার সমাধান করার দাবি জানিয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে কয়েক দফা সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে : সরকারি নির্দেশনা না মেনে বাস চলাচল বন্ধ রাখা, পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল, ভাড়া আদায় মনিটরিংয়ের জন্য রুটভিত্তিক অভিযান পরিচালনা, বাসের গায়ে গেটলক, সিটিং সার্ভিস, স্পেশাল সার্ভিস, কম স্টপেজ লেখা মুছে ফেলা, অতিরিক্ত আসন বাড়িয়ে বাসের সংখ্যা কমানো ইত্যাদি। সংবাদ সম্মেলনে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র (নিসচা) চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন। জোনায়েদ সাকি বলেন, কোন দেশ কত উন্নত তা দেশের গণপরিবহনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সরকার সিটিং সার্ভিস বন্ধে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি টেকসই না হলে বোঝা যাবে চেইন অব কমান্ড মানা হচ্ছে না। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এমন উদ্যোগ এর আগেও নেওয়া হলেও তা টেকেনি। ফলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়। মানুষ মনে করে, কয়েক দিন পরই ঠিক হবে। সরকারের প্রতি অনুরোধ, এ অভিযানের উদ্যোগ যেন অব্যাহত থাকে। সিটিং সার্ভিস বন্ধের অভিযানের নামে ‘ইঁদুর-বেড়াল খেলা’ চলছে মন্তব্য করে সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, অভিযান শুরু হলে বাসগুলো লুকিয়ে রাখা হয়, রাস্তায় নামানো হয় না। ফলে দুর্ভোগ বাড়ে যাত্রীদের। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর