বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাতের আঁধারে রাজশাহী চারুকলায় ভাস্কর্য ভাঙচুর উৎসব

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

রাতের আঁধারে রাজশাহী চারুকলায় ভাস্কর্য ভাঙচুর উৎসব

এভাবেই ওলটপালট করে ফেলে রাখা হয়েছে ভাস্কর্য —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদ চত্বরে রাখা পাঁচ শতাধিক ভাস্কর্য সোমবার দিবাগত রাতে ওলটপালট করে ফেলা হয়েছে। অনুষদের শিক্ষকরা বলছেন, ‘মস্তিষ্ক বিকৃত’ কিছু শিক্ষার্থী ক্ষোভের বশে ভাস্কর্যগুলো ওলটপালট করেছে, যা সাধারণের শিল্পমনে আঘাত দিয়েছে। দায় স্বীকার করে দুই শিক্ষার্থী বলছেন, ছাত্রদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিবাদ জানাতে ভাস্কর্যগুলো ওলটপালট করে রাখা হয়েছে। গতকাল এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ ঘটনার মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি তত্পরতার উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা হয়তো কোনোভাবে ধরা পড়ার ভয়ে ঘটনা অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘সারা দেশে জঙ্গি তত্পরতা বাড়ছে। আমরা প্রথম ধারণা করেছিলাম এর সঙ্গে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এমন কাজ করবে তা ভাবতে পারছি না। এটা প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না।’ গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চারুকলা ভবনের পেছনে পুরনো শ্রেণিকক্ষগুলোর সামনে রাখা পাঁচ শতাধিক ভাস্কর্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। সামনের রাস্তাগুলোতে ফেলে রাখা হয়েছে ভাস্কর্য। প্রাথমিকভাবে এ কাজের জন্য মৌলবাদী বা উগ্রপন্থি গোষ্ঠীকে সন্দেহ করা হয়। তবে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মৃিশল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের মাস্টার্সের দুই শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী স্বাধীন ও ইমরান হোসেন অনিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভাস্কর্য ওলটপালটের দায় স্বীকার করেন। তারা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভাগের নানা সমস্যার ব্যাপারে শিক্ষকদের জানিয়েও কোনো সমাধান না হওয়ায় প্রতিবাদ হিসেবে সোমবার দিবাগত রাতে ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী ভাস্কর্যগুলো ওলটপালট করে রেখেছে। পুরনো শ্রেণিকক্ষগুলো এবং শিক্ষকদের কক্ষের সামনেও শিল্পকর্মগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। আমাদের কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। যদি থাকত তাহলে ভাস্কর্যগুলো এভাবে শুধু শুইয়ে রাখতাম না, ভেঙে ফেলতাম।’ দাবির বিষয়ে তারা বলেন, ‘ভাস্কর্যগুলো দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিতভাবে চারুকলা ভবনের পেছনে পড়ে আছে। এ ছাড়া এগুলো সংরক্ষণে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা প্রয়োজন। পুরো পরিবেশটা নোংরা হয়ে আছে। জায়গাটা পরিষ্কার করা হয় না। শিক্ষকরাও ঠিকমতো ক্লাস নিচ্ছেন না। শিক্ষকদের একাধিকবার বলা হলেও তারা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি।’ বিষয়টি নিয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘সকালে এ ঘটনা দেখার পর জরুরি বৈঠকে বসেছিলাম। আমরা সেখান থেকে নিশ্চিত হয়েছি, বিভাগের সাত-আটজন শিক্ষার্থী এ কাজের সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাদের যদি কোনো দাবি থাকত তাহলে বিভাগে এসে জানাতে পারত। তা না করে তারা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে।’ তবে জড়িতদের নাম জানতে চাইলে অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ তা জানাতে রাজি হননি। এদিকে এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে রাবি ছাত্রলীগ।

সর্বশেষ খবর