বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রতি শেখ হাসিনা

প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তির নীতি গ্রহণ করুন

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তির নীতি গ্রহণ করুন

ভুটানে বাংলাদেশের নিজস্ব দূতাবাস ভবনের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী এবং অটিজম আক্রান্ত লোকজনকে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে জীবনযাপনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কার্যকর নীতি এবং কর্মসূচি গ্রহণে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বাসসের

প্রধানমন্ত্রী বলেন— আসুন, আমরা এদের বহুমুখী প্রতিভাকে স্বীকৃতি প্রদানে সংকল্পবদ্ধ হই, যাদের এই অসামঞ্জস্যতার কোনো চিকিৎসা নেই তাদের মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের সুযোগ করে দিই। যাতে তারা সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারবিষয়ক তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ অতিথি হিসেবে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ভুটানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এবং সূচনা ফাউন্ডেশন, অ্যাবিলিটি ভুটান সোসাইটি (এবিএস) এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের কারিগরি সহযোগিতায় রয়্যাল ব্যাংকুয়েট হলে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স শুরু হয়েছে। এবারের কনফারেন্সের থিম হচ্ছে— ‘এএসডি ও অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যায় ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের জন্য কার্যকর ও টেকসই বহুমুখী কর্মসূচি’। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তেসারিং তোবগে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বক্তৃতা করেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক ডা. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং বিশেষ অতিথি হিসেবে সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী লিয়নপো তানদিন ওয়াংচুক সম্মেলনে স্বাগত বক্তৃতা করেন। এই সেশনের প্যারেন্ট স্পিকার ছিলেন চিম্মি লাদেন। সেন্ট্রোল অ্যান সুলেভান দেল পেরুর প্রতিষ্ঠাতা ও কার্যনির্বাহী পরিচালক ডা. ইয়োল্যান্ডা মায়া ওর্তেগা ‘দুটি পরিবারের সদস্য এবং পেশাজীবীদের সম্মিলিতভাবে কাজ সম্পাদনে অটিজম আক্রান্তরা কীভাবে স্বনির্ভর, উৎপাদনমুখী এবং সুখী হিসেবে গড়ে উঠতে পারে’ এ বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ভুটানের রানী জেটসান পেমা এবং সূচনা ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশের অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার সম্পর্কিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভুটানের ঐতিহ্যবাহী মার্চাঙ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কনফারেন্সের উদ্বোধনী পর্ব শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝুঁকির মুখে থাকা নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদান করা সব দেশের জন্যই প্রয়োজনীয় এবং সরকারগুলোর উচিত এ জন্য নীতি এবং কর্মসূচি প্রণয়ন করা। যাতে কোনো নাগরিকই যেন অবহেলার স্বীকার না হয়। তারা (অটিজম আক্রান্তরা) দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার সুযোগের দাবিদার। এটা আমাদেরই কর্তব্য তাদের জন্য জীবনের প্রতিটি স্তরে শিক্ষা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সামাজিক এবং মেডিকেল সাহায্য প্রদান করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (এএসডি) বিষয়ে অর্থনৈতিক এবং কারিগরিভাবে সীমাবদ্ধ দেশগুলোর কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং কাঠামোগত পদ্ধতি নির্ধারণের সচেতনতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন উদ্বোধন করে আমি সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি। পাশাপাশি অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারস (এএসডি) ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডারস (এনডিডিএস)-এর নিরাময়ে অনেক প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদ, গবেষক ও নীতিনির্ধারকগণের আজকের উপস্থিতি দেখে আমি আরও অনুপ্রাণিত হয়েছি। এ ধরনের ব্যাধিপ্রাপ্তরা যেখানেই থাকুক না কেন, তারা সবার ভালোবাসা ও সম্মানের মাঝে বাস করার অধিকার রাখে। ১৯৪৪ সালে এটি বিকাশগত ব্যাধি (ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারস) হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও আজও এএসডি বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহামারী সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায়, ১৬০ জনের মধ্যে ১ জন এএসডিতে আক্রান্ত।

শেখ হাসিনা বলেন, সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৮ সদস্যের অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডারস অ্যাডভাইজরি কমিটি অগ্রাধিকার নির্ধারণ, কর্মসূচি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন কৌশল উদ্ভাবন, প্রয়োজনীয় সম্পদ চিহ্নিতকরণ এবং এসব সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের নির্দেশিকা প্রদানে ন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটিকে সহায়তা করছে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক (এসএএএন) গঠন ও এর চার্টার প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি। ২০১১ সালের ২৫ জুলাই বাংলাদেশে অটিজম বিষয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা বিষয় এককভাবে এটিই এ যাবৎকালের বৃহত্তম সম্মেলন। এ সম্মেলনে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারস বিষয় ঢাকা ঘোষণা গৃহীত হয়। এ সম্মেলনের মাধ্যমেই গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ (জিএপিএইচ) আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।

তিনি বলেন, তার সরকার অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (এএসডি) এবং অবিকাশজনিত প্রতিবন্ধিতা (এনডিডি) মোকাবিলায় একটি বৈশ্বিক কৌশল প্রণয়নে ডব্লিউএইচও/এসইএআরওর সঙ্গে কাজ করছে। এ কৌশলপত্র সদস্য দেশগুলোর মধ্যে তাদের গবেষণা, কার্যক্রম ও সম্পদ বিনিময়ে উৎসাহিত করবে। এএসডি কোনো অভিশাপ নয়, এটি একটি ব্যাধি— বাংলাদেশে এই ধারণা তৈরিতে সায়মা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। অনেকেই এএসডিকে অভিশাপ মনে করত। এ ক্ষেত্রে তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ডব্লিউএইচও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য হিসেবে তাকে নিয়োগ দিয়েছে।

সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা আগামী কয়েক দিনে এএসডি সমস্যা আক্রান্ত মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে এই মৌলিক ও জটিল বিষয়ে তাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরবেন।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি শুভেচ্ছা জানান। তিনি অটিজম সচেতনতা মাসে এ সম্মেলন অনুষ্ঠানকে ‘ওয়ান্ডারফুল কোইনসিডেন্স’ হিসেবে বর্ণনা করেন। অনেক ব্যস্ততা সত্ত্বেও এ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান এবং তার নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী অটিজম সচেতনতা সৃষ্টিতে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনের বিষয়ে সমর্থন ব্যক্ত করেন।

তেসারিং তোবগে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের প্রশংসা করেন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ‘ডব্লিউএইচ ও চ্যাম্পিয়ন ফর অটিজম’ হিসেবে মনোনীত হওয়ায় সায়মা ওয়াজেদ হোসেনকে অভিনন্দন জানান।

সর্বশেষ খবর