বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
ভোট নিয়ে তিন জোট

চাওয়ার শেষ নেই ২০ দলের শরিকদের

মাহমুদ আজহার

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)। এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোস্তফা জামাল হায়দার। এখনো নিবন্ধন হয়নি দলটির। আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন জানালেন, তাদের দলে ১৩ জন সাবেক এমপি রয়েছেন। জোটবদ্ধ নির্বাচনে দলের  পক্ষ থেকে ৫০ জনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি—একাংশ), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি (একাংশ), বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ-ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পিপলস লীগ, ডেমোক্রেটিক লীগ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই ১০টি দলের।

জোটের শরিক সাম্যবাদী দল। দলটির নিবন্ধন-সংগঠন কোনোটিই নেই। এক নেতার এক দল। নেতৃত্বে কমরেড সাইদ আহমেদ। তিনি জানালেন, জোটবদ্ধ নির্বাচনে অন্তত ৭টি আসন চাইবেন বিএনপির কাছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে লড়তে চান তিনি। ডেমোক্রেটিক লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে লড়তে বিএনপির কাছে অন্তত ২টি আসন চাইবে। ময়মনসিংহ-৮ আসনে (ঈশ্বরগঞ্জ) লড়তে চান দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মণি। বাংলাদেশ লেবার পার্টিরও নিবন্ধন নেই। তবুও জোটবদ্ধভাবে ৪টি আসনে লড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এর মধ্যে পিরোজপুর-২ আসনে (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালি-জিয়ানগর) প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। শুধু এই চারটি দলই নয়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের প্রায় সব দলেরই মনোনয়ন নিয়ে দাবি-দাওয়ার শেষ নেই। জামায়াতসহ দু-একটি দল বাদে এই জোটের অধিকাংশই নামসর্বস্ব দল। কোনো কোনো দলের নিজস্ব প্যাডও নেই। সারা দেশে নেই কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই বেড়ে যায় চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে বিএনপি। যদিও পরে বিএনপি জোট ওই নির্বাচন বর্জন করে। জোটের অধিকাংশ শরিক দলের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে আগামী নির্বাচনে জোটের শরিক দলগুলো চায় অন্তত দেড় শ আসন। বাকি দেড় শ আসন বিএনপিকে ছাড় দিতে চায়। অবশ্য বিগত ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় শরিকদের সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫টি আসন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। দলের প্রভাবশালী এক নেতা জানান, আগামীতেও এর বেশি ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘বিএনপি জোট এখন সবার অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি নিয়ে মাঠে রয়েছে। ভোটে প্রার্থী দেওয়ার সময় এখনো আসেনি। সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ জোটের অন্য শরিক বাংলাদেশ ন্যাপ। সারা দেশে সাংগঠনিক বিস্তৃতি সেই অর্থে নেই। কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই। এ সংগঠনটির ৪০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জোটবদ্ধ নির্বাচন প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জোটের শরিক দল এলডিপি। এ দলে অন্তত সাতজন সাবেক মন্ত্রী রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে লড়তে ২৫-৩০ জন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, এলডিপিতে সাবেক মন্ত্রীই রয়েছেন অন্তত সাতজন। এ ছাড়া আরও অনেক তরুণ নেতৃত্ব রয়েছে যারা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। তিনি নিজেও লক্ষ্মীপুর-১ থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইবরাহিম (অব.)। তিনি জানান, ‘২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কল্যাণ পার্টির ৩৬ জন প্রার্থী ৩৬টি আসন থেকে লড়েছিলেন। সামনের নির্বাচনেও লড়তে আগ্রহী অনেকেই। এসব নেতা বিগত নয় বছর আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে আমরা সচেতন আছি। প্রস্তুতি নিচ্ছি। জোটগতভাবে নির্বাচনে গেলে সময়মতো জোটনেত্রীর কাছে প্রার্থী তালিকা দেওয়া হবে।’ ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি—একাংশ) নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। শেখ শওকত হোসেন নিলু দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় এখন তার দল নিবন্ধনবঞ্চিত। তবুও আগামী নির্বাচনে সাতজন প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে দলটি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ফরহাদ জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন তাকে জানিয়েছেন, যোগ্যদের অবশ্যই মনোনয়ন দেওয়া হবে। জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। এই দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তারা স্বতন্ত্র কিংবা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে জোটের সঙ্গে সমঝোতায় বিএনপির কাছে অন্তত ৩০টি আসন তারা চাইতে পারে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর